পাহারাদার যখন মালিক

Daily Nayadiganta


‘সরকারি টাকায় নাস্তা করে বিপাকে’ এই শিরোনামে একটি ‘বিচিত্র’ সংবাদ দেখা গেল দেশের একটি পত্রিকায়। এটি এমন একটি সংবাদ যে ওই পত্রিকা এটিকে কেবল অড ক্যাটাগরিতে পাঠকদের জন্য নির্বাচিত করেছে। গণমাধ্যমে এ ধরনের অনেক খবর দেখা যায় যেগুলো আদৌ খবর হওয়ার কোনো কারণ থাকে না; কিন্তু চরিত্রের দিক দিয়ে অদ্ভুত হওয়ায় পাঠকদের আকৃষ্ট করতে এগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপে। খুব সাধারণ কোনো ব্যক্তিও আজব কোনো ঘটনার কারণে এসে যান একেবারে প্রথম পাতায়। তবে বাংলাদেশের পত্রিকায় ছাপা হওয়া খবরটি সুদুর ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার সংক্রান্ত।

অন্য একটি খবর ঢাকার পত্রিকায় পাওয়া গেল। এটির মধ্যে কিছুটা অস্বাভাবিকতা থাকলেও মূলত রাজনৈতিক উপাদানের কারণে সেটি ‘খবর’ হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত বর্তমান স্বাধীন বেলারুস সরকার কিভাবে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে আস্ত একটি বিমান ছিনতাই করল এ খবর থেকে তা জানা যাচ্ছে। কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রীয় শক্তির পুরোটা ব্যবহারের এমন মন্দ নজির এখন পৃথিবীতে বহু। অথচ এ ধরনের শক্তি ব্যবহার করার কথা শুধু জনকল্যাণের বৃহত্তর স্বার্থের জন্যই।

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণকে সার্বভৌম করা হয়েছে। অর্থাৎ, দেশের জনসাধারণ সব কর্তৃত্বের মালিক। তাদের পক্ষ থেকে একদল ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে এ সার্বভৌম শক্তির ব্যবহার করার কথা। মানুষের সম্মিলিত চাওয়া-পাওয়া এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই জনগণের পক্ষ থেকে ‘সেবক’ নির্বাচিত করা হয়। তারা জনগণের ‘সার্ভেন্ট’।

রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জনগণের কথায় চলবেন। জনগণ যদি পছন্দ না করেন তাহলে তারা যেকোনো সময় তাদের কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন করতে পারবেন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এই নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বাস্তবে এর চর্চাটা কেমন তা বোঝার জন্য ফিনল্যান্ড ও বেলারুসের এই দুটি খবর পর্যালোচনা করে দেখতে পারি আমরা।

“দুটো খবর জনগণের নামে পরিচালিত শাসনের পরস্পর বিপরীত চিত্র আমাদের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরেছে।
এক দিকে রয়েছে রাজার প্রজা শাসন; অন্য দিকে জনগণের সেবক। আজকালকার রাজারা জনগণের সার্বভৌম শক্তিকে হাইজ্যাক করেছেন। প্রকৃতপক্ষে শাসকরা নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এটিকে তারা কায়দা
করে ব্যবহার করছেন জনগণের বিরুদ্ধেই”

ফিনল্যান্ডের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা খবর দেয়, দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনের পরিবার সকালের নাস্তার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে মাসে ৩৬৫ ডলার খরচ করছে। এরপর সে দেশের বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের প্রাতরাশের জন্য এমন অর্থ ব্যয় দেশটির আইন অনুযায়ী বৈধ নয় বলে স্মরণ করিয়ে দেয়। দেশটির পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা দেখতে চান, নাস্তার নামে জনগণের করের টাকা অবৈধভাবে ভর্তুকি নেয়া হচ্ছে কি না। অন্য দিকে এক টুইট বার্তায় মারিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ সুবিধা চাইনি, এমন সুবিধা নেয়ার সিদ্ধান্ত আমি নিইনি।

আইন ভঙ্গ করে যে পরিমাণ অর্থ নাস্তার জন্য খরচ করা হচ্ছে, টাকার অঙ্কে সেটা ৩০ হাজার। শুধু কোনো একজন ব্যক্তির জন্য নয়, প্রধানমন্ত্রীর পুরো পরিবারের জন্য। এরপরেও এমন খবর দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ট্যাবলয়েডটির ওপর ক্ষেপে যাননি। তিনি বরং পিছু হটেছেন। জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে তিনি জানতেন না। উত্তর ইউরোপের এ দেশটি বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৫০ হাজার ডলার। টাকার অঙ্কে ৪০ লাখ। দেশটির মাত্র একজন ব্যক্তিই আয় করেন গড়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে মাসে নাস্তা বাবদ ৩০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচ করে ফেলার অপরাধকে খাটো করে দেখা হয়নি।

