পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা বিনিময় জাপা নিষিদ্ধে নতুন সমীকরণ

logo

নিজস্ব প্রতিবেদক
মুদ্রিত সংস্করণ
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপি (বাঁয়ে); জামায়াতে ইসলামী (ডানে), এনসিপি (নিচে) প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপি (বাঁয়ে); জামায়াতে ইসলামী (ডানে), এনসিপি (নিচে) প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ |নয়া দিগন্ত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল রোববার বিকেল ও সন্ধ্যায় পৃথক তিন দফায় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকগুলো হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’তে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, বর্তমান রাজনৈতিক উত্তাপ ও ‘জুলাই সনদ’এর বাস্তবায়ন অবস্থা।

জাতীয় নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, আগামী বছরের প্রথমার্ধে অবশ্যই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন হবে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে।

গতকাল রোববার বিকালে ও রাতে যুমনায় অনুষ্ঠিত বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতৃবৃন্দের সাথে পৃথক পৃৃথক বৈঠকে তিনি এ কথা জানান বলে প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান।

গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচনের বিকল্প নিয়ে কোনো কিছু ভাবে তা হবে এই জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক।

শফিকুল আলম বলেন, আজকের বৈঠকে মাঝামাঝি সময়ে কনসেনসাস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার দেখা করেছেন। অধ্যাপক আলী রিয়াজ জুলাই সনদের বিষয়ে কী কী অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন। এর পাশাপাশি জুলাই সনদ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী মতামত দিয়েছেন সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

গতকালের বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ, অধ্যাপক অসিফ নজরুল, অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন বলে প্রেস সচিব বলেন।

মিটিংয়ে আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব জানান, সেপ্টেম্বর মাসে শেষ দিয়ে দুর্গপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এই পূজাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন দেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে সজাগ থাকা এবং তাদের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

জাতীয় পার্টি নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে জাতীয় পার্টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে একেক দল একেক মতামত দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা তাদের সব বক্তব্য শুধু শুনেছেন।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচন ঘিরে নীল নকশা দেখতে পেয়েছেন- এ প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, তারা তাদের বক্তব্য এখানে (সাংবাদিকদের) বলেছেন। এক্ষেত্রে এখানে যোগ করার কিছু নেই।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলার অবনতি কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এই প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাদের বলেছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। তাই আগামী নির্বাচন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এই আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশে ইতিহাসে অন্যতম ভালো নির্বাচন।

কী আলোচনা হলো

বিএনপি : প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। প্রধান উপদেষ্টা এটি আবারো তাদের নিশ্চিত করে জানিয়েছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেটি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা বলেছি, এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক। এই ঘটনার গভীরভাবে তদন্ত হওয়া দরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করতে। তবে এর কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন শিডিউল অনুযায়ীই হবে। প্রধান উপদেষ্টাও এটি আমাদের স্পষ্ট করে বলেছেন।

লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সম্পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে একটি বড় দলের প্রধানের সাথে দেশের স্বার্থে বৈঠক করার। সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। দেশবাসী নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়েছে।

বৈঠকে জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান মির্জা ফখরুল।

সমসাময়িক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকের অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের সাথে এ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই বৈঠকে অংশ নেয় বিএনপির আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রবেশ করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

জামায়াত : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টি কাজ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, জাতীয় পার্টির ব্যাপারেও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ডা: তাহের আরো বলেন, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপরে যেভাবে হামলা হয়েছে তা ন্যক্কারজনক, দুঃখজনক বললেও পুরোপুরি তা বোঝানো যাবে না। নুরের ওপরে হামলা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর সাথে যারা জড়িত বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এর আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক করতে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রবেশ করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল। দলটির নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন, দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ড. হামিদুর রহমান আযাদ (সাবেক এমপি)। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা: তাহের বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য করণীয় এবং বানচালের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন সংস্কার, বিচার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি বলেন, দেশ একটি নীলনকশার নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সরকার লন্ডনে একটি দলের সাথে বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিল, যা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণœ হয়েছে এবং একটি দলকে সুবিধা দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে দ্বিমত নেই, দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তবে নির্বাচনের কার্যকারিতার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের চাপে তারিখ ঘোষণা করে থাকতে পারেন বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে একটা চাপ আছে। সরকারের উচিত ছিল জুলাই সনদের ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়ার পর নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং তারিখ ঘোষণা করা।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক করা ৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ শুধু উচ্চকক্ষে চায়, জামায়াতসহ অনেকে উভয়কক্ষে পিআর চায়। কেন্দ্র দখল ঠেকাতে এই নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচন জরুরি। মেজরিটিকে অবজ্ঞা করে কারো চাপে নির্বাচনে গেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের জন্য নির্বাচনে যাওয়া সঙ্কুচিত হয়ে যাবে।

