- আফফান উসামা
- ১৭ জুন ২০২৩, ২০:০৭
প্রথম প্রেম, প্রথম দেখা কিংবা প্রথম স্পর্শ; সব প্রথমই দাগ কেটে যায় হৃদয়ে। ভিন্ন একটা অনুভূতি মিশে থাকে ‘প্রথম’ শব্দটাজুড়ে। আর টেস্টের মতো অভিজাত সংস্করণে প্রথমবার দেশকে নেতৃত্ব দেয়া একটু বেশিই রোমাঞ্চের। সেই সাথে একটু শঙ্কাও থাকে, থাকে ভয়; না জানি কি হয়! তবে সব দূর করে দিয়েছেন লিটন দাস, নেতৃত্বের পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫।
বেশ কিছুদিন আগে সাকিব আল হাসান একবার বলেছিলেন, ‘লিটনের মাঝে নেতৃত্বের সম্ভাবনা দেখেন।’ যে বিষয়ে বছর দুয়েক আগে দেশের ক্রিকেটের আলোচিত কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বলেছিলেন, ‘লিটন দাস নেতৃত্বে সম্ভাব্য সেরা। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তার। পরিস্থিতি খুব ভালো বোঝেন। ক্রিকেট জ্ঞানটাও বেশ সমৃদ্ধ।’ —এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাই ঠোঁট থেকে অস্ফুটেই বেরিয়ে আসে, স্বর্ণাকারেই তো স্বর্ণ চেনে!
নেতৃত্বের ফুল অবশ্য অনেক দিন আগেই ফুঁটেছে লিটনের। নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের চোটে কপাল খুলে লিটনের। ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে শেষ টি-টোয়েন্টিতে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। তবে শুরুটা ভালো হয়নি, বাংলাদেশ দল সেই ম্যাচটা হেরে যায় ৬৫ রানে।
তবে নেতৃত্বের পরীক্ষায় প্রথমবার পাসমার্ক পান গত বছরের ডিসেম্বরে। সেবার পরাক্রমশালী ভারত দল এসেছিল বাংলাদেশে। এবারো নেতৃত্ব পান নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের চোটের ফলে। সুযোগটা বেশ কাজে লাগান লিটন। ভারতকে সিরিজ হারিয়ে দেন ২-১ ব্যবধানে।
অতঃপর গত ১৪ জুন আভিজাত্যের টেস্ট ব্লেজার উঠে লিটনের গায়ে। এবারো সুযোগটা আসে সেই চোটের কারণে। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাদা পোষাকে অধিনায়কত্বের অভিষেক হয় তার। বাংলাদেশের ১২তম টেস্ট অধিনায়ক বনে যান তিনি।
সেই সাথে অনন্য আরো একটা কীর্তিতে নাম লেখান লিটন। আশরাফুল, মাশরাফী, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের পর তিনি পঞ্চম অধিনায়ক, যিনি তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন।
১৪ জুন থেকে আজ ১৭ জুন; বেলা ১২টা নাগাদ খবর হয়ে গেছে; আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতে গেছে বাংলাদেশ। নিছকই কোনো জয়, ৫৪৬ রানের বিশাল জয়; রানের হিসাবে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয় তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেরই তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়।
এই জয়ে আরো একটা রেকর্ড গড়েন লিটন। বাংলাদেশের তৃতীয় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টেই জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। তার আগে এই কীর্তি কেবল ছিল মাশরাফী ও সাকিব আল হাসানের। দুজনই অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্ট জেতেন একই সিরিজে; ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে।
লিটনের সামনে এখনো অনেক সময় বাকি আছে, বাকি অনেক পথও। সুতরাং আরো অসংখ্য রেকর্ডের মালিক হবেন, এনে দেবেন স্মরণীয় সব মুহূর্ত; এমন আশা করাই যায়- কী বলেন!?