রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের গ্রেড-বৈষম্য, ছাঁটাই ও উৎপাদনের টার্গেটের চাপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি মজুরি আন্দোলনে পোশাকশ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
এসব দাবি আদায়ে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে মিছিল করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহ–সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর সাহা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, সহপ্রচার সম্পাদক হযরত বিল্লাল শেখ প্রমুখ। সংগঠনটির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত নভেম্বরে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি আন্দোলনের পরপরই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন। গত সপ্তাহে তিনি জামিনে মুক্তি পান। সমাবেশে বাবুল হোসেন বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করায় সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন না এমন শ্রমিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের হয়রানি-নিপীড়ন না করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি করেন বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সব শ্রমিকনেতা ও সাধারণ শ্রমিকের ওপর চাপানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে জামিনে মুক্ত হওয়া সব শ্রমিককে কাজে বহাল করতে হবে। তাঁদের পাওনা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সমাবেশে তাসলিমা আখতার বলেন, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি পোশাকশ্রমিকেরা চলতি মাস থেকে পেতে শুরু করেছেন। তবে অনেক কারখানা নির্ধারিত মজুরিও দিচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা, গ্রেড ভেদে শ্রমিকদের ঠকানোর ব্যবস্থা। গ্রেড কমানোর কথা বলে মালিকেরা চতুর্থ গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়িয়েছেন, সেই সমান হারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডে বৃদ্ধি না করে ইচ্ছেমতো মজুরি দিচ্ছেন। ফলে জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ শ্রমিকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
তাসলিমা আখতার আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের জবাবে শ্রমিক গ্রেপ্তার, মামলা ও নির্যাতনে থেমে থাকছেন না মালিকেরা। শুরু হয়েছে বিভিন্ন কারখানায় টার্গেটের ভয়াবহ চাপ আর ওভারটাইম ছাড়াই বিনা মজুরিতে শ্রমিক খাটানো। মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে কাজের চাপ বাড়িয়ে অমানবিক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন শুরুর পর শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে আশুলিয়া, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাতেও ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সমাবেশে শ্রমিকনেতারা বলেন, গত নভেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে চারজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের বদলে ধামাচাপার চেষ্টা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দারিদ্র্যের কারণে এই শ্রমিকদের পরিবারের কেউ কেউ মামলা করার সুযোগ পাননি। তাই শ্রমিকনেতারা মজুরি আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
prothom alo