আইনের শাসন বা জনগণের ইচ্ছার মূল্যটা আমরা এ ঘটনা থেকে বুঝতে পারব। ট্যাবলয়েড পত্রিকাটি যে খবর দিয়েছে সেটা জনস্বার্থে। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এ দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশে পত্রিকাটিকে একবারও ভাবতে হয়নি। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী চুপ থেকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন, তার কোনো উপায় নেই। রাষ্ট্রের নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী নিজের কর্তব্য পালনে দ্বিধাগ্রস্ত নয়। অভিযোগ উত্থাপনের সাথে সাথে দেশটির গোয়েন্দা পুলিশ সেটা তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের পক্ষ থেকে শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে, প্রধানমন্ত্রী থেকে পুলিশ পর্যন্ত কারো মধ্যে কোনো জড়তা নেই।

পুলিশকে এ তদন্ত পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। অর্থ্যাৎ রাষ্ট্রের শক্তি পুরোটাই জনগণের পক্ষে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরোপুরি জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। তাই নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশের কনস্টেবল পর্যন্ত জনগণের সেবক বা সার্ভেন্ট।

বেলারুসের ঘটনায় দেখা যায়, রাষ্ট্রের সর্বশক্তি নিয়োজিত রয়েছে দেশটির শাসক শ্রেণীকে রক্ষায়। এই দেশটি ‘পিপলস রিপাবলিক’ নামে গঠিত হয়েছে। এবারের ঘটনাটি ছিল ব্যতিক্রমী। একজন ভিন্নমতাবলম্বীকে আটক করার জন্য দেশটির সরকার বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলেছে। রোমান প্রোতাসেভিচ নামের এই ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক সরকারের তোপের মুখে আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। তিনি বিমানে গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়ায় যাচ্ছিলেন। বিমানটি যখন বেলারুসের সীমানা অতিক্রম করছিল এই বিমানটিকে দেশটির রাজধানী মিনস্কে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়। লক্ষ্য ছিল, সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচকে যেকোনো মূল্যে আটক করা। ঠিক এ ধরনের জোর করে বিমান অবতরণকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তার মিত্ররা বিমান ছিনতাই হিসেবে অভিহিত করেছে।

বিদেশে অবস্থানরত একজন ব্যক্তিকে এভাবে আটক করার জন্য রাষ্ট্র্রকে কত বেশি শক্তি খরচ করতে হয় সেটা অনুমান করা যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯৪ থেকে আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দেশটির ‘প্রেসিডেন্ট’। ২০২০ সালে সর্বশেষ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচিত’ হয়েছেন। এই নির্বাচনের পর দেশটিতে বিপুল বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিরোধীরা ব্যাপক ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ আনেন। নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাদের অনেকে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বাকিদেরও শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে হয়। সরকারি বাহিনীর দমন পীড়নের মাধ্যমে প্রতিবাদী জনতাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়। রোমান প্রোতাসেভিচকে এভাবে আটকের কয়েক দিন পর তাকে সরকারি হেফাজতে থেকে একটি বিবৃতি দিতে দেখা গেছে।

ওই বিবৃতিতে তিনি লুকাশেঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নেন। প্রচারিত ভিডিওতে তিনি বলেছেন, গত তিন বছর ধরে রাজধানী মিনস্কে অসন্তোষ সৃষ্টিতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। এমন বিবৃতির পর এই সাংবাদিকের বাবা দমিত্রি প্রোতাসেভিচ বলেছেন, ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, আমার ছেলের নাক ভেঙে দেয়া হয়েছে। নাকের ওপর প্রচুর পাউডার দেখা গেছে। তার মুখে বামপাশ পুরোটাই পাউডার লাগানো। তাকে দিয়ে যা বলানো হয়েছে, তা তার মনের কথা নয়। অন্য দিকে তার মা নাতালিয়া প্রোতাসেভিচ তার সন্তানকে জালিম সরকারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ দিকে সরকার দাবি করছে, এ সাংবাদিক সুস্থ রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদী এ সাংবাদিকের কী হয়, আমরা জানি না।

দুটো খবর জনগণের নামে পরিচালিত শাসনের পরস্পর বিপরীত চিত্র আমাদের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরেছে। এক দিকে রয়েছে রাজার প্রজা শাসন; অন্য দিকে জনগণের সেবক। আজকালকার রাজারা জনগণের সার্বভৌম শক্তিকে হাইজ্যাক করেছেন। প্রকৃতপক্ষে শাসকরা নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এটিকে তারা কায়দা করে ব্যবহার করছেন জনগণের বিরুদ্ধেই। এমন শাসকের নজির এখন ভূরি ভূরি। এর উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। অন্য দিকে রয়েছেন জনগণের সেবক বা সার্ভেন্ট। তারা সত্যিকার অর্থে জনগণের সেবাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা নিজেদের কর্মকাণ্ডে জনগণের ইচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকেন।

