ঢাকা
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ ‘বাকশালের’ মতোই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার বিকেলে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে বিএনপির জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বাকশাল দিবস উপলক্ষে ‘২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫: বাকশাল’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যে কাজ ১৯৭৫ সালে তারা করতে পারেনি, বিগত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজ করার জন্য ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেছে। একটা মোড়ক রেখেছে সামনে, এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে। আসলে এখানে কোনো গণতন্ত্র নেই।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) যে দুটি নির্বাচন ইতিমধ্যে করেছে, সেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণ তাঁদের ভোট দেওয়ার অধিকার পর্যন্ত পাননি। একই লেবাসে নির্বাচন করার জন্য এবার একটা আইনও তৈরি করল কয়েক দিন আগে, ঠিক সেই বাকশালের মতোই। যেটা ১১ মিনিটে ছিল, এবার এটা ৭ দিনের মধ্যে অতি দ্রুত একটা আইনও পাস করে নিল সংসদে।
২৭ জানুয়ারি সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ পাসের পর রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিয়েছেন। এরপর ২৯ জানুয়ারি রাতে এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাকশাল একটি গালিতে পরিণত হয়েছে। কেন? এই বাকশালের মধ্য দিয়ে সেদিন দেশে অর্থনীতিকে ধবংস করা হয়েছিল, রাজনীতিকে ধবংস করা হয়েছিল, স্বপ্নকে ধ্বংস করা হয়েছিল। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে তারা দেশ ও জাতিকে গভীর অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘ঠিক একইভাবে আমরা আজকে দেখছি, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে দলীয়করণ করেছে, দেশকে লুটতরাজের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড অত্যন্ত নিষ্ঠুর হাতে দমন করছে, বিশেষ করে স্বাধীনচেতা গণতান্ত্রিক মানুষদের হত্যা-গুমের মধ্য দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, প্রতিবাদের ভাষা বন্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন তৈরি করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইন তৈরি করে যাঁরা কথা বলতে চান, তাঁদের কথা বলাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে ৪৭ বছর পর আবার বাকশাল প্রতিষ্ঠার যে নীলনকশা শুরু হয়েছে, সেই নীলনকশাকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে এবং সেটা আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই।’
একটা সমৃদ্ধ, উন্নত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করে, সব রাজনৈতিক দলকে একত্রে নিয়ে এসে, সব গণতন্ত্রকামী মানুষকে এক জায়গায় এনে রুখে দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বর্তমান সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার, জনপ্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গঠনেরও আহ্বান জানান।
এদিকে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকার আজকে গায়ের জোরে দেশ পরিচালনা করছে। দেশে আজকে সেই বাকশালের চিন্তাচেতনা অলিখিতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ বক্তব্য দেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘১৯৭৫: বাকশাল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং গ্রন্থটি দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বিএনপি। গ্রন্থের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টারের পরিচালক সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন।