নারীর সতীত্ব এবং ইসির নিরপেক্ষতা পরীক্ষা
========================
উপরের দুটি পরীক্ষাই খুব জটিল । কারণ অনুকূল পরিবেশে এই পরীক্ষায় উতরে গেলেও অন্য প্রতিকূল পরিবেশে এই সতী সাধবী অবস্থা বজায় থাকবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই ।
প্রথম আলোর সোহরাব হাসানরা এই ধরণের পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছেন । তিনি এমপি লিটন এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আসন দুটিতে উপনির্বাচন দিয়ে এবং তাতে বিএনপিকে অংশগ্রহন করিয়ে সিইসির নিরপেক্ষতা প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছেন । জনতার মঞ্চে অংশ নেয়া তোফায়েল ক্যাডারের নিরপেক্ষতা প্রমাণের অতি চমৎকার একটি প্রস্তাবনা ।
অর্থাৎ একজন উঠতি বয়সের যুবতিকে সত্তর ও আশি বছরের বৃদ্ধের সাথে ছেড়ে দিয়ে মেয়েটি কতটুকু সতী সাধবী তা যাচাই করা । এই যুবতি জানে এই সতীত্বের পরীক্ষায় পাশ করলে কিছুদিন পরে তাকে চব্বিশ পঁচিশ বছরের সুদর্শন ও সুগঠিত এক যুবকের সঙ্গে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেয়া হবে এবং এরপর তারই সাথে সুখে শান্তিতে ঘর করার সুযোগ সৃষ্টি হবে । মনে হচ্ছে এদেশে ভাত খেয়ে বড় হয়েছেন শুধু প্রথম আলোর কয়েকজন সোহরাব হাসান । আর দেশের বাদবাকিরা ঘাস খেয়ে বড় হয়েছেন ।
পত্রিকাটি এবং তাদের গ্রুপ অব সুশীল কোম্পানীজ এখন অনেক ভালো মানুষ হয়ে পড়েছে । প্রথম আলোদের এই ভালো মানুষ ভাবটি এবং যৌক্তিক অবস্থানটি যখন এম এ আজিজ সিইসি নির্বাচিত হয়েছিলেন , তখন দেখা যায় নি ।
গতকাল সুলতানা কামাল , ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত সহ ছয়জন সুশীলের ছবি ও বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন । তারা সকলেই সিইসি নুরুল হুদাকে তার নিরপেক্ষতা প্রমাণের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ।
অথচ এই সুলতানা কামাল এবং সাখাওয়াতরাই ২০০৬ সালে বিচারপতি এম এ আজিজকে নিয়ে কী কান্ডটাই না করেছেন । তাদের পত্রিকার পাতায় পাতায় সেসব মজুদ আছে । যে কোনও গবেষক তুলনা করে দেখতে পারেন । তখনও এটি সাংবিধানিক পদ ছিল। তারপরেও তাকে নিয়ে এই প্রথম আলো গং যে সব কার্টুন একেছে , মন্তব্য করেছে তা পাঠকদের স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়ার কথা নয় ।
বিচারপতি এম এ আজিজের দীর্ঘ পেশাগত জীবনে কখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোন অসততার অভিযোগ উঠেনি । তিনি কোনদিন কোন হল সংসদের একটি দলের অফিস বিয়ারার ছিলেন না । তিনি কখনই সরকারের কর্মচারী হয়ে সেই সরকারের বিরুদ্ধে জনতার মঞ্চে উঠেন নি । সবচেয়ে বড় কথা হলো , এমএ আজিজও তখন পর্যন্ত তার নিরপেক্ষতা প্রমাণের সুযোগ পান নি । তারপরেও প্রথম আলো গ্রুপ তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিলেন । অথচ এদের মুখেই আজ উল্টো গীত । হায় সেলুকাস ! কি বিচিত্র এদেশের সুশীল সমাজ !
এখন কয়েকজন ‘ বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবী ‘ আরো রহস্যময় ভূমিকায় নেমে পড়েছেন কিংবা তাদের নামানো হয়েছে । যে প্রপাগান্ডাটি আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী কিংবা মুনতাসির মামুনদের পক্ষে করা সম্ভব হবে না তা পোক্ত করানো হবে প্রফেসর জাফর ইকবালের মত কাউকে দিয়ে । আবার যে কাজটি জাফর ইকবালদের দিয়ে সম্ভব হবে না তা করানো হবে প্রথম আলোর নিরপেক্ষ কলামিস্ট সোহরাব হাসানদের মত কাউকে ব্যবহার করে । কোনও মিশন সোহরাব হাসানদের পক্ষেও জটিল হয়ে পড়লে শেষে আনা হবে বিএনপি পন্থী হিসাবে আগেই স্ট্যাম্প মারা প্রফেসর এমাজ উদ্দীন কিংবা জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের মত কাউকে ।
আওয়ামী লীগের জন্যে এযাবৎ অনেক কাজ করলেও আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী থেকে সোহরাব হাসান পর্যন্ত কাউকে তাদের নামের আগে আওয়ামী পন্থী বুদ্ধিজীবী বিশেষণ দেয়া হয় না । এই ধরণের বিশেষণ আওয়ামী পন্থী বুদ্ধিজীবীদের নামের আগে ব্যবহার করলে তারা প্রত্যেকেই সেটার প্রতিবাদ করেন । কিন্তু বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবীরা বিষয়টি নিয়ে কোনও বড় আপত্তি করেছেন তা কোথাও চোখে পড়ে নি । ড. আসিফ নজরুলকে টেনে বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবী বানানোয় তিনি একবার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রফেসর এমাজ উদ্দীন জানিয়েছেন , প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত সিইসিকে সকল দলের মেনে নেয়া উচিত কিংবা মানতে হবে । এটা নিয়ে আওয়ামী মিডিয়া সঙ্গত কারণেই উৎফুল্ল হয়ে পড়েছে । জাফরুল্লাহ চৌধুরী এটাকে মন্দের ভালো হিসাবে আগে ভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন । সিইসি হিসাবে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান না আসাতেই বিএনপি পন্থী এই বুদ্ধিজীবী আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেছেন । মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান এর পরেও যে আওয়ামীলীগের অনেক মোল্লা থাকতে পারে , তিনি বোধ হয় সেটা ধরতে পারেন নি ।
এই সব ‘ বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবী’ গণ একবারের জন্যেও বিএনপির জন্যে অত্যন্ত দরকারী বিচারপতি এম এ আজিজের বিষয়টি উল্লেখ করছেন না । বিচারপতি এম এ আজিজকেও তো তখনকার মহামান্য প্রেসিডেন্টই নিয়োগ দিয়েছিলেন । তবে কেন তাকে তাঁর নিরপেক্ষতা প্রমাণের সুযোগ দেয়া হয় নি । তবে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীগণ তখন এই কিছিমের সার্চ কমিটি করে সুশীল সমাজকে নিয়ে লেফ রাইট করার এই বুদ্ধিটি বাতলাতে ভুলে গিয়েছিলেন ।
এই দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই । শুধু অনুরোধ করব , দেশ ও জাতির কঠিন সময়ে আপনাদের এই ধরণের বক্তব্য গুলি ফ্যাসিবাদ কিংবা একদলীয় শাসনকে প্রলম্বিত করছে কি না তা একটু পরখ করে দেখুন ।