ইকতেদার আহমেদ : বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী বিগত ৫২ বছর জাতীয় সংসদের ১১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, দশম ও ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, দশম ও ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়- এই সাত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে একটি সরকারের মেয়াদ অবসান-পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কী পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি মীমাংসিত বিষয়। আমাদের দেশে মীমাংসিত হওয়ার প্রয়াস নেয়া হলেও মীমাংসিত হলো না কেন, এর উত্তর খুঁজতে গেলে যে চিত্র পাওয়া যায় তা হলো- ১৯৯১ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বিজিত দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
মূলত অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ অবসান-পরবর্তী ২০০৬ সালের শেষে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ অকার্যকরতার পেছনে ছিল সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী। চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়স না বাড়ানো হলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ অনেক সীমিত হয়ে আসত।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আদালতের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির তীব্র আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নিয়ন্ত্রণাধীন ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হলে রাজনৈতিক বিষয় আদালতে মীমাংসিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়। ইতঃপূর্বে ১৯৭৪ সালে সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর করতে সংবিধান সংশোধন করা হলে সে সংশোধনী বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলা দায়ের করা হয়। বাহাত্তরের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারসমূহ বহাল করতে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের নিকট মামলা রুজুর অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত সম্পাদিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি আদালতে নিয়ে আসা হলে তা মুজিব সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি করে এবং সেটি অনুধাবন করেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী প্রণয়নের সময় শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের তৃতীয় ভাগে প্রদত্ত অধিকারসমূহ বহাল করতে ৪৪ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন-পূর্বক সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়েরের অধিকার ক্ষুণ্ন করে সাংবিধানিক আদালত, ট্রাইব্যুনাল অথবা কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীতে ওই বিধানটি রহিত করে এ বিষয়ে বাহাত্তরের সংবিধানে বর্ণিত ৪৪ অনুচ্ছেদের বিধান পুনঃপ্রবর্তিত হলেও পরবর্তীতে এ বিষয়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল-সংক্রান্ত রায়ে কোনো ধরনের আলোকপাত করা হয়নি।
সংবিধানে যদিও বলা হয়েছে- সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিল হবে কিন্তু কোন আদালত কী পদ্ধতিতে সে আইন বাতিল করবেন, সে বিষয়ে সংবিধান নিশ্চুপ। তা ছাড়া সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত একজন ব্যক্তির আইন দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন কার্যের প্রতিকার চাওয়ার যে অধিকার দেয়া হয়েছে তা সংসদ প্রণীত আইনকে একজন ব্যক্তির কার্য হিসেবে আকৃষ্ট করে কি না ভেবে দেখা প্রয়োজন।
সংবিধানে সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপনের অধিকার দেয়া হয়নি। সংসদ কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন সংসদের কার্যধারার মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পায়। তাই স্বভাবত প্রশ্ন উঠতে পারে, সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতা সম্পর্কিত আদালতে উত্থাপিত প্রশ্ন সংসদের সার্বভৌমত্বের সাথে সাংঘর্ষিক কি না? এর পাশাপাশি যে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন তা হলো- উচ্চ আদালতের একজন বিচারক বিচারকের সাংবিধানিক পদে নিয়োগ লাভ-পরবর্তী শপথবাক্য উচ্চারণপূর্বক ঘোষণা করেন, তিনি বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিধান করবেন। তাই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, উচ্চ আদালতের একজন বিচারক শপথগ্রহণ করাকালীন সংবিধান ও দেশের প্রচলিত যেকোনো আইন যে অবস্থায় ছিল তিনি তা থেকে ভিন্নধর্মী কোনো অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন কি না বা সংবিধানের কোনো অংশ বা কোনো আইন বাতিল করতে পারেন কি না?
