‘পশ্চিমবঙ্গে ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেবো না, যদি জীবন যায় জীবন দেবো’

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কেন্দ্র সরকার। এ প্রসঙ্গে এবার গর্জে উঠলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর ২৪ পরগনায় হাবড়ার সভা থেকে সিএএ ইস্যুতে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী বললেন-  “এই আইনে কোনো স্পষ্টতা নেই। পুরোপুরি ভাঁওতা। ২০১৯ সালেও করেছিল আসামে সিএএ-এনআরসি। ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ গিয়েছিল। তার মধ্যে ১৩ লাখ হিন্দু বাঙালি। বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছিল। এখন যাদের দরখাস্ত করতে বলা হয়েছে তারা যেই দরখাস্ত করবেন তারা নাগরিক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। তাহলে আপনাদের সম্পত্তির কী হবে, চাকরি-বাকরির কী হবে? সবটাই বেআইনি ডিক্লেয়ার হয়ে যাবে।

এটা হলো বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা।” মমতা এদিন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বহাল তবিয়তে পশ্চিমবঙ্গে থাকুন। কেউ গায়ে হাত দিলে আমরা বুঝে নেবো।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়ে বলেন- ‘‘মনে রাখবেন সিএএ এনআরসি’র সঙ্গে কানেকটেড। আপনাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে চলে যাবে। এই দরখাস্ত করার আগে বারবার ভাববেন। হাজার বার ভাববেন।’’ শুধু তাই নয়, খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতার বার্তা- ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গে থাকতে ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেবো না। কোনো এনআরসি করতে দেবো না। কোনো বঞ্চনা-লাঞ্ছনা  করতে দেবো না। এর জন্য আমার যদি জীবন যায় আমি জীবন দেবো। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অধিকার কাড়তে দেবো না। আমি সব রাজ্যকে বলবো আপনারা তৈরি হন।’’ মমতা আরও একবার বিজেপিকে মনে করিয়ে দেন- ‘ইউনাইটেড নেশনে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশকারীরা যেন বৈধ কারণ ছাড়া রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়ে। এমনকি শরণার্থীরাও যদি পাশের জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেয় তাদেরও কিন্তু মানবিকতার খাতিরে তাদের আশ্রয় দিতে রাষ্ট্র বাধ্য থাকে।’ হাবড়ার সভা থেকে সিএএ নিয়ে মতুয়াদের বারবার  সাবধান করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়ারা একটা বিরাট ফ্যাক্টর। 

রাজ্যে এই মুহূর্তে ১ কোটি ৮০ লাখ তফসিলি জাতির প্রায় ১৭.৪ শতাংশ মতুয়া। পশ্চিমবঙ্গের ১০টি আসন তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৪টি আসন বিজেপি জিতেছিল ২০১৯ সালে। রানাঘাট এবং বনগাঁ কেন্দ্রসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি আসনে মতুয়াদের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেবার সমর্থন আদায় করেছিল বিজেপি। তৃণমূল এবার সেই পালের হাওয়া কেড়ে নিতে চাইছে। সোমবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘চার বছর ধরে এই সিএএ আইন চালু হবে করে করেও করা হয়নি। ঠিক নির্বাচনের আগেই এই আইন চালু মানে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আইনটা আমি আগে দেখবো তারপর আমি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো’। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বক্তব্য, ভোটের আগে এটা বিজেপি’র রাজনৈতিক চাল।

manabzamin