বিশ্বের যে পরিস্থিতি প্রস্তুতি নিন, চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার
৭ অক্টোবর ২০২২, শুক্রবার
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সামনে খারাপ সময় আসতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রস্তুত থাকেন সামনে কুপি বাতি জ্বালিয়ে বা চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হতে পারে। কাঠ-খড় দিয়ে রান্না করা লাগতে পারে। গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নানা বিষয়ে কথা বলেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, দলের সম্মেলন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বৃটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বৃদ্ধি করেছে। আমি যদি ৪০ ভাগ বৃদ্ধি করি আপনারা কেমনভাবে চিল্লাবেন? আমেরিকায় কিন্তু একই অবস্থা, প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়েছে। ইউরোপেও একই অবস্থা। জলবায়ুর কথা বলে অনেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যিুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করলো এখন আবার তারাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফিরে গেছে। জার্মানির মতো দেশ কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের দিকে ফিরে গেছে।
নতুন করে সন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেটুকু পারি আমরা চালাচ্ছি। উন্নত দেশগুলোর মানুষের যে দুরবস্থা, সেখানকার মানুষ সব থেকে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের দেশেও সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন থেকে সবাই প্রস্তুত হন চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হবে। হাঁড়িতে কাঠখড় পুড়িয়ে রান্না করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাটি ও মানুষকে নিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারলে কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা খেয়ে-পরে থাকতে পারবো। মানুষকেও খাওয়াতে পারবো। এই আশ্বাস দিতে পারি। র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা (র্যাবের ওপর) তারা কতোটুকু তুলবে জানি না, তবে যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন হয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ কি? সন্ত্রাসীদের মদত দেয়া? এটাই প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ? ৪০ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই তালেবানকেই ক্ষমতা দিয়ে চলে এলো যুক্তরাষ্ট্র। ৪০ বছর তো তারা রাজত্ব করলো। তাহলে তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশেরই কিছু লোক স্থায়ীভাবে সেখানে থাকে। তারা সেখানের সিনেটরদের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। এসব তথ্য দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। যারা এসব করে তারা কিন্তু এক একটি অপকর্ম করেই দেশ ছাড়া। র্যাবের ওপর তারা যখন নিষেধাজ্ঞা দিলো, আমার প্রশ্ন হচ্ছে র্যাব সৃষ্টি করেছে কে? এটি তো যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে হয়েছে। তারাই তো র্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে। র্যাবের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, হেলিকপ্টার, আইটি সিস্টেম সবই যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া। যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, অভিযোগ জানায়, তখন তো বলা লাগে যেমন ট্রেনিং দিয়েছে তেমনই কাজ করছে। এখানে আমাদের করার কি আছে? তিনি আরও বলেন, ট্রেনিং যদি ভালো হতো তাহলে তো একটু কথা ছিল। দ্বিতীয় কথা, আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা সংস্থা র্যাব, পুলিশ যেই হোক, তারা যদি কোনো অপরাধ করে তার কিন্তু বিচার হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ইচ্ছামতো গুলি করে মারলেও বিচার হয় না। তিনি বলেন, কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গুম-খুন নিয়ে কথা বলে। গুমের হিসাব নিয়ে দেখা গেল সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলে। তারপর থেকেই তো চলছে। আমরা যখন তালিকা চাইলাম ৭৬ জনের নাম পাওয়া গেল। এরমধ্যে এমনও আছে, আরেকজনকে শায়েস্তা করতে মাকে লুকিয়ে রেখেছে। কেউ বোনকে লুকিয়ে রেখেছে।
আবার দেখা গেছে ঢাকা থেকে খুলনা চলে গেছে। তালিকায় এমনো নাম আছে, ভারতে পলাতক। এটা কেমন করে হয়? এমনও হয়েছে যে তালিকায় নাম আছে কিন্তু লুকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই বিষয়গুলো আমরা তাদের সামনে তুলে ধরেছি। এ রকম গুমের ঘটনা যখনই ঘটে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুঁজে বের করে। গুম যত বড় করে দেখানো হয়, খুঁজে পাওয়া যদি বড় করে দেখানো হতো তাহলে বাংলাদেশের বদনাম হতো না।
