সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বহুল ব্যবহৃত অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিধিনিষেধের প্রয়োগ। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় অস্ত্র ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংকিং লেনদেন বাধাগ্রস্ত করা, মূলধন নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক অনুদান বা সহায়তা হ্রাস, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্য বাধা সৃষ্টি এবং নিজ সীমানায় বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ বা আটক করার মতো পদক্ষেপ নিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি ও তা বাস্তবায়নের কাজটি করে থাকে অফিস অব ইকোনমিক স্যাংশনস পলিসি অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (এসপিআই)। অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি ও তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি এর পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন তৈরির কাজটিও করে থাকে দপ্তরটি। এছাড়া বিধিনিষেধ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস, ট্রেজারি ও বাণিজ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গেও যৌথভাবে কাজ করে থাকে এসপিআই। আবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটিও এ দপ্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
অন্যদিকে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করে অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি)। দপ্তরটি নিয়মিতভাবেই নিষেধাজ্ঞার আওতাধীনদের নিয়ে গঠিত কালো তালিকা হালনাগাদ করে থাকে। বর্তমানে এ তালিকায় কয়েক হাজার ব্যক্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রুপের (দল, সংগঠন, সংস্থা ইত্যাদি) নাম রয়েছে। এ তালিকার আওতাভুক্তদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ ব্লক করে রাখার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে মার্কিন নাগরিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো ধরনের লেনদেনে জড়ানো থেকে বিরত রাখার কাজটিও বাস্তবায়ন করে ওএফএসি। এছাড়া দেশটির কমার্স, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও জাস্টিস ডিপার্টমেন্টও এক্ষেত্রে সমন্বিত ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে সাম্প্রতিক সময় বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা ও এর প্রয়োগও শুরু করেছে দেশটি। বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান গতিপ্রকৃতি এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক না হয় তাহলে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে পারে দেশটি। এমনকি সংঘাতের মাত্রা বেশি হলে অর্থনৈতিক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ নেয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। মার্কিন আইন ও রীতি অনুযায়ী, এজন্য দেশটির প্রেসিডেন্টের একটি নির্বাহী আদেশই যথেষ্ট।
সর্বশেষ গতকালই রাজধানীতে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সংঘাতের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ফর সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স ডোনাল্ড লুর বরাত দিয়ে প্রকাশিত বিবৃতিতে সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহিংস সব ঘটনার পর্যালোচনা চালিয়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়।
গত মে মাসে ঘোষিত এ ভিসা নীতির প্রয়োগ এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এ সংঘাতের মাত্রা বাড়লে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞায় রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্বের অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে অর্থনৈতিক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ দেখা যায় বেশি। দেশটির সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দুটি উপায়ে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়া শুরু করা যায়—নির্বাহী ক্ষমতাবলে বা কংগ্রেসে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তবে সাধারণত দেশটির প্রেসিডেন্টই নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে এ প্রক্রিয়া শুরু করে থাকেন। এক্ষেত্রে শুরুতে এ-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এরপর এ জরুরি অবস্থা ও নিজস্ব ক্ষমতাবলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করতে পারেন।
বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে দ্বিমত দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নিয়ে হোয়াইট হাউজ ও মার্কিন কংগ্রেসের বক্তব্য এবং দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ প্রায় একই রকম। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ওপর গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট প্রয়োগের আগে তা বিল আকারে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে (সিনেট ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) উত্থাপিত হয়েছিল। দুই কক্ষে পাস হওয়ার পরই এ আইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের একটি আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী বাহিনী ও এর কয়েকজন সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা বেশি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের অধিকাংশেরই অবস্থান অনেকটা একই রকম হওয়ায় সেখান থেকে বিরোধিতা বা এ বিধিনিষেধ সীমিত করে দেয়ার সম্ভাবনাও কম।
বিশ্বরাজনীতির বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে বলেন, ‘ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অনেক অগ্রাধিকার থেকে দেশটির মনোযোগ সরিয়ে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দেয়ার প্রয়াসে এ সংঘাতের কোনো প্রভাব পড়েনি।’
তবে এর মধ্যেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলো সম্প্রসারিত হতে দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ গতকালই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক টুইট বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত এ বৈঠক নিয়ে দেয়া টুইটে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আজরা জেয়ার সাথে বৈঠক করে আমি আনন্দিত। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের উন্নয়ন ঘটানোসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা একমত যে গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়; সে বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া আবারো নিশ্চিত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করছে না বরং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা দেখতে আগ্রহী।’
