ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের লেখা বইতে ভুল ও বানোয়াট তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো। তিনি বলেছেন, ‘এ বইয়ে অবান্তর ও ভুল তথ্য আছে।’
আজ সোমবার এক বিবৃতিতে রনো বইটি নিয়ে তাঁর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তাঁর পক্ষ থেকে নাইমুল আলম এ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠান।
বিবৃতিতে রনো বলেন, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের লেখা একটি বই ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ আমার নজরে এসেছে। বইটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রাবতী একাডেমি। যদিও শিরোনামে মহান ঐতিহাসিক পুরুষের নাম রয়েছে, বস্তুত বইয়ের ভেতর অনেক অপ্রাসঙ্গিক, অবান্তর ও ভুল তথ্য রয়েছে।
হায়দার আকবর খান রনোর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বইটির ৭৮ পৃষ্ঠায় লেখক তাঁর ভাষায় যাঁরা “জিয়াউর রহমান ও এরশাদের পদলেহন” করেছেন, তাঁদের তালিকা দিয়েছেন, তাঁর মধ্যে আমার নামও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে যাঁদের সামান্যতম ধারণা আছে, তাঁরা জানেন, এটা কত বড় মিথ্যা ও বানোয়াট। বাষট্টি সাল থেকে ষাটের দশকজুড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ যে আন্দোলন করে এসেছে এবং গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, আমি তার একজন সংগঠক ছিলাম, তা কোনো অজানা বিষয় নয়।’ রনো আরও বলেন, ‘আমি ষাটের দশকে অনেকবার কারারুদ্ধ হয়েছি। প্রথমবার ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একই সেলে (২৬ সেলে) থাকার বিরল সুযোগ হয়েছিল। এসব খবর হয়তো মোমেন সাহেবের জানা না-ও থাকতে পারে। কারণ, তিনি তখন আইয়ুব খানের ছাত্রসংগঠন এনএসএফ করতেন। পরে আমি মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছি, সেটাও অজানা বিষয় নয়। বর্তমান সরকার প্রণীত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আমার নামটি আছে। কিন্তু জনাব মোমেন মুক্তিযুদ্ধ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেছিলেন।’
রনো বলেন, ‘আমি যে জিয়া সরকার ও এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, সে জন্য বারবার হুলিয়া হয়েছে এবং আমার বাসায় যে মিলিটারি পুলিশ কতবার রেইড করেছে, তা আমার পক্ষে হিসাব করে বলা কঠিন। জনাব মোমেন এসব কথা জানেন না। কারণ, তিনি তখন ছিলেন রাজনীতির বাইরে সরকারের একজন মধ্যস্তরের কর্মচারী। তাঁর জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই, কাজী জাফর আহমেদ জিয়ার মন্ত্রিসভায় গেলে আমি ও রাশেদ খান মেনন তাঁর বিরোধিতা করি এবং সে কারণে আমাদের তখনকার দল ইউপিপি ভেঙে যায়। মেনন ও আমি জিয়ার “হ্যাঁ-না” ভোটের তীব্র বিরোধিতা করেছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, মোমেন সাহেব এ বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠায় জিয়াউর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।’
রনো তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ১৫ দলের যে যৌথ বিবৃতি দিয়ে, যার প্রথম স্বাক্ষরটি ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, সেই যুক্ত বিবৃতিতে আমার স্বাক্ষরও ছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে আমার সক্রিয় ভূমিকা তখনকার কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা বর্তমানের কোনো সৎ ঐতিহাসিকের অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু সেটা জানেন না বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমার সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা শুধু ভুলই নয়, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বটে। আমি তাঁর এ মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান রাখছি।’