অনেকগুলো বিষয়ে সব দল ঐকমত্য পোষণ করলেও দু’য়েকটি দল কোনো কোনো ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে জানিয়ে ডা: তাহের বলেন, আনফরচুনেটলি অল্প সংখ্যক দল আমাদের ঐকমত্য পোষণের ইস্যুর বাস্তবায়নে কিছুটা বাধার সৃষ্টি করছে। তারা বলছেন, আগামী নির্বাচিত সরকার এসে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। আগামী নির্বাচিত সরকার যদি বাস্তবায়ন করে তবে এখানে আমরা ঐকমত্য করলাম কেন?’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।

দুয়েকটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আইনি ভিত্তির দাবি জানিয়েছে জামায়াত। জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। বাস্তবায়ন না হলে জুলাই শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।

জুলাই সনদ নিয়ে একটি দলই বাধা দিচ্ছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, জুলাই সনদ না করেই নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে দেয়াটা এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, একটা দল যেভাবে চেয়েছে সেভাবে হয়েছে। তারা নির্বাচন পেয়ে গেছে। বাকি সব দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে এক আছে। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ইস্যুটি বিঘিœত হয়েছে। জুলাই সনদ, পিআর নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। তারা গণভোটে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের উচিত স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা উচিত।

তাহের বলেন, এখন যে সময় আছে, সরকার যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব। পরিস্থিতির যদি উন্নতি ঘটে, তাহলে একটা নির্বাচন হওয়া সম্ভব।

এনসিপি : সন্ধ্যায় এনসিপির সাথে বৈঠকে দলটি গত তিনটি নির্বাচনে ‘প্রভাব খাটানোয় জড়িতদের’ বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ও নির্বাচনপূর্ব প্রশাসনিক-আইনি সংস্কারের দাবি তোলে। এনসিপি প্রতিনিধিদলে ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম আদিব, ডা: তাসনিম জারা ও আব্দুল হান্নান মাসুদ।

নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়ে সরকারকে আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অবৈধ নির্বাচনে বৈধতা দিতে জাতীয় পার্টি অংশ নিয়েছে। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পোস্টারে দলটির বর্তমান দুই ভাগের মহাসচিবের প্রার্থী পরিচিতি হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী লেখা ছিল। তার মানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। রাষ্ট্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও দলটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে জাতীয় পার্টি। এখন আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে জাতীয় পার্টি কাজ করছে। গতকাল রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকারে কাছে সুস্পষ্টভাবে দাবি জানিয়েছি সরকার গুম কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করে। এ ছাড়া জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামীতে যেন গণপরিষদের নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এ গণপরিষদ নতুন সংবিধান প্রণোয়ন করবে।

তাৎপর্য বিশ্লেষণ

নির্বাচনী রোডম্যাপের ‘স্টেকহোল্ডার সাইনালিং : বড় তিন ভিন্ন ধারার দলের সাথে একই দিনে বৈঠক করে অন্তর্বর্তী সরকার ইঙ্গিত দিলো যে, ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর নির্বাচনী সময়সীমা ধরে ‘আলোচনা-সমঝোতা নির্বাচন’ ফ্রেমওয়ার্ক সামনে রাখছে। গত ৫ আগস্টের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পরবর্তী এক মাসে এটি সবচেয়ে দৃশ্যমান রাজনৈতিক কূটনীতি।

