- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১৩ মে ২০২৩, ১৮:৪৩, আপডেট: ১৩ মে ২০২৩, ১৯:১৪
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নিরাপদ প্রস্থান চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। দেশে শুধু প্রাকৃতিক ঝড়ই আসছে না, রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে।’
শনিবার (১৩ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পিটিয়ে মানুষও হত্যা করেছিল এই আওয়ামী লীগ।’
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের দিকে শুধু প্রাকৃতিক ঝড়ই বয়ে আসছে না, রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে। আপনারা মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে শিখুন। যদি সেভ এক্সিট চান, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দুর্নীতির মাধ্যমে শুধু নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করছে। মানুষের জন্য কোনোকিছু করেনি এ সরকার। আমাদের পকেটের টাকা কেটে নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন। উনারা কি দেশের জনগণের জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন? না। উনারা নিজেদের জন্য, আর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক ও আধুনিক বাংলাদেশে গড়ার রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে মামলা দিয়েছে। কেন মামলা দিয়েছে? জনগণের চাওয়াকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। কোনো লাভ হবে না। আগামী দিনে আমাদের বিজয় অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আজ দেশে সুশাসনের অভাব। বিচার কার্যক্রম স্বাধীনতা নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমান সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। তারা দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করে ক্ষমতায় আছে। মানুষ তার ভোটের অধিকার চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা দিতে পারেনি, পারবে না। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতিক যে তিনটা দেশে সফরে গিয়েছিলেন সবাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ দেশের মানুষ এই সরকারের বিদায় চায়।’
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্র নেই। কিন্তু এর জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। এ সরকারের হাতে কোনোদিন গণতন্ত্র নিরাপদ ছিল না, তারা কোনোদিন গণতন্ত্র চায় না এ দেশে। সরকার দেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। এখানে বাকস্বাধীনতা নেই। এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেন জেলে? তার একটাই কারণ- তার জনপ্রিয়তা। ভোট চুরির প্রকল্প হিসেবে তাকে জেলে নিয়েছে এই বর্তমান সরকার। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন হচ্ছে ভোট চুরির আরেকটা অংশ। সরকারের দেশ-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা নেই। সরকার কূটনীতিকদের অপব্যবহার করছে। ব্রিটিশ ফরেন অফিসকে তারা অনুরোধ করেছে প্রধানমন্ত্রী সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হিসেবে প্রচারণার জন্য। কিন্তু ফরেন অফিস তা মানেনি।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না কিন্তু অন্য পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু ভিন্ন পথ কি তা বিএনপি জানে না। বরং আওয়ামী লীগ ভিন্ন পথ অবলম্বন করে ফের ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিছু হলেই সংবিধানের দোহাই দেয় আওয়ামী লীগ। সংবিধান কি? পাকিস্তান সংবিধানের দোহাই দিয়েছিল। স্বৈরশাসক এরশাদও সংবিধানের দোহাই দিয়েছিল। কিন্তু কেউ সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আন্দোলন, এ দেশের মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে অন্য দিকে নিয়ে নেয়ার জন্য জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকারের ওপর বিদেশী চাপ আছে। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের কাছে ফের সহযোগিতা চাচ্ছে। সরকার ভাবছে ভারতকে কি দেয়ার বাকি আছে। সেটুকু দিয়ে তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কতটুকু দেউলিয়া এই সরকার?’
বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘বর্তমান দানবীয় সরকার দেশটাকে গিলে খাচ্ছে, তাদের কি আর ক্ষমতায় রাখা যায়? না। যে উন্নয়নের নামে টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তাকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। দেশে নিরব দুর্ভিক্ষের মধ্যে, আর তারা সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত। এরা আবার ক্ষমতায় আসলে আর দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। আমরা এবার তা হতে দিবো না। আপনারা প্রস্তুত হোন।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাবা উচিত, তাদের কেউ চায় না। এদেরকে জনগণের চোখের ভাষা বোঝা উচিত। বর্তমান অবৈধ সরকারকে বিদায় না করে আমরা এবার ঘরে ফিরবো না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।