পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রায় দুই সপ্তাহ পর অবশেষে সরকার গঠনে মতৈক্যে পৌঁছেছে দুই রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদ দুটির মনোনয়ন তারা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এতে পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারি; শাহবাজ শরিফ হবেন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।
মঙ্গলবার রাতে ইসলামাবাদে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এ সমঝোতার ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনে দোদুল্যমানতার আপাত অবসান হলো বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
বিলাওয়াল বলেন, রাজনীতিকরা কয়েক দিনের কঠোর পরিশ্রমে সমঝোতায় পৌঁছেছেন। জাতীয় পরিষদে যৌথভাবে পর্যাপ্ত আসন থাকায় পিপিপি ও পিএমএল-এন সরকার গঠনের সামর্থ্য রাখে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের জোট নিয়েও কথা বলেন বিলাওয়াল। তিনি বলেন, জোট গঠন করেও তারা সরকারে যাওয়ার সক্ষমতা তৈরি করতে পারেননি। তবে পিটিআই নেতারা পিএমএল-এন ও পিপিটি জোটকে ‘ম্যান্ডেট চোর’ বলে বিদ্রুপ করেছেন।
পরে শাহবাজ শরিফ তাঁর বক্তব্যে জোট সদস্য দলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। প্রয়োজনীয় সমর্থন থাকায় আসিফ আলি জারদারির রাষ্ট্রপতি হতে বাধা নেই বলেও জানান তিনি। এর আগে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণের পর ১৬ মাস ক্ষমতায় ছিল দল দুটি। তবে সে সময় দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
বিবিসি লিখেছে, মঙ্গলবার সকালেও সরকার গঠনে অনিশ্চয়তার জন্য মুসলিম লীগকে দায়ী করেছিলেন বিলাওয়াল। তিনি বলেছিলেন, মুসলিম লীগের উদাসীনতার কারণেই সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। কার্যত নওয়াজ শরিফ যে ফর্মুলায় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিলাওয়াল সেটিতে রাজি ছিলেন না।
সে সময় বিলাওয়াল বলেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে পিটিআই আত্মপ্রকাশ করেছে।
সূত্র জানায়, পিপিপি শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভায় কোনো প্রতিনিধি রাখবে না। তার বদলে প্রেসিডেন্সিসহ শীর্ষ সাংবিধানিক পদগুলো দখলে রাখবে তারা। পাঞ্জাবের মন্ত্রিসভায়ও তারা থাকবেন না। তারা থাকবেন প্রেসিডেন্ট, সিনেট চেয়ারম্যান, পাঞ্জাবের গভর্নর, খাইবার পাখতুনখোয়ার গভর্নর, বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার পদে। অন্যদিকে পিএম-এল-এন থাকবে প্রধানমন্ত্রী, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, জাতীয় পরিষদের স্পিকার, সিন্ধুর গভর্নর, বেলুচিস্তানের গভর্নর পদে।
সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন
মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত দুর্দমনীয় মিথ জনগণের কাছে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। প্রথম ফাটলটি দেখা দেয় দুই বছর আগে, যখন ক্ষমতাচ্যুত একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। কার্যত তারা পাকিস্তানের রাজনীতিতে জেনারেলদের শক্তভাবে আঁকড়ে থাকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এক বছর পর ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালান ও আগুন দেন। এবার এলো আরেক সুবৃহৎ প্রত্যাঘাত। এ মাসের শুরুতে নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর ধরপাকড়কে উপেক্ষা করে ভোটাররা তাদের ভোট দিলেন। তারা ইমরান খানকে সমর্থন জানালেন। পরে ইমরান সমর্থকরা আবারও রাস্তায় নামেন। এবার তারা নামেন নির্বাচনে কারচুপির বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জেনারেলদের মদদপুষ্ট দলগুলোকে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক এ অস্থিতিশীলতা ইতোমধ্যে সংকটে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার– পারমাণবিক অস্ত্রধারী ২৪ কোটি মানুষের দেশটির দীর্ঘদিনের সম্মানিত ও অবিসংবাদিত সামরিক বাহিনী সংকটের মধ্যে আছে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে আওয়াজ শোনা যায়, যেটা আগে করা হতো প্রচ্ছন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে।
সমকাল