রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পূর্ণাঙ্গ একটি অর্থবছর শেষ হলো গত জুনে। সরকারি হিসাবে, এই সময়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। অথচ ক্রয়াদেশ কমেছে, অধিকাংশ কারখানার ২০-৩০ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা অব্যবহৃত। ফলে রপ্তানির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
তৈরি পোশাকশিল্পের বেশ কিছু বড়-মাঝারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহক। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের রপ্তানি আয় প্রায় ১১ দশমিক ২০ শতাংশ কমে ৩১৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
পোশাক ও বস্ত্র খাতে চারটি কারখানা রয়েছে উর্মি গ্রুপের। গ্রুপটি গত বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি কমে হয়েছে সাড়ে ৮ কোটি ডলার। ফলে অর্থের হিসাবে প্রায় ১ কোটি ডলার বা প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি হারিয়েছে গ্রুপটি।
ইপিবির পোশাক রপ্তানির পরিসংখ্যানের সঙ্গে আমরা বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। গত অর্থবছরে আমার নিজের প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। নারায়ণগঞ্জ বিসিকে আমার প্রতিষ্ঠানের আশপাশে যতগুলো কারখানা রয়েছে, সব কটিরই রপ্তানি কমেছে।
এই যখন অবস্থা, তখন অর্থাৎ চলতি মাসের গোড়ার দিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ অথবা ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৪ শতাংশ। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে শীর্ষ ছয় খাতের মধ্যে শুধু তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।
কয়েক মাস ধরেই পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের কেউ প্রকাশ্যে, কেউবা ব্যক্তিগতভাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানির পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। তাঁদের যুক্তি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, ফলে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্য কেনা কমিয়ে দেন। তাতে কমে যায় পোশাকের বিক্রিও। আবার গত বছরের শেষ দিকে অধিকাংশ কারখানা ২০-৩০ শতাংশ কম উৎপাদন সক্ষমতায় চলছে। গ্যাস-বিদ্যুতের কারণেও উৎপাদন কম-বেশি ব্যাহত হয়েছে।
সবচেয়ে বড় দুই বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে
বিদায়ী অর্থবছরের তৈরি পোশাকের রপ্তানির প্রকৃত চিত্র বুঝতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ৭টি ব্যাংক এবং অন্তত ১০টি বড়-মাঝারি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা হয়।
ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৪-১৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হতো, গত এপ্রিলে থেকে তা ১০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।