বৈঠক নিয়ে টুইট বার্তা দিয়েছেন আজরা জেয়াও। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্ব নিয়ে সালমান এফ রহমান এমপির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আমরা গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদান, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখাসহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশী পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মোট পোশাক আমদানির ৬ শতাংশের সরবরাহ হয় বাংলাদেশ থেকে। অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশের মোট পণ্য রফতানির প্রায় ১৭ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। আবার দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র। গ্যাসের জাতীয় গ্রিডে স্থানীয় সরবরাহের অর্ধেকেরও বেশি আসছে জ্বালানি খাতের মার্কিন জায়ান্ট শেভরন পরিচালিত কূপগুলো থেকে। সম্প্রতি বাংলাদেশে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহেরও বড় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না তাদের অধিকাংশই।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় বৈদেশিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বেশি। পণ্য আমদানিতে বিকল্প উৎসও আছে দেশটির সামনে। চাইলেই বাংলাদেশের পরিবর্তে ভিয়েতনাম বা ভারতের মতো কোনো দেশ থেকে পোশাক আমদানি বাড়াতে পারে দেশটি। রাশিয়া বা ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার যে প্রভাব, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন হবে। রাশিয়া ও ইরানের নিজস্ব সক্ষমতা রয়েছে। চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে দেশগুলোর সম্পর্কও বেশ ভালো। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সেদিকে গড়ানোর আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার পথ তৈরি করে নিতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে কিন্তু সেটা যুক্তরাষ্ট্রের মোট তুলা রফতানির ৫ শতাংশও না। আবার পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিকল্প অন্যান্য দেশ রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। তবে আশা করি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পর্যায়ে পরিস্থিতি যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সুচিন্তিত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করতে পারব।’
যুক্তরাষ্ট্রের এসব দপ্তর এরই মধ্যে সমন্বিতভাবে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ কার্যকর করেছে। নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন কোনো কোনো দেশ এখন ব্যাংক খাতের আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম সুইফট ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারছে না। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ নিজ মিত্রদের সমর্থন পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই ধরনের বিষয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটলে তা বড় ধরনের বিপত্তি হয়ে দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) সঙ্গে লেনদেনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওএফএসি। ফলে ভারতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন মার্কিন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন নিষ্পত্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এসিইউর সদস্য হওয়ায় এ নিয়ে বিপত্তির আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশেও। এসিইউর মাধ্যমে দুই মাসের জন্য ধারে পণ্য আমদানি-রফতানি করে থাকে বাংলাদেশ। নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্লিয়ারিং হাউজটির মাধ্যমে আমদানির দেনা পরিশোধ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সার্বিক বিষয় নিয়ে আশঙ্কা করার মতো পরিস্থিতি এখনো দেখা দেয়নি বলে মনে করছেন সরকার দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে দেশ ও ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় একটি দেশের নিজস্ব নীতি অনুসরণ করে। নির্বাচনের জন্য ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে বলে আমি মনে করি না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেশ গভীর। যত কথাই হোক না কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি একটি দেশের জন্য হঠাৎ করে বদলে যায় না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। যুক্তরাষ্ট্রেরও বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। দুই দেশেরই একে অপরের ওপর বাণিজ্যিক নির্ভরতা রয়েছে। আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের যা পরিস্থিতি বা আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এখনো এমন কিছু হয়নি যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের শঙ্কা করতে হবে।’
দেশের অর্থনীতি এখন নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিধিনিষেধ আরোপ করবে কিনা বা করলে এর প্রভাব কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সংকট যদি আরো গভীর হয় তাহলে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা থাকতেই পারে। অর্থনীতি ও বাণিজ্য স্বাধীন কোনো বিষয় নয়। এগুলো বড় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই পরিচালিত হয়। একে রাজনীতির বাইরে নেয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের শুরুতেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রসারিত এবং শক্তিশালী করার কথা বলা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে সামগ্রিক অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠুভাবে না চলে, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর নির্ভর করবে ওই অঞ্চলে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়টি। তারা যা বলার বলে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো আমরা উপলব্ধি করতে পারছি কিনা। আমরা যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী সবকিছু করতে না পারি, তাহলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।’
বনিক বার্তা