পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্চিত

 

।। শামসুল আলম লিটন ।।
লণ্ডন, ১০ ডিসেম্বর : পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ট্রেজারী ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ১০ডিসেম্বর এক নির্বাহী আদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

দুসপ্তাহ আগে পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পথে দুবাই থেকে ফেরত দেওয়ার যে তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পাবলিক ডোমেইনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল আজ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে তার নিশ্চয়তা প্রকাশিত হল।

র‌্যাব’র বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ মোট ৬ কর্মকর্তাকে এই নির্বাহী আদেশের আওতায় আনা হয়েছে, যাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, তাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ তাদের পরিবার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর উপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে মোট ১৫ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে যার মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশের। ইতিমধ্যে একজনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র সরকার কার্যকরও করেছে। বাকি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকারের উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলো বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন । এছাড়া এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসব ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবিধিবদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহনের সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের আইনে রয়েছে।  এদিকে এই রিপোর্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই বিশেষ তালিকাগুলো নীতিগত কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মিত্রদেশ অস্ট্রেলিয়া, জাপান , কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অনুসরণ করে থাকে।

র‌্যাব সম্পর্কে যা বলা হয়েছে রিপোর্টে-“বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার অপব্যবহার- র‌্যাব” শিরোনামে রিপোর্টে বলা হয়েছে, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কর্তৃক বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তৃত অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ” মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” নামে আইনের শাসন এবং মানবাধিকার ও বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনী ব্যর্থতার মাধ্যমে এই বাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে।
র‌্যাব হল একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স যা ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং বর্ডার গার্ডদের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এর ম্যান্ডেটে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সরকার-নির্দেশিত তদন্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার ও বেসরকারি সংস্থা অভিযোগ করেছে যে র‌্যাব এবং অন্যান্য বাংলাদেশী আইন প্রয়োগকারীরা ২০০৯ সাল থেকে ৬০০’রও বেশি গুম, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী৷ কিছু প্রতিবেদনে এই ঘটনাগুলি বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের লক্ষ্য করে সংগঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।
র‌্যাবকে বাইডেন সরকারের নির্বাহী আদেশ নাম্বার ১৩৮১৮( ১০ ডিসেম্বর ২০২১ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনের প্রথম দিনে ঘোষণা করা হলো) এর অধীনে মনোনীত করা হয়েছে।
এ নির্বাহী আদেশ অনুসারে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠান র‌্যাব’এর  যেসব কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে তারা হলেন:
০১। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, (বর্তমান মহাপরিচালক, র‌্যাব; ১৫ এপ্রিল, ২০২০ থেকে)০২। বেনজির আহমেদ, (প্রাক্তন মহাপরিচালক, র‌্যাব, জানুয়ারী ২০১৫ থেকে ১৪ এপ্রিল, ২০২০)০৩।  খান মোহাম্মদ আজাদ, (অতিরিক্ত মহাপরিচালক অপারেশনস, র‌্যাব, ১৬ মার্চ, ২০২১ থেকে) ০৪। মোস্তফা সরওয়ার, (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অপারেশনস, র‌্যাব, ২৭ জুন, ২০১৯ থেকে ১৬ মার্চ, ২০২১)০৫।  মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক -অপারেশনস, র‌্যাব, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ থেকে ২৭ জুন, ২০১৯)০৬। মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান, (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ,অপারেশন্স, র‌্যাব, এপ্রিল ২৮, ২০১৬ থেকে সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮ )
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বেনজির আহমেদের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনে জড়িত থাকার কারণে বেনজির আহমেদের উপর ওয়াই ২০২১ ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ফরেন অপারেশনস এবং রিলেটেড প্রোগ্রাম অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্টের ধারা ৭০৩১(সি) এর অধীনে ভিসা সীমাবদ্ধতা ঘোষণা করেছে।