- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৭ মে ২০২২, ২১:৫৬, আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ২১:৫৮
বাংলাদেশের অনেক আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুতে পারাপারের জন্য টোল হার ঘোষণা করেছে সরকার। সেতু চালু হলেও সীমিত আকারে ফেরিও চলাচল করবে। তবে ফেরির টোলও কিছুটা বাড়বে।
বর্তমানে ফেরি পারাপারে যে টোল দিতে হয়, সেতু পার হতে তার প্রায় দেড় গুণ টোল দিতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সামনের মাসের শেষ দিকে পদ্মা সেতু চালু করা হবে। তবে শুরুতেই রেল চলাচল শুরু হবে না। সেজন্য আরো এক বছর সময় লাগবে বলে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন।
কোন গাড়িতে কতো টোল দিতে হবে?
সেতু পার হতে মোটরসাইকেলের জন্য টোল দিতে হবে ১০০ টাকা আর কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা। মাঝারি বাসের টোল দু’হাজার টাকা, বড় বাসের জন্য ২,৪০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১,৩০০ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ১,৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
ছোট ট্রাকের জন্য (৫ টন পর্যন্ত) ১,৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) ২,১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) ২,৮০০ টাকা, বড় ট্রাক (তিন এক্সেল পর্যন্ত) ৫,৫০০ টাকা ও টেইলারের জন্য ৬,০০০ টাকা টোল দিতে হবে।
পদ্মা সেতুতে টোল নির্ধারণের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে থেকে যে টোল হারের প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটাই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
যখন ওই প্রস্তাব করা হয়, তখন এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। অনেকেই ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। অনেকে যমুনা সেতুর সাথে টোলের হারের পার্থক্য তুলে ধরেন।
শরীয়তপুরের বাসিন্দা মনির হোসেন বলছেন, ‘নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। সেখানে টোলের হার কেন এতো বেশি হবে? বরাবর দেখা যায়, ব্রিজ হলে ফেরিতে যে টোল থাকে, ব্রিজেও সেটাই ঠিক করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুতে শুরুতেই এতো বেশি টোল ধরা হচ্ছে কেন?’
তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো: শামসুল হক এই টোলের হারকে অতিরিক্ত বলতে নারাজ। বরং পদ্মা সেতুর খরচ, সুবিধা বিবেচনায় তিনি টোলের হার খুব বেশি বলে মনে করেন না।
ড. হক বলছেন, ‘আপনি যদি অবকাঠামো তৈরির খরচ ধরেন, যমুনা ব্রিজ ও পদ্মা ব্রিজের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য দেখেন, সেই সাথে ফেরির তুলনায় পদ্মা ব্রিজে যাতায়াতের মাধ্যমে মানুষের চলাচলে, সময়, অর্থনৈতিক যে সুবিধা পাওয়া যাবে, তাতে আমার কাছে একে র্যাশনাল বা যৌক্তিক বলেই মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ফেরির টোলও বহু বছর ধরে একই রকম রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল সর্বশেষ ২০১১ সালে বাড়ানো হয়েছিল।
পদ্মা সেতুর বর্তমান যে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী ১৫ বছর এভাবেই আদায় করা হবে। প্রতি ১৫ বছর পরপর ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে। সেই বিচারে এটা খুব বেশি বলে তিনি মনে করেন না।
পদ্মা সেতুতে এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতির কাজ চলছে।
কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি টোল আদায়ের কাজ করবে।
শুরুতে পদ্মা সেতুতে দিনে আট হাজার গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করছে সেতু বিভাগ। আস্তে আস্তে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। ৩৫ বছর পর দিনে যানবাহনের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেতু চালু হলেও কি ফেরি চলবে?
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন জানিয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হলেও শিমুলিয়া ঘাট থেকে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল অব্যাহত থাকবে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী বলেছেন, ‘সেতু চালু হলেও সেখানে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হবে না। বিকল্প বা জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ঘাট থাকবে। সেই সাথে আমরা দু’টি ফেরি চালানোর কথা ভাবছি। খুব ভারি যেসব যানবাহন আছে, সেগুলো পদ্মা সেতুর বদলে ফেরি দিয়ে চলাচল করতে পারবে।’
বর্তমানে মাওয়া ঘাট নামে পরিচিত, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে শরীয়তপুরের সাত্তার মাতবর ঘাট অথবা মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ফেরি চলাচল করে।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের ফেরি চলাচল এখনকার মতো অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
টোল বাড়ছে ফেরির
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ফেরির টোলও বাড়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে ফেরির যে টোল হার রয়েছে, তার ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলেও ফেরির টোল আগের মতোই আছে। আমরা টোল হার বাড়ানোর একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম, সেটার অনুমোদন পাওয়া গেছে।’
‘একটি ভালো সময় দেখে আমরা নতুন টোল হার কার্যকরের ঘোষণা দেবো। বর্তমানে যেখানে যে ফেরির টোল যা রয়েছে, তা থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে।’ তিনি বলছেন।
বর্তমানে শিমুলিয়া ঘাট অথবা পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে করে পার হতে একটি কার বা জিপকে ৫০০ টাকা টোল দিতে হয়। নতুন টোল হার নির্ধারিত হলে সেখানে ৫৯০ অথবা ৬০০ টাকা হতে পারে।
বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে তৈরি ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে দেশের বাকি অংশের সংযোগ তৈরি করেছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু।
প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু তথ্য
পদ্মা সেতুতে গাড়ির লেন থাকবে একেক পাশে দুটো করে এবং একটি ব্রেকডাউন লেন। অর্থাৎ মোট ছয় লেনের ব্রিজ হচ্ছে, যদিও একে বলা হচ্ছে ফোর লেনের ব্রিজ।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার।
দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়।
সেতুর ওপরে গাড়ি চলাচল করবে, রেল চলবে নিচের অংশে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
সূত্র : বিবিসি