বিরোধী দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তবে এ সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে পুলিশ বলছে, সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে উসকানি ও হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হচ্ছে। আর বিরোধী দলগুলো বলছে, কোনও কারণ ছাড়াই পুলিশ কর্মসূচি করতে বাধা দিচ্ছে।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিরোধী দল দমনের উদ্দেশ্য নয়, সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে উসকানি হামলাকারীদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার অপচেষ্টা রোখাই হচ্ছে পুলিশের মূল চ্যালেঞ্জ। সভা-সমাবেশের নামে উসকানি ও হামলার ঘটনা ঘটলে হার্ডলাইনে থাকবে পুলিশ।
ডিএমপি সূত্র বলছে, যে কাউকে রাজধানীতে যেকোনও জায়গায় সভা-সমাবেশ করতে হলে আগে অনুমতি নিতে হবে। এই অনুমতি না নিয়ে অনেকে শুধু আবেদন করেই ক্ষান্ত থাকে। ডিএমপি কী সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, তার দিকে কোনও নজর রাখে না। আর এ কারণেই বিভিন্ন সময় বিপত্তি ঘটে থাকে। কোনও পুলিশ সদস্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও সভা-সমাবেশে হামলা কিংবা বন্ধ করে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। অনুমতি পেলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তারা সমাবেশ করতে পারে।
ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দল সভা-সমাবেশ করছে। এসব সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালায়। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে পুলিশ কোনও বাধা দিচ্ছে না। বরং সমাবেশ যেন ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হয়, সে ব্যাপারে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য সজাগ রয়েছে। যে দলের সমাবেশ হোক না কেন, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উসকানি কিংবা হামলার বিষয়গুলো ক্যামেরাবন্দি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে কোনও বাধা দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া আইনগতভাবে এ ধরনের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়ার অধিকার পুলিশের নেই। আইন অনুযায়ী বলা রয়েছে, কোথাও কোনও সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে, এই আইন তো আর আমরা বানাইনি, তা সংসদ সদস্যরা তৈরি করেছেন।
পুলিশ তখনই হার্ডলাইনে থাকে, যখন কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হয়। কিংবা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা নিয়ন্ত্রণে পুলিশি অ্যাকশনে যায় পুলিশ উল্লেখ করে ডিএমপি জানায়, সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিএনপির সমাবেশ শুরুর সময় পাশ দিয়ে আওয়ামী লীগের একটি শোক র্যালি যাচ্ছিল। এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের দোষারোপ করে পুলিশ বলছে, র্যালিতে অংশ নেওয়া বিএনপির কর্মীদের উসকানিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। কিন্তু সে সময় পুলিশের ওপর উপর্যুপরি হামলা চালায় বিএনপি নেতারা। তা প্রশমনে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। ছোড়া হয় টিয়ারশেল। আহত হয় পুলিশসহ নেতাকর্মীরা।
পুলিশ কারও প্রতিপক্ষ নয় উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিনা উসকানিতে পুলিশ হামলা চালালে পুলিশের কি লাভ আছে? যারা রাজনীতি করেন, তারা যদি বুঝেশুনে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচিগুলো পালন করেন, তাহলে তো কোনও সংঘাত হয় না। মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়, সম্পদহানির শঙ্কা দেখা দেয়, তখন পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন পক্ষ মাঠে আছে, কোনও পক্ষ কাউকে সহ্য করতে পারে না। এর দায় পুলিশ কেন নেবে। যখন সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়, তখন পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা যদি মনে করি সমাবেশের অনুমতি দিয়ে থাকি। আর যদি বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখি কোনও ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে স্থানান্তর করে অন্য জায়গায় করার কথা আমরা জানিয়ে দিই। যদি কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তাহলে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করায় সহায়তা করা হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সমাবেশ কিংবা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে কাউকে আমরা বাধা দিচ্ছি না। সমাবেশকেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয় আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি। পুলিশের ওপর হামলা, কোন মোমেন্টে কী ঘটেছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলা হবে। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তারা কোন দলের কর্মী বা নেতা, সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়।