নির্বাচনের আগে প্রশাসনে আরেক দফা রদবদল

 

সমকাল :  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আরও এক দফা বড় রদবদল হবে। গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে আসছে পরিবর্তন। অন্তত ১০ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হবে। এসব পদে নতুন মুখ দেখা যাবে।

এ ছাড়া নির্বাচনের আগেই প্রশাসনে আরেক দফা পদোন্নতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এবার দেওয়া হবে উপসচিব পদে পদোন্নতি। বিসিএসের ২৯তম ব্যাচকে মূল ব্যাচ ধরে এ পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) পদে আসছে নতুন মুখ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মাসে ও নভেম্বরে তিন মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদ শূন্য হচ্ছে। এসব পদে নতুন মুখ আসবে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে সচিব পদে রদবদল করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্বাস্থ্য সচিবের অবসরের সময় ঘনিয়ে আসায় এ রদবদল হচ্ছে। তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে; না হলে নতুন নিয়োগকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি পদে নড়চড় হবে। জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৩ অক্টোবর। তাঁর জন্মদিন ১৪ অক্টোবর। ওই দিন তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। এ হিসাবে শেষ কর্মদিবস হবে ছুটিতে যাওয়ার আগের দিন। সূত্র জানায়, মাহবুব হোসেনকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত প্রায়। যদি কোনো কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া না হয়, সে ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী হবেন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবও শতভাগ পেশাদার আমলা হিসেবে সুপরিচিত। প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিলেন। ২৪তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের ৮৬ ব্যাচের এ কর্মকর্তা ৩ জানুয়ারি দায়িত্ব নেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ অক্টোবর। শোনা যাচ্ছে, কর্মরত সচিবদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিব নিয়োগ দেওয়া হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম অথবা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে এ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এখন পর্যন্ত সমাজকল্যাণ সচিব জাহাঙ্গীর আলমের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে এ পদের জন্য। প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা সচিব পদে পদোন্নতি পান গত বছরের ১৮ মে। প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)-১ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন ভালো কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। অবশ্য তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হতে এখনও প্রায় চার বছর বাকি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহরও দপ্তর বদল হতে পারে।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমপক্ষে ১০ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হতে পারে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, নোয়াখালী জেলার দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, চাঁদপুর জেলার কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম জেলার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানসহ ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের আগে প্রত্যাহার করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে আলোচনা আছে।

জানা গেছে, প্রশাসনে শিগগির উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এবার পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন প্রশাসন ক্যাডারের ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) গতকাল সোমবার এ নিয়ে বৈঠক করেছে। পদোন্নতির জন্য লেফটআউট তালিকার বাইরে নিয়মিত ব্যাচ থেকে বিবেচনায় ১৯৫ জনকে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইকোনমিক ক্যাডার থেকে প্রশাসনে একীভূত হওয়া কর্মকর্তা রয়েছেন ২৯ জন।

২০১১ সালে ২৯তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন মোট ১৬৬ জন কর্মকর্তা। প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন না করায় একজন কর্মকর্তা বিবেচনা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। আরও ২-১টি বৈঠক করে এ মাসের মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করে পদোন্নতির জন্য সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, একসময় উপসচিব পদে চাকরির ১৭-১৮ বছরে পদোন্নতি হতো। সে সময় অনেক ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ কারণে এসব ব্যাচের কর্মকর্তাদের চাকরি জীবনের প্রথম পদোন্নতি পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বড় তিনটি ব্যাচের ধাক্কায় প্রশাসনে দীর্ঘদিন থেকে প্রতিটি ধাপে পদোন্নতিজট বিরাজ করছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এখন প্রায় যথাসময়ে পদোন্নতি হচ্ছে। ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তারা মনে করছেন, তাদের পদোন্নতি প্রক্রিয়া এক বছর বিলম্বিত হয়েছে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভায় এ সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়া হয়। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে সম্প্রতি সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আব্দুর সবুর মণ্ডলকে শিগগির কোনো একটি মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। একই সময়ে নিয়োগও দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যিনি নিয়োগ পাবেন, তাঁর খালি হওয়া মন্ত্রণালয়ে সবুর মণ্ডলের নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত পূর্বের পদে সংযুক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও নিম্ন পদে তাঁর এই দায়িত্ব পালনকে প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তা মেনে নিতে পারেননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে এপিডির (অতিরিক্ত সচিব) পদে কে আসছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। এ পদে এখন পর্যন্ত ১৫তম ব্যাচের কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবের নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন– রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ডা. মো. সারোয়ার বারী, মালয়েশিয়ায় বিদেশ মিশনে কর্মরত নাজমুস সা’দত সেলিম, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিদুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক সারোয়ার আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, বিমানের এমডি শফিউল আজিম এবং এপিডি উইংয়ে কর্মরত অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা। এপিডি নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে কখনও এক ব্যাচ ডিঙিয়ে পদায়ন করা হয়নি। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এপিডি হিসেবে রয়েছেন ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ধারাবাহিকতা রক্ষায় এক ব্যাচ জুনিয়র ১৫তম ব্যাচ থেকেই নতুন এপিডি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।