নির্বাচন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ছিল

নির্বাচন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ছিল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনটাই যেন না হয়, সে জন্য অনেক আন্তর্জাতিক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ছিল। নির্বাচন করা যাবে না, এই ধরনের একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সে জন্য বিরোধী দল নির্বাচনে আসেনি। তারা জানত নির্বাচন তো হবেই না। শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তাদের আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয় ও টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো দলের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে একটি টিম গঠন করে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ওই টিমের সদস্যসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। এই আস্থার জায়গাটা এখনও রয়ে গেছে, সেটাই আমাদের বড় শক্তি।
বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের নেতারা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাজেটের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব বলেও আশা ব্যক্ত করেন তারা।

কয়েকজন নেতা অবশ্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিতে জনজীবনের সংকট দ্রুত নিরসনের তাগিদ দিয়ে বলেন, এসব কারণে সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন কিছুটা হলেও ম্লান হচ্ছে।
জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে জানিয়ে একজন উপদেষ্টা এটা দূর করার তাগিদ দিয়েছেন।

২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা প্লাটিনাম জয়ন্তী পালনের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, এবার প্লাটিনাম জয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও ব্যাপকভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের নেতারাও এ বিষয়ে নানা পরামর্শ তুলে ধরেন। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপিসহ বিরোধীদের ভূমিকা, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়েও নানা মত তুলে ধরেন নেতারা।

সভার সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বদলে গেছে। বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশকে ধরে রেখেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সে ক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের পরামর্শ ও বক্তব্য জানা দরকার। তবে আগের মতো ঘন ঘন মিটিং করা এখন আর সম্ভব হয় না। কারণ এখন অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরও একটা চক্রান্ত ছিল। এগুলো আমরা কিছুটা বুঝতে পারি। যার জন্য আমরা এবার একটা রিস্ক নিয়েছিলাম। রিস্কটা হলোু আমি নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আমি মনোনয়ন দিলাম সত্য। কিন্তু সেই সঙ্গে উন্মুক্ত করে দিয়ে বললাম, যে চাও দাঁড়াতে পার। হয়তো এমনও হতে পারত, যারা দাঁড়িয়েছেন তারাই বেশি আসন পেলেন। আমরা দলগতভাবে কম আসন পেলাম। কিন্তু সেটা হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা এককভাবে ২৩৩টা আসন পেয়েছিলাম। এবার উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ২২৩টা পেয়েছি। কারণ আমাদের দলের স্বতন্ত্র অনেকেই জয়ী হয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, অপজিশনের অবস্থা খুবই করুণ। কারণ বিএনপি তো ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩০টা আসন পেয়েছিল। অনেকেই ভাবতু আওয়ামী লীগ আর বিএনপি সমান সমান। আসন ও ভোট সমান সমান হবে। হয়তো একটা ঝুলন্ত সংসদ হয়ে যাবেু এ রকম একটা চিন্তা ছিল। কিন্তু দেখা গেল মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ওপর।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনোদিন প্রশ্ন তোলেনি, তুলতেও পারেনি। যারা বিরোধী দলে তারাও করতে পারে না। সেই নির্বাচনেই মহাজোটে থাকলেও এককভাবে আওয়ামী লীগ ২৩৩টা সিট পেয়েছিল। আর এবার পেয়েছে ২২৩টা।

তিনি বলেন, এর মাঝে আরও দুটি নির্বাচন হয়ে গেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। ওই নির্বাচনগুলো বানচাল করার জন্যই অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পোড়ানোসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। এবারও নির্বাচনে বাধা দিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু শত বাধা অতিক্রম করে মানুষ ভোট দিয়েছে এবং আমরা আবার জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতির সূচনা বক্তব্যের পর তাঁর সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন।

samakal