জাপা-ইস্যুতে নতুন মেরুকরণ

জামায়াতের পক্ষ থেকে জাপা নিষিদ্ধের সম্ভাবনাকে সমর্থনের সুর এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের “আইনি ভিত্তি খতিয়ে দেখার” মন্তব্য দু’টিই জাপাকে ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। জাপা ‘বিকল্প বিরোধী দল’ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল, সেটি আইন ও রাজনীতির দ্বৈত অক্ষেই তীব্র হবে। এতে বিএনপি-এনসিপির সামনে কৌশলগত সিদ্ধান্ত— হবে জাপাবিহীন ব্যালট কাঠামোয় তারা কিভাবে আসন-ব্যবস্থা/মৈত্রী রাজনৈতিক সমীকরণ কল্পনা করবে- এ প্রশ্ন তীব্র হবে।

ইসলামপন্থী ব্লকের ‘মেইনস্ট্রিমিং’ বনাম নিয়ন্ত্রণ : এপি নিউজ ও দি টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়- জামায়াতকে আলাপ-টেবিলে রাখা একদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার সঙ্কেত; অন্য দিকে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক মহলের ‘রে ডিকালাইজেশন-ঝুঁকি’ সংশ্লিষ্ট নজরদারির প্রেক্ষাপটে সরকারের সক্ষমতার পরীক্ষা। গত এক বছরে দৃশ্যমান অস্থিরতা, মানবাধিকার উদ্বেগ ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান নিয়ে যে আন্তর্জাতিক বর্ণনা রয়েছে, সেটির ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের এই সংলাপ চাওয়া-পাওয়ার জটিল বার্তা বহন করে।

‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে ঐকমত্য-সন্ধান : তিন দলই নির্বাচনপূর্ব প্রশাসনিক সংস্কার, নিরপেক্ষতা, অতীত অনিয়মের দায় নিরূপণ ইত্যাদি এজেন্ডায় বক্তব্য দিয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে সনদের রাজনৈতিক অনুবাদ নিয়ে বিতর্কই আগামী সপ্তাহগুলোর আলোচনায় কেন্দ্রে থাকবে।

ঝুঁকি : জাপা-নিষিদ্ধের মতো বড় পদক্ষেপ নিলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া, আদালতে চ্যালেঞ্জ এবং মাঠের রাজনীতিতে নতুন সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে। আবার পদক্ষেপ না নিলেও ‘দ্বৈত-মানদণ্ড’ অভিযোগ আসতে পারে, যা নির্বাচনী গ্রহণযোগ্যতাকে আঘাত করবে। এই টানাপড়েনই এখন সরকারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ম্যানেজমেন্ট-চ্যালেঞ্জ।

কেন এখন-তাৎক্ষণিক ট্রিগার : গত কয়েক দিনের উত্তাপ, জাপা বিষয়ে আইনগত মতামত এবং ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর প্রকাশ্য বিরোধ- এসব মিলিয়ে সরকার গতকাল জরুরি আলোচনায় বসেছে। প্রেক্ষাপটে নির্বাচন ঘনিয়ে আসা, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক নজরদারিও রয়েছে।

এরপর কী

আইনগত পথনকশা : জাপা-সম্পর্কিত সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হলে নির্বাচনী মাঠে জোট-গণিত পাল্টাবে। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পর আইন মন্ত্রণালয়-নির্বাচন কমিশনের সমন্বিত বিবৃতি প্রত্যাশিত। দ্বিতীয় রাউন্ড সংলাপ : পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নিবন্ধিত/নতুন দলগুলোর সাথেও বৈঠক হতে পারে, এতে ইসির সাথে যৌথ টেকনিক্যাল সেশন, নির্বাচন-নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষক-প্রটোকল আলোচনায় আসবে। সনদ-বাস্তবায়নের রোড-ম্যাপ : সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ ও ট্রানজিশনাল প্যাকেজে দলগুলোর লিখিত মতামত চাওয়া হতে পারে। যা আগামী মাসের মধ্যে খসড়া আকারে প্রকাশ পেলে অনিশ্চয়তা কিছুটা কমবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here