ঢাকা
সংকটে নেতা-কর্মী ও দায়িত্বশীলদের কথাবার্তায় সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের আমি বলব, প্রত্যেককে কথাবার্তায়, আচার–আচরণে দায়িত্বশীল হতে হবে। এই সময়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো কথা বলা, ক্ষমতার দাপট দেখানো সমীচীন নয়। ঠান্ডা মাথায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, এটাই আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় মেসেজ (বার্তা)।’
আজ শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। শোক দিবস উপলক্ষে মহিলা শ্রমিক লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সরকারের কোনো উপায়হীনতার কারণে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব সংকটে। একটা নেতিবাচক প্রভাব আজ বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে। আমরা জানি, অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কস্ট অব লিভিং যেভাবে বেড়ে গেছে, মানুষ কষ্ট করছে এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের সামনে কোনো উপায় ছিল না।’
এ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে সেখানকার অবস্থা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আজকে রাইন নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, সেখানে জাহাজ চলতে পারছে না। ইতালির ১৫টি লেকের অধিকাংশ শুকিয়ে গেছে। ফ্রান্সের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে এখনো আগুন জ্বলছে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধি। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের কথা বাদ, কেউ তো আজ আরামে নেই। বাংলাদেশের জনগণের কষ্ট হচ্ছে। চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ ঘুম নেই। আন্তরিকভাবে তিনি আপনাদের এই সংকট উত্তরণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ আজ সমস্যায় জর্জরিত। আর এটাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের বিরোধী দল সরকার উৎখাতে নামেনি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও জাপানের বিরোধী দল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মিছিল করেনি। তিনি বলেন, ‘সহযোগিতা চেয়েছিলাম আমরা। এই দুনিয়ায় সব দেশ সংকটে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর বাংলাদেশে তারা (বিএনপি) সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার কোনো বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করে না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নিজেরা (বিএনপি) ইচ্ছেমতো মিছিল করছে, পল্টন–প্রেসক্লাবের সামনে। এত দিন বলত আওয়ামী লীগ আমাদের মিছিল–মিটিং করতে দিচ্ছে না। এখন নেত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন, ওরা করুক। যখন মিছিল–মিটিং করতে পারছে, তাদের সাহসের ডানা বিস্তৃত হচ্ছে। এখন তারা বলে বিদেশি শক্তির চাপে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না।’
ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘তাহলে এখন স্বীকার করলেন? পুলিশ বাধা দিচ্ছে না। বিদেশি শক্তির চাপে মাথা নত করার মতো লোক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নন। মনে রাখবেন, কোনো শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করি না।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেপরোয়া চালকের মতো আচরণ করছেন বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব বলতে বলতে আজকে বেপরোয়া ড্রাইভার হয়ে গেছেন। বেপরোয়া ড্রাইভার এখন ফখরুল সাহেব। বেপরোয়া রাজনীতির চালক কখন যে কোথায় অ্যাকসিডেন্ট ঘটায়!’
বিএনপিকে লক্ষ্য করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আগুন নিয়ে আসবেন না, বলে দিচ্ছি, সতর্ক করে দিচ্ছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আপনাদের কেউ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু আগুন–সন্ত্রাস নিয়ে যদি নামতে চান, মোকাবিলা করতে চান, তাহলে বলব…জনতার প্রতিরোধ সুনামিতে পরিণত হবে এবং সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই খুনিরা পালিয়ে গেছে কীভাবে? কে পাঠিয়েছে থাইল্যান্ডে? জেনারেল জিয়াউর রহমান। খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে ক্ষমতা দখল। বিএনপি আমাদের শত্রু ভাবে? অথচ ইতিহাস বলে শত্রুতা তারাই করেছে।’
মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তারের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার ও কার্যকরী সভাপতি সামসুন্নাহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।