নেপাল থেকে বাংলাদেশে আনা হবে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ। এ বিদ্যুৎ আমদানি হবে ভারতের ওপর দিয়ে, অর্থাৎ ভারতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুৎ কিনতে খরচ পড়বে ৮ টাকা ১৭ পয়সা।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) মাহমুদুল হোসাইন খান।
সচিব জানান, ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ আনতে ভারতকে ট্রেডিং মার্জিন হিসেবে দিতে হবে ইউনিটপ্রতি ঘণ্টায় দশমিক শূন্য ৫৯ ভারতীয় রুপি। পাঁচ বছরের জন্য এ বিদ্যুৎ কিনতে ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। সচিব জানান, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) ও বিউবো এ বিষয়ে চুক্তি করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেপাল সফরের কথা রয়েছে। বাংলাদেশে কবে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে, বিষয়টি তখন নির্ধারণ করা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসতে পারে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের মোজাফফরবাদ সাবস্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৪০ ইউএস সেন্ট। আর ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) ট্রেডিং মার্জিন পাবে দশমিক শূন্য ৫৯৫ ভারতীয় রুপি।
সূত্রগুলো জানায়, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে দরকার হবে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির। আর এর মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হবে। অন্যান্য দেশ থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির পথও খুলবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হলে দুই দিক থেকেই লাভবান হবে বাংলাদেশ। যেমন শীতের যে সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়, তখন নেপালে থাকে শুষ্ক মৌসুম। দেশটির তখন বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা থাকে। ওই সময় নেপাল বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারে।
বৈঠকের পর জানতে চাইলে বিদ্যুৎ-সচিব মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তিটি মূলত নেপালের সঙ্গে। সব খরচ মিলিয়ে বিদ্যুতের দাম পড়বে ইউনিটপ্রতি ৮ দশমিক ১৭ টাকা, যার মধ্যে ভারতের সঞ্চালন মাশুল ও অন্যান্য খরচও রয়েছে।’
এদিকে গত বছরের মে মাসে বিউবো এবং ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিদ্যুতের দাম নিয়ে সমঝোতা স্মারক হয়েছে। সে অনুযায়ী, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সঞ্চালন ও সেবা মাশুল পরিশোধ করতে হবে ভারতকে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ এলে বাংলাদেশ কী ধরনের সুবিধা পাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, এটা আনা গেলে ভবিষ্যতে আরও বেশি জলবিদ্যুৎ আসার পথ তৈরি হবে। বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে অবশ্য ২০২২ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, নেপালের এক প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট, অন্য প্রকল্প থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে এবং ভারত হয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে তা যুক্ত হবে।
নেপাল থেকে এ বিদ্যুৎ আমদানি করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বৈঠক করে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন ও আমদানি’–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এ মন্ত্রিসভা কমিটি গঠিত হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছিল, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও করতে চায় নেপাল। বাংলাদেশের শীতের মৌসুমে দেশটি বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানিবিদ্যুতে এত খরচ হওয়ার কথা নয়। আমার প্রশ্ন, ৮ টাকা ১৭ পয়সা কীভাবে নির্ধারণ হলো? ভারত কি এখানে আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের অংশীদার? বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতকে আমরা অনেক ধরনের সুবিধাই দিচ্ছি। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারত কী দিচ্ছে, তা–ও আমাদের দেখার বিষয়।’
prothom alo