আবদুল লতিফ মাসুম : এখন এই সময়ে বাংলাদেশ নির্বাচন সঙ্কটের প্রান্তসীমায় উপনীত। যেকোনো সঙ্কটের মতো এরও শুরু আছে, শেষ আছে। আজকে যে ভয়াবহ অবস্থায় আমরা উপনীত এর শুরু আছে, ধারাবাহিকতা আছে এবং চরম অবস্থার দায় আছে। আনন্দের কথা এই, বাংলাদেশের সংবিধান বিধিত নির্বাচনব্যবস্থা ছিল সংসদীয় রীতি মোতাবেক যথার্থ। কিন্তু থিউরি ও প্র্যাকটিস বলে কথা আছে না! সহজ কথায়, হুজুরের গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই।
ভালো ভালো কথা সংবিধানে সন্নিবেশিত আছে। মানবাধিকারের কথা এত করে বলা আছে যে, সেখানে বড় বড় দেশের সংবিধানও হার মানে। পার্থক্যটি হচ্ছে এই, ওদের মন, মগজ আর অনুসৃত ব্যবস্থায় পার্থক্য সামান্য। সবাই জানি, গণতন্ত্র হচ্ছে শাসনব্যবস্থার মূলমন্ত্র। এই মন্ত্রটি হাজারবার জপলেই হবে না। এর অনুশীলন, অনুশাসন ও অনুসৃতি প্রয়োজন। যেকোনো আদর্শ, নিয়ম-কানুন ও প্রথা-পদ্ধতির দু’টি দিক আছে। প্রথমটি ব্যক্তিক পর্যায়ে নির্ণীত, অপরটি ব্যবস্থা বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রকাশিত। আমরা গণতন্ত্রের চর্চার ক্ষেত্রে বলি- ‘Democracy is a way of life’. গণতন্ত্র একটি জীবনপদ্ধতি। ব্যক্তির জীবনের কথাবার্তা, চালচলন, আচার-আচরণ ও রীতি-নীতি যদি গণতান্ত্রিক না হয়, যদি সহনশীল না হয়, যদি সমঝোতা-সহযোগিতাপূর্ণ না হয় তাহলে সে গণতন্ত্রের চর্চা কী করে করবে? আবার ব্যবস্থাটি যদি তত্ত্ব-তথ্যে গণতান্ত্রিক না হয় তাহলে পদ্ধতিগতভাবে এর প্রয়োগ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এস ই ফাইনার বলেন, ‘Constitution is the autobiography of power relationship’. সংবিধান হচ্ছে ক্ষমতা সম্পর্কের আত্মবিবরণী। তাই যদি হয় তাহলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর শুধু সম্পর্ক বিবেচনা করলেই হবে না, ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল তথা নেতৃত্বের গণতান্ত্রিক মানসিকতা বা আচরিত জীবনবোধ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্র্রে ক্ষেত্রেও বিষয়টি সমভাবে বিচার্য। আমাদের সংবিধানের ছত্রে ছত্রে গণতন্ত্রের কথা আছে। কিন্তু যারা এটি অনুসরণ ও অনুশীলন করবেন তারা যদি ব্যক্তিজীবনে গণতন্ত্রের ‘গ’-ও ধারণ না করেন তাহলে গণতন্ত্র কিতাবেই থেকে যায়, ময়দানে আসবে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক এলিটদের ব্যক্তিগত গণতান্ত্রিক মানস যদি বিচার-বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে হতাশ হতে হয়। বিশেষত প্রাথমিক রাজনৈতিক এলিটদের বৈশিষ্ট্য আমিত্ব-অহঙ্কারে পরিপূর্ণ। শক্তি প্রয়োগের দর্শনদুষ্ট। স্বজন তোষণে নিমজ্জিত। এই ব্যক্তিগত পর্যায়ের পর যদি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আসি- সংবিধান সংশোধনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করি তাহলে পরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অনুপস্থিতি লক্ষ করি। যারাই মৌলিক অধিকারের কথা বললেন, তারাই ক্ষমতার দম্ভে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ প্রয়োগ করলেন। রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে যারা সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করলেন, তারাই বাকশাল প্রবর্তন করলেন।
এভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রথম থেকেই তারা অকার্যকর করলেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় নির্বাচনটিও তারা গণতন্ত্রের অবাধ ও নিরপেক্ষতার পরিবর্তে বাকশাল মানসিকতার নিরঙ্কুশ নিদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করলেন। এটি কে না বোঝে, সামরিকতন্ত্র ও গণতন্ত্র সমার্থক নয়? এই সামরিকতন্ত্র আরোপিত হওয়ার প্রধান কারণ- ‘Failure of the political elite’ রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা। ১৯৯০ সালের পর যে বেসামরিক রাজনৈতিক এলিটরা ক্ষমতাসীন হলেন, তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উত্তম উদাহরণ হতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির দূরত্বের সুযোগে প্রতারণা-প্রচারণার মাধ্যমে ২১ বছর পর তারা ক্ষমতায় আসে। সেই পাঁচ বছর ও এই ১৫ বছর যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, তারা ক্রমে ক্রমে বাকশালের সেই আদি-অকৃত্রিম ধারায় ফিরে গেছে। এই মুহূর্তের বাংলাদেশে অঘোষিত বাকশাল চলছে। বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন সঙ্কটের মূল কারণ হলো নির্বাচনব্যবস্থাকে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সংযোজিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ। এখন আইনবেত্তা ও বিচারকরা বলছেন, তা ছিল বেআইনি ও চাতুর্যপূর্ণ। তারপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের গল্প সুবিধিত। সে জারি অনেক ভারী। তা শুনতে আপনাদের অনেক হবে দেরি। তাই সমাগত ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে কথা বলি।
সেই একই কায়দায় সেই পুরনো কৌশলে তরী পার করতে চান নৌকার লোকেরা। তাই ষড়যন্ত্র ও নানা কারসাজির সব অবতারণা। ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তাদেরই নীলনকশা মোতাবেক ঘটনাবলি ঘটে অথবা ঘটানো হয়। এখন সব দায় বিএনপি ও বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে আগুনসন্ত্রাসের তকমা দিতে চায় তারা। রাজনৈতিক নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-হামলা ও চোরাগুপ্তা আক্রমণ করে তারা ময়দান শূন্য করেছে। খালি মাঠে গোল দিতে চায় তারা। মাঠ খালি করতে করতে এতটাই শূন্য হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ডামি প্রার্থী খুঁজছেন।
বিরাজমান চরম রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্য আবারো সেই তত্ত্বকথায় ফিরে যাই- ব্যক্তি ও ব্যবস্থা (Individual and System)। ব্যক্তি যদি গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতার না হয়ে কর্তৃত্ববাদী হন তাহলে সঙ্ঘাত-সঙ্কট অনিবার্য। দুর্ভাগ্যজনক হলো- আমরা সেই সঙ্কট অতিক্রম করছি। এই অতিক্রমের উপায়, উত্তরণ নিয়ে ফর্মুলারও শেষ নেই। দেশ ও বিদেশের বন্ধু এবং শত্রুরা বিভিন্ন প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। এসবই অস্থায়ী কার্যব্যবস্থার সুপারিশ। এই নির্বাচনটি কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, তা সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। এই ডামাডোলে নির্বাচন সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে সবাই। বর্তমান ব্যবস্থাটি যে অকার্যকর হয়ে পড়েছে তা একটি বাস্তব সত্য। নির্বাচনপদ্ধতির স্থায়ী সমাধানের জন্য অনেক রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রচিন্তকদের মতামত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা Proportional Representation -PR পদ্ধতির কথা বলছেন।
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনপদ্ধতি একই রকম নয়। নানা দেশে নির্বাচনব্যবস্থায় রয়েছে বহুমাত্রিকতা। আমাদের দেশের প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা এলাকাভিত্তিক। এতে দেশের জনসংখ্যাকে অঞ্চলভিত্তিতে বণ্টন করা হয়। আমরা একে বলি, নির্বাচনী এলাকা (Constituency)। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়- ‘ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট’ ভোটদান (ইংরেজি : First-past-the-post voting; FPTP or, FPP) হলো এক প্রকার নির্বাচনী ব্যবস্থা যেখানে কেবল একজন প্রার্থী বা একটি দল বিজয়ী হতে পারে। একক বিজয়ী ব্যবস্থার মধ্যে এই পদ্ধতিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা একজন মাত্র প্রার্থীকে ভোট দেন এবং অনেক প্রার্থীর মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোটে এগিয়ে থাকেন তিনিই নির্বাচনে বিজয়ী হন।
অনুরূপ প্রক্রিয়া, যেখানে একক প্রার্থীর বদলে একাধিক প্রার্থী বিজয়ী হন তা প্লুরালিটি ব্লক ভোটদান ব্যবস্থা বা ‘ব্লক ভোটিং’ হিসেবে পরিচিত। এফপিটিপি এবং ব্লক ভোটিং উভয়ই তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠতার পদ্ধতি, অর্থাৎ প্রার্থীর সংখ্যা দুইয়ের অধিক হলে মোট ভোটের অর্ধেকের চেয়ে কম ভোট পেয়েও (তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠতা) কোনো প্রার্থীর বিজয়ী হয়, অর্ধেকের বেশি ভোটের (নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) প্রয়োজন হয় না। যেমন- কোনো নির্বাচনী এলাকায় তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ৩৪ শতাংশ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীও বিজয়ী হতে পারেন, চারজন অংশগ্রহণ করলে ২৬ শতাংশ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীও বিজয়ী হতে পারেন, ৫১ শতাংশ ভোটই যে পাওয়া লাগবে এমন কোনো শর্ত নেই।
ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট শব্দবন্ধ ঘোড়দৌড়ের একটি রূপক, যেখানে তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভকারী প্রার্থী এ ধরনের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে; ওই নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিঙ্গেল-মেম্বার প্লুরালিটি ভোটদান (Single-member plurality voting; SMP) বলা হয়। যখন এটি একক-সদস্যের নির্বাচনী এলাকায় ব্যবহার করা হয়, অন্যথায় অনানুষ্ঠানিকভাবে একে একজন-বাছাই ভোটদান (Choose-one voting) বলা হয়, যা ক্রম ভোট বা স্কোর ভোটের বিপরীত। এ ছাড়া পেশা ও নৃতাত্ত্বিক বিভাজনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদাহরণ রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে এখানে ধর্মীয় অনুপাতে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বব্যাপী আরেক প্রকার নির্বাচনপদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পৃথিবীর ৮৬টি রাষ্ট্রে কমবেশি বিভিন্নতায় এই পদ্ধতি চালু রয়েছে- এর নাম সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation)। এ ব্যবস্থায় প্রাপ্য ভোটের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল ও গোষ্ঠীকে আসন বণ্টন করা হয়। রাজনৈতিক বিভাজনের যথার্থ প্রতিনিধিত্ব প্রতিফলনই এ ব্যবস্থার লক্ষ্য। এ ব্যবস্থায় প্রদত্ত ভোটের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। যথার্থভাবে নির্বাচন জয়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর প্রায়োগিক প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই ব্যবস্থায় নির্বাচন গৃহীত হয় না।
সমানুপাতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে মিশ্র, ভারসাম্যপূর্ণ ও সামগ্রিকতায় ভোটারের মতামতের কার্যকারিতা লক্ষ করা যায়। এই নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রতিটি প্রতিনিধি সাধারণভাবে প্রায় সমান ভোটের অধিকারী হন। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় সর্বাধিক জনগণের সর্বাধিক মতামত প্রতিফলিত হয় না। বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে ৫০ শতাংশ ন্যূনতম ভোট পাওয়ার বাধ্যবাধকতা অনুপস্থিত। এক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। সমানুপাতিক ব্যবস্থায় দলীয় পরিচয়ের বাইরে ব্যক্তিগত ও স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে সংসদ বা পার্লামেন্টে আসন বণ্টন হয়ে থাকে। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বকে অন্যান্য প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা- অঞ্চল, গোষ্ঠী, পেশা, প্রতিষ্ঠান ও সংখ্যালঘু থেকে শ্রেয় মনে করা হয়।
বহুল ব্যবহৃত সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মধ্যে রয়েছে- দল কর্তৃক প্রদত্ত ও অনুসৃত প্রার্থী তালিকা। ৮৬টি দেশের বেশির ভাগই রাজনৈতিক দল কর্তৃক তৈরিকৃত প্রার্থী তালিকাকে অনুসরণ করে। কোনো কোনো দেশে অঞ্চল ও জনসংখ্যার সংমিশ্রণ রয়েছে। সমানুপাতিক ব্যবস্থায় ভোট কারচুপি, শক্তি প্রয়োগ ও কালো টাকার ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। এ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ, কর্মসূচি ও প্রতিশ্রুতির প্রতি জনগণের মতামত জ্ঞাপনের সর্বাধিক সুযোগ রয়েছে। আবার দেশের অন্যান্য পর্যায়ের নির্বাচনগুলো ব্যক্তিক, গোষ্ঠী ও নিরপেক্ষ পর্যায় পরিচালিত হতে পারে।
সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিশদ বর্ণনা এই ছোট্ট পরিসরে সম্ভব নয় এবং কাম্যও নয়। এ জন্য পৃথক আলোচনার প্রয়োজন।
যেকোনো রাজনৈতিক সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের অভিমত এই, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা যদি সততার সাথে প্রয়োগ করা যায় তাহলে চলমান সঙ্কটের ৭৫ শতাংশ সমাধান নির্বাচন কমিশনই করতে পারে। বাংলাদেশে গত দুই দশক ধরে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বড় ধরনের গবেষণা বা গ্রন্থনা দেখা যায়নি। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে আসা যায়- সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থাপনা প্রশ্নে ডান ও বাম ধারার নিপাতনে সিদ্ধ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা কামারুজ্জামান সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে নিবন্ধ লিখেছিলেন। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদেরের একই অভিমত ব্যক্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, সাবেক পিডিবির মরহুম চেয়ারম্যান ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ এই পদ্ধতির পক্ষে আছেন। অপরদিকে, বাম ধারার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সেমিনার আয়োজন করে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছে। একই অভিমত রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি ও ইনুর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের। সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, হায়দার আকবর খান রনো এই ব্যবস্থার পক্ষে লিখেছেন। তবে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতামত স্পষ্ট নয়। তবে জনমত-ভিত্তিক জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার পক্ষেই থাকতে পারে।
বিগত ২৮ নভেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংলাপে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাইয়ের পীর সাহেব মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানান। তার ভাষায়, ‘কার্যকরী সংসদ, রাজনৈতিক সংহতি এবং শতভাগ জনমতের প্রতিফলনের জন্য পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনই অধিকতর উত্তম পদ্ধতি; যা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে, তা প্রবর্তন করতে হবে’। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণা রাজনৈতিক এলিটদের যথার্থভাবে বুঝানো হলে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হতে পারে। আর জনমত গঠনের কাজটি করতে এগিয়ে আসতে হবে সিভিল সোসাইটিকে। জাতীয় স্বার্থে ও রাষ্ট্রিক প্রয়োজনে সিভিল সোসাইটির বিজ্ঞ সদস্যরা বিষয়টির সমর্থনে এগিয়ে আসবেন, এটিই জনমতের প্রত্যাশা।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
নয়াদিগন্ত