নির্বাচনের ডেডলাইন: চাপের মুখে নতি স্বীকার করেছেন ড. ইউনূস, দাবি ফরহাদ মজহারের

রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কারণেই ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের একটি ডেডলাইন বা সময়সীমা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন কবি, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। তার মতে, রাজনীতিবিদদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করেই ড. ইউনূস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফরহাদ মজহার

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ফরহাদ মজহারের মতে, নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রের কাঠামো ঠিক করা বেশি জরুরি। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো, নতুন রাষ্ট্র গঠন করা। আমাদের সবাইকে এক হয়ে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ করতে হবে। আগে রাষ্ট্রের কাঠামো ঠিক করতে হবে, তারপর নির্বাচন করতে হবে।’

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকার সমালোচনা করে এই প্রবীণ বিশ্লেষক বলেন, ‘সবাই শুধু ভোট চায়, নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে চায়। কেউ দেশের কথা, জনগণের কথা ভাবে না। সবাই শুধু ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করতে চায়।’ তিনি চলমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, ‘আমার করের টাকায় রাষ্ট্র চলে, কিন্তু আমার কোনও উপকারে আসে না। গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা চেয়েছি আমাদের জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত আমরা স্থানীয়ভাবে নেব। কিন্তু রাষ্ট্র ঢাকায় বসে আমাদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।’

একটি জনবান্ধব রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘জনগণ আগে, রাষ্ট্র পরে। জনগণের উপরে রাষ্ট্র নয়।’ তার মতে, এমন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে যেখানে জনগণের ব্যক্তি অধিকার খর্ব করার কোনও ক্ষমতা রাষ্ট্রের থাকবে না এবং রাষ্ট্র এমন কোনও আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না যা প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে।

রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন সংগ্রাম ছাড়া এই গণ-অভ্যুত্থান হতো না।’ তিনি আরও বলেন, দেশের সব বড় দল যেমন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে নিয়ে একটি নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি করতে হবে যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তার মতে, বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব নয়, বরং দেশের মানুষকে নিয়ে যারা কাজ করেন এবং চিন্তা করেন, তাদের দিয়েই কমিশন গঠন করে এই কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

জ্ঞানতরু সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরিষদের সভাপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন উলিপুর বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল হোসেন চাঁদ, জুলাই যোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নাহিন, সাংবাদিক শাহরিন আরাফাত, জ্ঞানতরু সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নেছারউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল বারী এবং সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমানসহ আরও অনেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here