নির্বাচন হয়েছে এক পাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ: টিআইবি

'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যরা। আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে
‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যরা। আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়েছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক পাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, এবারের নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। এই নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির মতে, এই নির্বাচনের ফলে গণতান্ত্রিক অবনমনের অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচনী কৌশল ও অভিনবত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হলেও বেশির ভাগ আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না ২৪১টি আসনের ভোট।

টিআইবি আরও বলেছে, নির্বাচনে শেষের এক ঘণ্টায় ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতা অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নে একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না, তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের যে পূর্বশর্ত থাকে, তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি বলে টিআইবি মনে করছে ৷ সংস্থাটির মতে, বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রীক ‘অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে।

টিআইবি আরও বলেছে, নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের ‘অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসন অনুরূপভাবে একই ‘অ্যাজেন্ডা’র সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে।

টিআইবি মনে করছে, সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের সম্ভাব্য সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে যতটুকু আগ্রহ থাকবে, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হবে শুদ্ধাচার ও নৈতিকতার মানদণ্ডে সরকারের প্রতি জন আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন ও তার প্রভাব। দেশের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমাগত গভীরতর হবে।

অনুষ্ঠানে টিআইবির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের সদস্য মাহফুজুল হক, নেওয়াজুল মওলা ও সাজেদুল ইসলাম। টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম আলো