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল-পরবর্তী সংবিধানের বর্তমান যে অবস্থান তাতে প্রতীয়মান হয়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী তাদের উত্তরাধিকারীরা কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন। তা ছাড়া বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সংসদ সদস্যদের অব্যবহিত-পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী বা অপর কোনো মন্ত্রী নিয়োগের প্রশ্ন দেখা দিলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার অব্যবহিত-পূর্বে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন তাদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়েছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ে মন্ত্রিসভা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে স্বল্প সংখ্যক সদস্য নিয়ে শুধু সরকারের দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে এবং কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। আমাদের সংবিধানে একজন প্রধানমন্ত্রী যে ক্ষমতা ভোগ করেন তা রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার একজন রাষ্ট্রপতির সমরূপ। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে দলীয় ও সরকারপ্রধান হওয়ায় তার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির চেয়ে অধিক। তা ছাড়া একাদিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি সাংবিধানিকভাবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না, যদিও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। সংবিধানের বর্তমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় দলীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা নিজ নিজ পদে বহাল থাকায় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট এবং অতীত অভিজ্ঞতায় বলা যায়- এ ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হচ্ছে- তাদের অধীনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনসহ অন্যান্য সংসদ সদস্যের উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো নিরপেক্ষ হয়েছে, তাই তাদের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে না। কিন্তু এ বিষয়ে দেশবাসীর প্রশ্ন- দলীয় সরকারের অধীনে বর্ণিত নির্বাচনগুলোর জয়-পরাজয়ের সাথে সরকার পরিবর্তনের প্রশ্ন জড়িত ছিল না যা জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রবলভাবে জড়িত। এ বাস্তবতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বলতে গেলে একেবারে অনড়। অপর দিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড়। তা ছাড়া বর্ণিত নির্বাচনগুলোর বেশির ভাগ যে নানান অনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল-পরবর্তী যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর অবস্থান দু’টি ভিন্ন মেরুতে। প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচন-পূর্ববর্তী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে রূপরেখা দিয়েছিলেন তাতে দেখা যায়- ১১ সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিজে থাকবেন এবং মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যের পাঁচজন সরকারি দলের ও অপর পাঁচজন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের মধ্য থেকে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী নেয়া হবে। অপর দিকে, প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন যে রূপরেখা দিয়েছিলেন তাতে তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত ব্যক্তি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন এবং ১০ উপদেষ্টা ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে নেয়া হবে যার পাঁচজন সরকারি দল ও অপর পাঁচজন বিরোধী দলের সুপারিশে নিয়োগ লাভ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত রূপরেখা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, সমরূপ রূপরেখা ১৯৯৫ সালে সাবেক কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল স্যার নিনিয়ান ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল কিন্তু তখন তা তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবে দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে পারেন, যে রূপরেখা আপনার কাছে ১৯৯৫ সালে গ্রহণযোগ্য হয়নি সেই রূপরেখা ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন-পূর্ববতী কী করে একই প্রশ্নে বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? রূপরেখাটির বিষয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর যে অবস্থান তা হলো- পরিস্থিতি অনুকূলে থাকাবস্থায় গ্রহণযোগ্য আর প্রতিকূলে থাকাবস্থায় অগ্রহণযোগ্য।
প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন-পূর্ববতী রূপরেখা ১৯৯৬ সালে কার্যকর না হওয়ায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার জন্ম। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর জাতির সামনে বর্তমানে সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দল উত্থাপিত যে দু’টি রূপরেখা রয়েছে উভয়টির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নিরপেক্ষ নির্বাচন যে নিশ্চিত করতে পারবে না; সে বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তাই উভয় রূপরেখা বাস্তবায়নযোগ্য না হলেও তা আলোচনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এ আলোচনার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নটির স্থায়ী সমাধান আবশ্যক। উভয় রূপরেখা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, মধ্যবর্তী যেকোনো অবস্থায় উপনীত হতে হলে সংবিধান সংশোধনীর আবশ্যকতা দেখা দেবে। কিন্তু সে সংবিধান সংশোধন অবশ্যই একটি নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নয়।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দৃঢ়, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তির সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে সে নির্বাচন কমিশন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক অন্তর্বর্তী সরকারের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু অনির্বাচিত ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে বর্তমান যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে তাকে বর্তমান প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং অপরাপর সমমনা দল ইতোমধ্যে মেরুদণ্ডহীন, আজ্ঞাবহ, অথর্ব ও অনভিজ্ঞ আখ্যা দিয়েছে। এ বিষয়ে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর অভিমত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং অপরাপর সমমনা দলের অনুরূপ। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে অক্ষম সে প্রশ্নে বিতর্কের সুযোগ খুব কম।
আমরা নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হবে যা গণতান্ত্রিকভাবে পথচলার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই আমাদের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রীসহ দু’টি দলের অন্যান্য নেতা এবং অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতাদের দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে এমন একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে উপনীত হতে হবে, যা নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থায়ী সমাধানের পথ নিশ্চিত করবে। সে সমাধান বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে সংবিধান সংশোধন ছাড়া সম্ভব নয়। তবে এর জন্য চাই সঙ্কীর্ণ দলীয় মনোবৃত্তি থেকে উত্তরণ। আর এ উত্তরণই বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক