বাংলাদেশে পদ্মা সেতুতে ছবি তোলা নিয়ে নতুন এক বিতর্ক শুরু হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারসহ পদ্মা সেতুতে একটি ছবি তোলেন যেটা তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ ফেসবুকে পোস্ট করেন।
কিন্তু সেতুতে গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা যেহেতু নিষেধ, তাই অনেকেই প্রশ্ন করছেন, জনসাধারণের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ যে নিয়ম তৈরি করেছে, প্রধানমন্ত্রী কি সেই বিধি-নিষেধের আওতায় পড়েন না?
সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার প্রধান কিছু অধিকার পেয়ে থাকেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তিনি সেতু পার হয়েছেন।
তবে সমালোচকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল নিয়ম মেনে উদাহরণ সৃষ্টি করা।
সেতুতে ছবি তোলা নিষিদ্ধ
বাংলাদেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ২৩শে জুন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, পদ্মা সেতুতে যানবাহন দাঁড় করানো, সেতুর ওপর হাঁটাচলা করা বা ছবি তোলা যাবে না।
যেদিন পদ্মা সেতু সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়, সেদিন অনেকে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি-ভিডিও করলে বিশৃঙ্খলার তৈরি হয়।
ফলে সেতু কর্তৃপক্ষ পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই নিয়মকানুনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এরপর থেকে সেতুর ওপর যাতে কেউ দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও টহল দিতে শুরু করে।
সেতুর ওপর হাঁটাচলা করার কারণে ২৭শে জুন কয়েকজনকে জরিমানাও করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর সপরিবারে তোলা ছবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ছবিটি কখন-কীভাবে তোলা হয়েছে?
সেতুর মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন সোমবার ঢাকা থেকে সকাল ৮টায় রওনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় দুই প্রান্তে জনসাধারণের জন্য সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহরে ২৮টা গাড়ী ছিল।
তিনি সরকারি এবং দলীয় কাজের জন্য টুঙ্গিপাড়ায় যান। তার সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ।
প্রধানমন্ত্রী ৮:৫০ মিনিটে সেতু পার হন। এর মাঝে মিনিট পাঁচেকের জন্য তিনি সেতুর উপর গাড়ী থেকে নামেন।
সে সময় তারা সেখানে ছবি তোলেন এবং সজীব ওয়াজেদ তাঁর ফেসবুক পাতায় ছবিটা পোস্ট করেন।
এর পর থেকেই এটা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা বিতর্ক হচ্ছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ কি বলছে?
বাংলাদেশের সেতু কর্তৃপক্ষ – যারা পদ্মা সেতুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন, সেই কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অধিকাংশ কর্মকর্তা কোন মন্তব্য করতে চাননি।
তবে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে কিছু অধিকার পেয়ে থাকেন। সেই কারণে তিনি সেখানে দাঁড়াতে পারেন।
এছাড়া কোন প্রকল্প পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি যেকোনো সময় সেখানে যেতে পারেন।
এই কর্মকর্তারা আরো বলছেন, গাড়ী থামানো বা ছবি তোলার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছিল কারণ এতে করে সেতুর উপর একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন গেছেন, তখন সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই সেখানে গেছেন।
তাই এতে করে কোন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সুযোগ নেই।
মানুষের কাছে ভুল বার্তা
তবে নাম প্রকাশ না করতে চেয়ে সরকারের একজন সমালোচক বলছেন “তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যেহেতু সরকার প্রধান তাই কোন নিয়ম চালু করে তাকেই প্রথমে সেটা মেনে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে, যাতে করে অন্যরা অনুসরণ করেন।
”কিন্তু তিনি যদি নিজেই নিয়ম মেনে না চলেন তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে, আর এসব নিয়ম-কানুনের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে”।
আরো একজন বলছেন, “যেহেতু সরকারের এই নির্দেশনা সবার জন্য প্রযোজ্য, তখন এই ধরণের কাজ করাটা নিয়ম ভঙ্গের মধ্যে পরে”।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক
সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ছবির কথা উল্লেখ না করলেও ইঙ্গিত করে লিখেছেন. “সাংবাদিকদের ব্রিজের উপরের ছবি নিয়ে আর কিছু বলবো না।”
আর একজন লিখেছেন “যত যাই বলেন কাজটা ঠিক হয় নাই”।