ব্যাংকগুলোর ডলার ধারণের সীমা নেট ওপেন পজিশন লিমিট (এনওপি) ইতিবাচক ধারায় এসেছে। গত বছরের ২০ নভেম্বর যেখানে এনওপি ৪২৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার ঋণাত্মক ছিল, তা এখন ১৯২ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার পজিটিভ। এক্ষেত্রে ৩৯টি ব্যাংকে ডলার সংরক্ষণের স্থিতি লং পজিশনে থাকলেও বাকি ২১টি ব্যাংক এখনও ঘাটতিতে রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এ তথ্য জানিয়েছেন। গত বুধবার বাফেদা-এবিবি ডলার ক্রয় ও বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রে ডলারের ৫০ পয়সা দাম কমিয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতেই এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
মুখপাত্র জানান, বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণ হয় চাহিদা ও জোগানের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য, সেবা ক্রয় ও ঋণ পরিশোধ হলো মূল চাহিদা। এ চাহিদাগুলো আমাদের সবসময় থাকে। গত কয়েক মাসে চাহিদার বিষয়গুলো মনিটর করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় পণ্য নিরুৎসাহিত করা হয়। এর ফলে চাহিদাটা কমিয়ে নির্দিষ্ট একটা পর্যায় নিয়ে এসেছি, যার কারণে চলতি হিসাব এক বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। যদিও আর্থিক হিসাবে এখনও ঘাটতি রয়েছে। আগামীতে তা সহনীয় পর্যায় চলে আসবে। কারণ স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধের চাপ অনেকটাই কমে গেছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায় পরিশোধ দাঁড়াবে মাত্র ৪৯ মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি এখন দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র খোলার হার কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা এখন যেসব ঋণপত্র খুলছেন তার বেশিরভাগই সাইট এলসি বা তাৎক্ষণিক। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ডলার সংকটের পাশাপাশি দেশের মূল্যস্ফীতি ও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র জানান, আমাদের বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার আছে। পক্ষান্তরে সংকটেও রয়েছে কিছু ব্যাংক। এসব ব্যাংকের গ্রাহক চাইলেও চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। তাই তারা বাধ্য হয়ে অন্য ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এ কারণেই কখনো কখনো অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে ডলারের বাজারে। যেহেতু আস্তে আস্তে ডলার বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে, সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করবে কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সরকার প্রয়োজনে ডলার নেয়। প্রয়োজন হলে দেশের স্বার্থে সেটা দিতেই হবে। বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, গত বুধবার প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা করে কমিয়ে আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এমন এক সময়ে ডলারের দর কমানো হলো যখন ১২১ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংকগুলো। আর খোলাবাজারে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা। মূলত ধারাবাহিকভাবে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়ানোর ফলে আরও বাড়বে এমন আশায় অনেকেই ডলার ধরে রাখছে। প্রবাসীরা যেমন ডলার আনছে না। অনেকে আবার খোলাবাজার থেকে নগদ ডলার কিনে রাখছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। তবে আগের মাসে যা ছিল ৪ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে ছিল ৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ধারাবাহিকভাবে ডলার পরিশোধের পরিমাণ কমছে। ফলে ব্যাংকের ডলার সংকট ক্রমেই কমে আসছে।
ডলার কারসাজির বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাজার তদারকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত কাজ। এটা চলতেই থাকবে। এর আগে আমরা একাধিক ব্যাংককে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় এনেছি। অনেকগুলো এক্সচেঞ্জ হাউসের লাইসেন্স বাতিল করেছি। সুতরাং আমরা সবসময় অনিয়ম তদারকি করছি। ভাবিষ্যতেও করব।
শেয়ার বিজ