
by a New Yorker on Facebook
ম্যানহাটনের মিডটাউনে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে সমাহিত করা হয়েছে নিউজার্সির লোরেল গ্রোভ কবরস্থানে। একটি পুরনো, শান্ত, ইতিহাসঘেরা প্রান্তর। যেখানে ১৮০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন। এ বিশাল কবরস্থানের ভেতর বিভিন্ন কমিউনিটি নিজেদের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট জমি কিনে রেখেছে। যেন আপন আপন সংস্কৃতির মানুষদের সমাহিত করা যায় পরিচিত পরিবেশে। বাংলাদেশি মুসলমানদেরও তেমন কিছু জায়গা আছে—সেখানে, এক শান্ত অথচ গর্বিত নিঃশ্বাসে, চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন সময়ের বীর, আমাদের দিদারুল ইসলাম।
প্রতিদিনই এখানে দেখা যায় স্বদেশি মানুষদের—কারো পিতামাতার কবর, কারো ভাই-বোন কিংবা প্রিয়জন। কেউ আসে কোরআন পড়তে, কেউ শুধু দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। আমি নিজেও যাই এই কবরস্থানে বহু বছর ধরে। ২০১২ সালে মা’কে এখানেই সমাহিত করেছিলাম। সেই থেকে লোরেল গ্রোভ আমার ব্যক্তিগত ইতিহাসের অংশ। মায়ের কবরের দুই পাশে দুটি গাছ লাগিয়েছিলাম—একটি আমি, একটি আমার ছোট ভাই। আশ্চর্যজনকভাবে, এত বছর পরও গাছ দুটি বেঁচে আছে। কত গাছ কাটা পড়েছে কবরস্থানের নিয়মে, কিন্তু এ দুটি গাছ রয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ হয়তো মায়া দেখেছে, হয়তো অনুভব করেছে আমাদের নিরব ভালোবাসার উপস্থিতি। অথচ আমরা আলাদা করে কিছু বলিনি, কোন অনুরোধও করিনি।
এখন, আরেকটি কবর আমাকে টানবে—দিদারুল ইসলামের কবর। যিনি শুধু এক পুলিশ অফিসার ছিলেন না – আত্মত্যাগের প্রতীক। জীবন দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন, সম্মান এনে দিয়েছেন পরিবারকে, কমিউনিটিকে, প্রবাসে বাংলাদেশিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর এই আত্মোৎসর্গ আমাদের কাছে ঋণ রেখে গেলো—এই সম্মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
আমি মায়ের কবরের পাশে দাঁড়াই প্রায়ই। এখন থেকে দিদারুলের কবরেও দাঁড়াবো। প্রতিবার, নিরব শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়ে যাবো তাঁকে। কোনো শব্দে নয়, অনুভবে। কারণ, আমাদের গল্পগুলো—কষ্ট, ত্যাগ আর ভালোবাসার—এমন কবরস্থানেই জমে থাকে, মাটি হয়ে, স্মৃতি হয়ে।
দিদারুল ইসলাম চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন এক দীপ্ত মানচিত্র—যেখানে কর্তব্য, সাহস আর আত্মত্যাগের ভাষা স্পষ্ট। সেই মানচিত্র ধরে আমরা পথ চলবো। এমন ক্ষণজন্মা বীর সন্তানরা শুধু পরিবারের নয়, আমাদের সবার।