ফিনল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার জন্ম ১৯৮৫ সালে। প্রায় একই সময়ে নিউজিল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন জেসিন্ডা আর্ডান। তিনিও প্রায় কাছাকাছি বয়সে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় জেসিন্ডাও অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বিশেষ করে সে দেশে এক শ্বেতাঙ্গ সাম্প্রদায়িক শ্রেষ্ঠত্ববাদীর মুসলিম গণনিধনের পর তার নেয়া ধারাবাহিক পদক্ষেপ সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এই সময়ে আমরা দেখেছি ইউরোপে আরেক নারী নেত্রী, জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মের্কেলের বিদায়। প্রজাহিতৈষী হিসেবে তার নামও ইতিহাসে লেখা থাকবে।

ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার দিন জার্মানবাসী ৬ মিনিট দাঁড়িয়ে মের্কেলকে শ্রদ্ধা জানায়। যখন তিনি ক্ষমতা ছাড়ছিলেন, তখন দেখা গেল নিজের সম্পদ বলতে বিশেষ কিছু নেই। ২০ বছর একই ফ্ল্যাটে আছেন, কোনো বাগান বাড়ি নেই, একটা পোষা কুকুর নেই। তবে ১৬ বছরে নতুন জার্মানি গড়েছেন। ধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাদ্রির মেয়ে মার্কেল। সমালোচনার পরও দেশের সীমানা খুলে দিয়ে তিনি ১০ লাখ অভিবাসী গ্রহণ করেছেন। বিদায়বেলায় সাংবাদিকরা যখন তার সাদামাটা পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি উত্তর দিয়েছেন, আমি সরকারের চাকর, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নামিনি।’ গৃহস্থালি কাজের জন্য তার অতিরিক্ত কোনো লোক ছিল না। স্বামী-স্ত্রী মিলে দু’জনে নিজেদের পারিবারিক কাজকর্ম করেছেন। বেশি পোশাক না থাকায় সেগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার ঝামেলাও ছিল না। সাংবাদিক যখন তাকে এভাবে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছিলেন, তিনি সেগুলো বাদ দিয়ে সরকারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করতে অনুরোধ করেন। আত্মপ্রচারবিমুখ মার্কেল বারবার নিজের কী ভুল হয়েছে, সে দিকে নজর দিয়েছেন। পেয়েছেন কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা।

আমরা কয়েকজন বিশিষ্ট নেত্রীর উদাহরণ দিলাম। তবে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সঙ্কট হচ্ছে, নেতৃত্বের অভাব। বিগত কয়েক দশকে ইউরোপে কোনো শক্তিশালী বা যোগ্য নেতৃত্ব দেখা যায়নি। আমেরিকার অবস্থা আরো করুণ। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের বেছে নিতে হয়েছে তারই চাচার বয়সী উগ্রপন্থী ডোনান্ড ট্রাম্পকে। তিনি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বদলে মেয়াদের পুরো সময় ধরে বিভাজন সৃষ্টি করে গেছেন। তার দৃষ্টিতে, আমেরিকায় শুধু তার ধর্ম বর্ণের লোকেরাই সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন। তিনি সাম্প্রদায়িক খুনি ও চরম জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীকে সরাসরি প্রমোট করেছেন।

ওবামা যখন ক্ষমতা ছাড়েন তখন তার বয়স ৫৫ বছর। অন্য দিকে একই ক্ষমতা গ্রহণের সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৭০। এর পরে দেশটির নেতৃত্বে আরো বেগতিক অবস্থা যাচ্ছে। জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণ করেন ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণকালীন বয়সের চেয়ে তার বয়স ৮ বছর বেশি। ২০২১ সালে তিনি যখন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করছেন, তখন তার বয়স ৭৮ বছর। সচরাচর এই বয়সে মানুষ পুরোপুরি অবসর যাপন করে থাকেন। সাধারণত বয়স ৬০ পেরোলে মানুষ দায়দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এর কারণ হচ্ছে একজন ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র্রে ৬০ বছরের আগে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তার কার্যক্রমের ওপর মানুষ তখন আস্থা রাখেন। তার বুদ্ধি-বিবেক সঠিকভাবে কাজ করে। এরপর তারা সরে গিয়ে জুনিয়র, কর্মক্ষম মানুষদের যায়গা করে দেন। যাতে সুস্থ মন মস্তিষ্কে তারা মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন।

আমেরিকার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। ফলে দেশটির ভেতর থেকে সৃষ্ট ভাঙন আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। ট্রাম্প তার উন্নাসিকতা দিয়ে জাতিকে যে খাদের কিনারায় এনে দিয়েছেন বাইডেন তা থেকে দেশটিকে উদ্ধার করতে পারবেন বলে কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই নেতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদী নীতিকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। চীনের সাথে বিশ্ব ক্ষমতার যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তিনি তাতে আটকা পড়েছেন। লক্ষণ বলছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমেরিকা ক্ষয়িষ্ণু এবং চীন রাশিয়া ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কাছে তাদের পিছু হটা শুরু হয়েছে। এমনকি বহু ছোট রাষ্ট্র আমেরিকার প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অথচ সহনশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক উদীয়মান তরুণ নেতৃত্ব দরকার হলেও আমেরিকাকে বেছে নিতে হয়েছে বিগত শতাব্দীতে বেড়ে ওঠা একজন বৃদ্ধকে।

[email protected]