হেনরি ই. হল, অরা জন রয়টার ও ব্রিন রামসফেল্ড
হোয়াইট হাউস আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ হানা দেওয়ার ‘সুনির্দিষ্ট সম্ভাবনা’ আছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে তিন দিক থেকে রাশিয়া লক্ষাধিক সেনা দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু রাশিয়ার সাধারণ মানুষ ইউক্রেনে তাদের দেশের এ সম্ভাব্য সামরিক অভিযান নিয়ে আদতে কী ভাবছে? এ প্রশ্ন এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়ায় যদিও বহু আগে থেকেই স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা জারি আছে, কিন্তু সেখানকার নেতারা বরাবরই দেশটির সাধারণ মানুষ কী ভাবছে না ভাবছে, সেটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে।
নতুন একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর বিষয়ে রাশিয়াবাসীকে একমত করানো প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য বেশ কঠিন হতে পারে।
রাশিয়ার নির্বাচন নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে আমাদের একটি গবেষক দল গত আগস্ট থেকে রাশিয়ার জনমত জরিপ করেছে। ওই সমীক্ষায় রাশিয়ার নাগরিকদের পশ্চিম ও ন্যাটো সম্পর্কে তাদের মনোভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। এর সঙ্গে ১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া যেসব বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেছে, সেসব নীতিকে তারা সমর্থন করে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে।
সাধারণ রাশিয়ানরা পুতিনের তৎপরতা এবং ইউক্রেনের ঘটনাগুলোকে কীভাবে দেখছে, তা বুঝতে আমাদের অন্তত চারটি তথ্য জানা দরকার।
ওই সমীক্ষা থেকে ওই চার তথ্য উঠে এসেছে। এগুলো জানা থাকলে সাধারণ রাশিয়াবাসী পুতিন এবং ইউক্রেন বিষয়ে তাঁর কার্যক্রমকে কীভাবে দেখছে তা বোঝা যাবে।
প্রথম বিষয়টি হলো, ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানো, সেখানে প্রক্সিযুদ্ধ পরিচালনা করা এবং ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ওই অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা রুশ নাগরিকদের কাছে অজনপ্রিয়। সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনের পাশে বিপুলসংখ্যক সেনা জড়ো করায় সেই অপছন্দের সূচক আরও চড়েছে। গত ডিসেম্বরে ৩ হাজার ২৪৫ জন রুশ নাগরিকের ওপর একটি জনমত জরিপ করে দেখা গেছে, তাদের মাত্র ৮ শতাংশ মনে করে রাশিয়ার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া উচিত। মাত্র ৯ শতাংশ মনে করে, ইউক্রেনের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় বিদ্রোহীদের রাশিয়ার পক্ষ থেকে অস্ত্র দেওয়া উচিত।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, ইউক্রেনে অভিযান চালাতে হলে অবশ্যই পুতিনকে এ বিষয়ে তাঁর দেশবাসীর অনুমোদন অর্জন করতে হবে। নচেৎ তাঁর জনপ্রিয়তা আরও কমে যাবে। রাশিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত মিডিয়া জোর দিয়ে বলে যাচ্ছে, মস্কোর আক্রমণ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে হলে পুতিনকে অভিযানের পক্ষে জোর প্রচারণায় নামতে হবে।
তৃতীয় বিষয়টি হলো, পশ্চিমাদের শত্রু ভাবা রাশিয়ার মানুষ পছন্দ করে না। পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু হিসেবে ধরে নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন সরকার চালাচ্ছেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে খুব কমসংখ্যক রাশিয়ানই চায় রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোকে শত্রুর চোখে দেখুক। জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়ার মাত্র ৬ শতাংশ সাধারণ মানুষ বলেছেন, পশ্চিমকে রাশিয়ার শত্রুর চোখে দেখা উচিত। গত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পশ্চিমাদের সঙ্গে তীব্র মন–কষাকষির মধ্যেও দেখা গেছে, ৪৪ থেকে ৪৬ শতাংশ রুশ নাগরিক পশ্চিমাদের মিত্র হিসেবে দেখতে চায়। ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে চায়।
চতুর্থ বিষয় হলো, রাশিয়ার বেশির ভাগ মানুষ একদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান এবং পশ্চিমাদের শত্রু মনে করাকে সমর্থন করে না, অন্যদিকে তারা ন্যাটোর তৎপরতা প্রতিহত করাকেও জরুরি মনে করে। পুতিন তাঁর নিজের দেশের মানুষের কাছে এটি প্রতিষ্ঠিত করতে চান যে উদ্ভূত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির জন্য ন্যাটো দায়ী। তাঁর এ ভাষ্যকে রুশ নাগরিকেরা সমর্থনও করেন।
আমাদের চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়ার প্রতি চারজন নাগরিকের মধ্যে তিনজনই মনে করেন, পুতিন যদি প্রতিরোধ না করেন, তাহলে ন্যাটো রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা করবে। বহু বছর ধরে চালানো একাধিক জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়ার মানুষ ন্যাটোকে হুমকি মনে করে, আবার একই সঙ্গে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চায়। এ অবস্থায় ন্যাটো নিয়ে পুতিন পশ্চিমাদের সঙ্গে সংলাপে বসুন—সেটিই তারা চায়। কিন্তু সমস্যা হলো, পুতিন তাদের সেই চাওয়া থেকে এখন অনেকটাই দূরে।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
- হেনরি ই. হল জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদির অধ্যাপক,
- অরা জন রয়টার ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-মিলওয়াউকির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং
- ব্রিন রামসফেল্ড কর্নেল ইউনিভার্সিটির সরকার বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক