একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকট, উত্তরণে সংলাপ, এর মধ্যেই তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশনের করণীয়- এসব বিষয়ে আজ (১১ নভেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চলাবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তফসিল পেছানোর অনুরোধ আমলে না নিয়েই তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাড়াহুড়ো করেছে, বলছেন অনেকে। আপনার কি মনে হয়?
সাখাওয়াত হোসেন: এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন তাড়াহুড়ো করেছে, সেটি আমার মনে হয় না। কারণ তারা আগে থেকেই তা বলে আসছিল। প্রথমে ৪ নভেম্বর বললেও, পরে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল পেছানোর অনুরোধ কেনো নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেনি, তা আমি বলতে পারব না। কারণ তারা যদি একে যৌক্তিক মনে না করে, তাহলে তাদের মতো করেই এগুবে। তবে, নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে আছে, তারা চাইলে ২৮ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত তফসিল পেছাতে পারে।
নির্বাচনের পরে যৌক্তিক কারণে কতখানি সময় হাতে রাখতে চাইবে নির্বাচন কমিশন, তা দেখার বিষয়। কিন্তু পেছানো, অনুরোধ শোনা, না শোনা, সম্পূর্ণ তাদের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, অন্যান্য দল যেহেতু আসতে চাচ্ছে, কাজেই তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখা। কারণ নিবন্ধিত দলগুলো তো নির্বাচন কমিশন ছাড়া অন্য কারও কাছে তাদের সমস্যা নিয়ে যেতে পারবে না।
তফসিল ঘোষণা পরবর্তী নির্বাচন প্রস্তুতি কেমন দেখছেন?
সাখাওয়াত হোসেন: নির্বাচন প্রস্তুতি তো আর সেভাবে দেখা যায় না। কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুতির ধারণা নিতে হয়। ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে যাবতীয় উপকরণ রয়েছে। এগুলো সরবরাহের ক্ষেত্রেও তাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখন বাকি যা থাকে তা হলো- কিভাবে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। এ নিয়ে তাদের প্রস্তুতির ব্যাপারে আমি খুব একটা বলতে পারবো না। এবারের নির্বাচনী আচরণবিধি আমি যা পড়েছি, তা খুব একটা কার্যকর নয়। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন সমস্যায় পড়তে পারে।
কালকে শুনলাম, নির্বাচন কমিশন সচিব একবার বললেন সেনাবাহিনী ইভিএম সেন্টারগুলো পরিচালনা করবে, একবার বললেন নিরাপত্তা দেবে। এটাও পরিষ্কার নয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে না। জাতিসংঘের নির্দেশ ছাড়া এটি কোনো আইনের মধ্যেও পড়ে না। নির্বাচন কমিশন কী মনে করে কী বলেছে, তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিলে তো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন যদি এসব ব্যাপারকে উহ্য রাখে, তাহলে তারা আসলেই সমস্যায় পড়বে।
নির্বাচন কমিশন বলছে শহরাঞ্চলের কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, বিষয়টিকে কতটুকু যৌক্তিক মনে করছেন?
সাখাওয়াত হোসেন: এই উদ্যোগটিকে আমি খুব একটা যৌক্তিক মনে করি না। ইভিএম নিয়ে অনেক আপত্তি আছে। নির্বাচন কমিশন কেন বিতর্কের মধ্যে যেতে চাইবে। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ থাকাই ভালো। কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করেই বা কি হবে? পুরো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলে না হয় বুঝতে পারতাম।
জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মতে, এভাবে ভাঙা-ভাঙাভাবে ইভিএম ব্যবহার করাটা নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে না। নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিই ইভিএম ব্যবহার করতে চায়, তাহলে হয় জাতীয় নির্বাচনের আগে, নয়তো পরে এটি ব্যবহার করবে। সবাই যেহেতু মানা করছে, তারপরও নির্বাচন কমিশন কেন এটি ব্যবহার করতে চাইছে, তা আমার বোধগম্য নয়।
চলমান রাজনৈতিক সংকটে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের কোন পথে অগ্রসর হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সাখাওয়াত হোসেন: এখন থেকেই সব কিছু নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। যে আইনগুলো আছে সেগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা উচিত। একজন রেলওয়ের উদ্বোধন করছে, অন্যরা রাস্তা-ঘাট অবরোধ করে হইহুল্লোর ও মিছিল করে মনোনয়ন নিচ্ছে, যে যার মতো প্রচারণা চালাচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধিতে এগুলোর উল্লেখ নেই, কিন্তু নির্বাচন কমিশন তো এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি এখন থেকেই এগুলো ঠিক না করতে পারে, পরবর্তীতে তো আরও পারবে না।