আমি বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত: আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দলের কাউন্সিলরদের ওপর ছেড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একজন কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলর যদি বলেন যে আমাকে চায় না আমি কোনোদিনই থাকবো না। এটা যেদিন থেকে আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, তখন থেকেই শর্তটা মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক দীর্ঘদিন হয়ে গেছে, অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। নেতৃত্ব সাধারণত কাউন্সিলররা ঠিক করেন, নির্বাচিত করেন। কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে। এখন বিদায় নেয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমার যেটা লক্ষ্য ছিল জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করে একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, বাংলাদেশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করে অগ্রগতি করে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করে দিয়ে যাওয়া, স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা কিন্তু জাতিসংঘই স্বীকৃতি দিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসেনি: প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার এটা কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট করে দিয়েছে। এর পরেও যদি কেউ নির্বাচনে না আসে সেখানে আমাদের কী করণীয়? আওয়ামী লীগ কখনই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না, আসেও নাই। আগামী নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, কোনো দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে আসার ব্যাপারে দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে। হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। তিনি বলেন, এতদিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইবো যে সবাই আসুক। গত নির্বাচনে আলাপ-আলোচনা করলাম, নির্বাচনে আসলো। নির্বাচনে এসে দেখা গেল ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০০ মনোনয়ন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল তখন সব দোষ কার? আমাদের। জনগণের কাজ করে জনগণের মন জয় করে জনগণের ভোট নিয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বের হয়নি বা ইমার্জেন্সি দিয়ে কারও ক্ষমতা দখল করে কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ভোটের মাধ্যমেই এসেছে, নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার এটা কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট করে দিয়েছে। এরপরেও যদি কেউ না আসে সেখানে আমাদের কী করণীয়? এখন হারবো বলে আসবো না বা এমন কিছু যা সবাইকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে, তবেই আসবো, এটা তো আর হয় না। যেটা আগে করতো। মিলিটারি ডিক্টেটররা এটাই করেছে।
এটা করে যাদের অভ্যাস তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে ভয় পায় এটা হলো বাস্তবতা। অগ্নি সন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদেরকে কি মানুষ ভোট দেবে? কখনো দিতে পারে না। আগুনে পোড়া ঘা তো এখনো শুকায়নি। এখনো অনেকে কষ্ট করছে। হ্যাঁ আমরা চাই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক। কার কোথায় কতোটুকু যোগ্যতা আছে ভোটে দেখা যাবে।
বিএনপি’র তো খুঁটির জোর নেই: বিদেশি দূতাবাসে বিএনপি’র দৌড়ঝাঁপ করছে এমনটা উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয় নির্বাচনটা কে করে দেবে? বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। আমরা নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গেছি। আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, বিএনপি’র তো খুঁটির জোর নেই। যদি সেটা থাকতো তা হলে তো তারা বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে যেতো না, ধরনা দিয়ে বেড়াতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ বিএনপিকে সবক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কোন মুখ নিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে।
বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা: শেখ হাসিনা বলেন, আগামী বছর বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন সবাই। এ নিয়ে সবাই আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশবাসীকে নিজ নিজ জমিতে চাষাবাদ করার জন্য আবারো অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা, আগামী বছর একটা মহাসংকটের বছর হবে। সেই জন্য আগ থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নেয়া দরকার। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার। তিনি বলেন, করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অশান্তি বিরাজ করছে। সারাবিশ্বে জ্বালানিসহ সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি। সেখানে যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে একটি কথাই শুনেছি, আগামী ২০২৩ সালে সারাবিশ্ব একটা অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। বিশেষ করে অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতিতে পড়তে পারে বিশ্ব। এসব জানার পর আমি অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মিটিং করেছি। আলাদা একটা ফান্ড প্রস্তুত করেছি। খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় নির্দেশনা দিয়েছি। এক ইঞ্চি জায়গাও যেন পতিত না থাকে সেজন্য বলেছি। অন্তত দেশের মানুষ যাতে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে। এবার আমেরিকাতেও প্রবাসী বাঙালিদের বলেছি, আপনারা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের বলুন যেন কোনো জায়গা খালি পড়ে না থাকে।
