নেতারা মুক্ত জামায়াতের কৌশল কী

পনেরো মাস কারাভোগ করে মঙ্গলবার মুক্তি পেয়েছেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এর আগে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। দুই শীর্ষ নেতাসহ জামায়াতের বেশির ভাগ নেতাই সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। বিএনপি’র সঙ্গে জোটে না থাকলেও বিগত নির্বাচনের আগে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত। দীর্ঘদিন ধরে নিবন্ধন নেই দলটির। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে দায়ের করা মামলা এরইমধ্যে উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কী করবে জামায়াত? দলটির কর্মকৌশলওবা কী হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। অনেকেই নতুন দল গঠনের কথা বলেছেন। আবার কেউ কেউ যেমন আছে তেমনভাবেই রাজনীতি করার পক্ষে মত দিচ্ছেন।

নিবন্ধন ও নির্বাচন প্রসঙ্গে দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তারা বলেন, নিবন্ধনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল উত্থাপিত করা হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছে। আবার শুনানির সুযোগ পাওয়াও যেতে পারে। আর নিবন্ধনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।

জামায়াতের এক নেতা মানবজমিনকে বলেন, নতুন দল গঠনসহ বেশ কয়েকটি অপশনকে সামনে রেখে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। সে কারণে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
তবে জামায়াত নতুন দল গঠনের বিষয়ে কোনো চিন্তা করছে না বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি মানবজমিনকে বলেন, নতুন দল করার চিন্তা নাই। আমরা কোনো কিছু গোপনে করবো না। যা করি প্রকাশ্যে করবো।
জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, নতুন দল গঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেভাবে আছে, আমরা সেভাবেই রাজনীতি করবো।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন ও রাজনীতির সঙ্গে নিবন্ধনের কোনো সম্পর্ক নাই। নতুন দল কেন করতে হবে? আমরা স্বতন্ত্র থেকেও নির্বাচন করতে পারি। অতীতেও করেছি এবং আমাদের বিপুলসংখ্যক প্রার্থী বিজয়ও হয়েছে। আর সরকার জুলুম ও অন্যায়ভাবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে।

সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ড. নুরুল ইসলাম বাবুল মানবজমিনকে বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে। অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন সবসময়ই চলবে। আর কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দিবে, সেটাই আমরা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন নেই, এজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু রাজনীতি তো করা যাবে। আমরা রাজনীতি যেভাবে করছি, সেভাবেই আমরা রাজনীতি করবো। আর আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি নাই। বিএনপি’র সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। সামনে কি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সামনে যখন সময় (নির্বাচন) আসবে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, নিবন্ধন না থাকার কারণে জামায়াত নির্বাচনে নেই। কিন্তু দেশেই তো নির্বাচন ব্যবস্থা নেই। তবে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকপন্থায় সরকারের পরিবর্তন চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ভবিষ্যতে আমরা এককভাবে নির্বাচন করবো না কি জোটগতভাবে নির্বাচনে যাবো, সেটা ওই সময়ের পরিবেশ ও পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াত নির্বাচন করার জন্য রাজনীতি করে না, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে। আর জামায়াতের অস্তিত্ব বিলীন করার জন্য নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এটা যতবার করেছে আমরা ততই দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছি। আজ কিংবা কাল আমরা আমাদের নিবন্ধন ফেরত পাবোই। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।

manabzamin