পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে যাচ্ছে এনসিসি

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০৫

প্রচলিত ধারা থেকে বের হতে চাচ্ছে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক। পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক ব্যাংকে রূপান্তর হতে চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক হওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। মিলেছে সবুজ সংকেত। এখন ফিজিবিলিটি রিপোর্ট বা সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। শিগগির তা জমা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

এনসিসি ব্যাংকের পাশাপাশি নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস ব্যাংক (এনআরবি) ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকও শরিয়াহভিত্তিক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি আগ্রহ প্রকাশ করলেও কোনো পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়নি। এছাড়া পূবালী ব্যাংক ও ব্যাংক অব সিলন ইসলামিক শাখা বা উপশাখা করার জন্য আবেদন করেছে।

সর্বশেষ ২০২১ সালে স্ট্যান্ডার্ড ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংক হিসেবে রূপান্তর হয়। দেশের ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংক যখন সংকটে পড়েছে, ঠিক তখন শরিয়াভিত্তিক লেনদেনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে প্রচলিত ধারার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

দেশে বর্তমানে ১০টি ইসলামি ধারার ব্যাংক আছে। শরিয়াহভিত্তিক ১০ ব্যাংক হলো—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ্, এক্সিম, শাহ্জালাল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, আইসিবি ইসলামিক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। গত সরকারের মেয়াদে শাহ্জালাল ইসলামী ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ছাড়া সব কটিতে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূতের আওতায় এসেছে। আর ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, গত সরকারের আমলে কিছু ব্যাংকে অনিয়মের ঘটনায় শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের মানুষ আবার ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই প্রচলিত ধারার যেসব ব্যাংক রয়েছে, তারা এ মার্কেটটা ধরতে চাচ্ছে। আগ্রহীদের মধ্যে যাদের মার্কেটে ইমেজ ভালো আছে, তাদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।

এনসিসি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, আমরা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক হতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেই। পাশাপাশি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের কিছু রিকোয়ারমেন্ট দেয়। রিকোয়ারমেন্টের মধ্যে একটা বড় জিনিস হলো ফিজিবিলিটি রিপোর্ট। আমরা যে ইসলামিতে রূপান্তর করতে চাই, তা টেকসই বা ফিজিবল কি না এবং সম্পদের অবস্থা জানতে চায়। সবকিছু মিলে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এই রিপোর্টের কাজ চলমান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা (রিকোয়ারমেন্ট) অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা দেব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ৪১টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। আর উইন্ডো আছে ৯১৯টি। এর মধ্যে এনসিসি ব্যাংকের শাখা দুটি ও উইন্ডো ৩২টি। পূবালী ব্যাংকের আট শাখা ও ২২টি উইন্ডো রয়েছে। সম্প্রতি পূবালী ব্যাংক ৮৭টি শাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে আটটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এনআরবি ব্যাংকের একটি শাখা এবং ২৭টি উইন্ডো রয়েছে। আর বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের দুটি শাখা আছে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী আমার দেশকে বলেন, আমরা আপাতত প্রচলিত শাখা থেকে ইসলামি শাখায় রূপান্তর করছি। কিছু শাখার জন্য আবেদনও করা হয়েছে। আমরা পুরোপুরি গ্রোথ দেখতে চাই। এখানে মানুষের অনেক আগ্রহ রয়েছে। তাই ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বিবেচনা নিচ্ছি। তবে এখনই পূর্ণাঙ্গের দিকে যাচ্ছি না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৫৪ হাজার সাত কোটি টাকা। বিনিয়োগ স্থিতি পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। ইসলামি ব্যাংকগুলোর মোট শাখা রয়েছে এক হাজার ৭৩৯টি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here