ফসল ফলাতে পারলে আমরা সবকিছু মোকাবিলা করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা কাজ শুরু করেছি। কৃষি বা খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে আমরা টিকে থাকতে পারবো। আমার দেশের লোকজন শান্তিতে থাকতে পারবে। আপৎকালীন ফান্ড রয়েছে যথাসময়ে তা ব্যবহার করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রিজার্ভ যথেষ্ট। যদি কোনো সংকট আসে তাহলে পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার মতো সক্ষমতা আছে কিনা সেটা দেখা হয়। আমাদের তা আছে। বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি ছিল না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলায় জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কিছু কিছু পত্রিকা সারা জীবনই বাংলাদেশের খারাপ কথাটা বলতে পারলেই স্বস্তি পায়। এটা আমি যুগ যুগ ধরে দেখছি। এরকম এক ধরনের মানুষ থাকে। সবসময় নেতিবাচক চিন্তা অথবা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। মানুষ যতই ভালো করুক, তাদের চোখে ভালো হওয়া যাবে না। তবে সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই, চিন্তাও করি না। জনগণের ওপর আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। দেশের অর্থনীতির জন্য সরকার স্বল্প, মধ্য ও দ্রুত মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মিয়ানমারকে চাপে রাখতে জাতিসংঘকে আহ্বান করেছি: মিয়ানমারের সামরিক শাসক কারও কথা মানতে চায় না বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু জাতিসংঘ কেন? আসিয়ান দেশগুলোও কম চেষ্টা করেনি। অন্যান্য দেশগুলোও করেছে।
মিয়ানমার সরকার সেখানে মিলিটারি রুলার, তারা তো কারও কথাই মানছে না। নির্যাতনের শিকার হয়ে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে চাইলে তাদের প্রশ্রয় না দেয়ার ইঙ্গিত করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা যেসব রোহিঙ্গাকে থাকতে দিয়েছি তাদের সমস্যা নিয়ে আমরা জর্জরিত। এর ওপর আমাদের মানুষের ওপর বোঝা কীভাবে চাপাবো? সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। আলোচনা করে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তারা যাতে এদেরকে ফেরত নিয়ে যায়। তিনি জানান, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংগঠন রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছে। তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখন যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে আমরা নাক গলাতে যাই না এবং যাবো না। অন্যদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে আমাদের মাটি কেউ ব্যবহারও করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মাদক পাচার হচ্ছে। নৌকায় ওঠে মালয়েশিয়া যাবে বলে, কিন্তু পরে সেটা সীতাকুণ্ড বা সোনাদিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে বা নৌকাডুবি হচ্ছে। নানা রকমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমরা জাতিসংঘে সমস্যাগুলো বারবার তুলে ধরছি। কিন্তু এই শরণার্থী রোহিঙ্গারা তাদের দেশে কতোটুকু ফেরত যেতে পারবে সেটা হলো বড় কথা।
পাঁচটা বছর তারা আমাদের কাঁধে বোঝা হয়ে আছে। যে বৈদেশিক সহযোগিতা আসতো, সেটাও সীমিত হয়ে আসছে। এটাও ঠিক যেহেতু আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। এই আশ্রিতদের ঠেলে দিতে পারি না। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
আমাকে নিয়ে অত লেখালেখির দরকার নেই: প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাকে নিয়ে অত লেখালেখির দরকার নাই। আমি জনগণের সেবা করতে এসেছি। আমার বাবা দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তার যে স্বপ্ন ছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা আমার একমাত্র লক্ষ্য। আর আমার নিজের তো কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। তবে দেশের মানুষের জন্য কতোটুকু করতে পারলাম, কতোটুকু দিতে পারলাম- এটাই হচ্ছে আমার সব থেকে বড় স্বপ্ন। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই। এই যে একটা ঘর (গৃহহীন-ভূমিহীনদের মাঝে বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ) দেয়ার পরে মানুষের যে হাসিটা এটাই তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।