- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:০০, আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:২৭
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষ জেগে উঠেছে, রাজপথে নেমেছে। রাজপথে এই সরকারকে পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবো। আওয়ামী লীগ আবারো নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে চায়। আমরা নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে দেবো না।
ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। রোডমার্চের দ্বিতীয় দিন বগুড়া থেকে শুরু করে রাজশাহীতে গিয়ে শেষ হয়। প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে চারটি পথসভাসহ ছয়টি স্থানে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্যে বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, রোডমার্চ থেকে একটা বার্তা দিতে চাই, আসুন, জেগে উঠুন, এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করুন।
তারা আরো বলেন, আজকে জনগণের অবস্থান একদিকে, ভোটচোরেরা অন্যদিকে। ভোটচোরের আস্থানা গুড়িয়ে দিতে হবে। একই সাথে সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতা।
রোববার বেলা পৌনে ১২টায় বগুড়ায় এরুলীয়া থেকে এ রোডমার্চ শুরু করে বিএনপির সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদল। রোডমার্চে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে অংশ নেন। দীর্ঘ পথমালায় রাস্তা দুই পাশের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে রোডমার্চের বহরকে স্বাগত জানান। এ সময় বিএনপি মহাসচিব হাত নেড়ে জনগণের অভিবাদনের জবাব দেন। পথে পথে আশপাশের জেলা থেকে শত শত নেতাকর্মী রোডমার্চে যোগ দেন। জনতার ভিড় ঠেলে রোডমার্চের বহর রাজশাহীতে পৌঁছায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায়। সাড়ে ৭ ঘণ্টায় সময় লাগে রাজশাহী সমাবেশ এসে পৌঁছাতে। প্রথম দিন শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রোডমার্চ করা হয়।
এছাড়া রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উপজেলা পুলিশ ফাঁড়ির পাশে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলের বহরে উঠিয়ে দেয়। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আউয়াল এবং যুবদল নেতা শাকিল গুরুতর আহত হন।
এদিকে রোডমার্চে যোগ দেয়ার সময় নাটোরে তিনটা স্থানে গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। সরকার দলীয় ক্যাডাররা গাড়ি ভাংচুর চালায় এবং পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া বগুড়া থেকে রোডমার্চ নিয়ে সিদ্দিরপুর এলাকায় এলে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
দুই দিনের রোডমার্চ শেষে রাজশাহী ঈদ গাঁ মাঠে সমাপনী সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে অস্তিত্বের প্রশ্ন, স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে কিনা প্রশ্ন, গণতন্ত্র ফিরে আসবে কিনা প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আদালত, সংসদ সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে খুন-গুম করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রেখেছে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না।
ডিসি-এসপি পরিবর্তন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রাজশাহীতে ফোন আলাপ বেরিয়েছে। ওসি বলছেন একজন মন্ত্রী এনেছেন নির্বাচন করিয়ে দেয়ার জন্য। কি শুনেননি?…
তিনি বলেন, আসুন, আজকে আমরা রুখে দাঁড়াই, এই সরকারকে মানুষ না বলে দিয়েছে।
সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তালি দিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে, উৎসাহ দিয়েছে। আন্দোলন সফলতার দারপান্তে। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোট চোরদের ধরার জন্য। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে একজন একজন করে তালিকা করার জন্য।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে যারা ঠেলে দিচ্ছে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্ব নেতাদের পেছনে ঘুরঘুর করছে, সেলফি তুলছে। কোনো লাভ হবে না। এদের দেশেও কেউ নেই, দেশের বাইরেও কেউ নেই। তাদের একমাত্র ভরসার জায়গা হচ্ছে পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, শুধু সরকারের পতন ঘটালেই হবে না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত রাস্তায় থাকবো।
যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন- যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
এর আগে বগুড়ায় এরুলীয়ায় উদ্বোধনী সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, রোডমার্চ থেকে এই বার্তাই দিতে চাই, আসুন জেগে উঠুন। এই সরকারকে পরাজিত করুন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আপনাদেরই সন্তান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে কেন? ভোটের অধিকার, মানুষের অধিকার, ভাতের অধিকারের জন্য। চাল দাম কত এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা তাই না? চাল, ডাল, তেল প্রত্যেকটা জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। বিদ্যুতের দাম তিনি চার বার করে বাড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই সরকার শুধু দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার চুরি করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় চুরি- আমাদের ভোটের অধিকার চুরি করেছে। আবারো তারা চুরি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। এ সময় তিনি জনতার কাছে জানতে চান- পারবে এবার ভোট চুরি করতে? উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলেন ‘না’।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দী করে রেখেছে। আজকে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। উন্নত চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। ডাক্তারা বলছেন, তাকে বাঁচাতে হলে তাড়াতাড়ি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা দরকার, সেটা বিদেশ ছাড়া সম্ভব নয়। বারবার আমরা বলছি, পরিবার থেকে বলছে কিন্তু এ সরকার শুনতে রাজি নয়…। পরিষ্কার করে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।