নাবিক-ক্রুসহ জাহাজ দস্যুঘাঁটিতে

নাবিক-ক্রুসহ জাহাজ দস্যুঘাঁটিতে

জিম্মি ২৩ নাবিক-ক্রুসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে নিজ আস্তানায় নিয়ে গেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাহাজটি সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূল থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে তারা। লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) থেকে তথ্য নিয়ে জাহাজটির এ অবস্থানের তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এদিকে জিম্মি থাকা এক নাবিক গতকাল সকাল ৮টার দিকে জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সুস্থ আছেন, জলদস্যুরা সেহরি ও ইফতার করার সুযোগ দিচ্ছে।

জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ। তাদের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করার কথা আমরাও জেনেছি। তবে দস্যুদের কেউ এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। নাবিক সবাই নিরাপদে আছেন। তাদের মুক্ত করার ব্যাপারে কাজ করছি আমরা।’

আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখছে ইইউ সামরিক জাহাজ

এদিকে একটি ইউরোপীয় জাহাজ থেকে আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স-ইইউএনএভিএফওআর। তাদের এই কার্যক্রম অপারেশন আটলান্টা হিসেবে পরিচিত। পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে জলদস্যুতা নির্মূলে কাজ করে যাওয়া এই ইউরোপীয় নৌ নিরাপত্তা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অপারেশন আটলান্টার অংশ হিসেবে তারা সোমালিয়া উপকূলে একটি জাহাজ মোতায়েন করেছে। ওই জাহাজটি বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে।

ইইউএনএভিএফওআর তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখার পাশাপাশি ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য অপারেশন আটলান্টার পক্ষ থেকে সোমালিয়া ও বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় নৌবাহিনীসহ সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা। বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ১১০০ কিলোমিটার দূরে এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিক-ক্রুকে জিম্মির খবর মঙ্গলবার প্রথম জানতে পারে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী।

দস্যুদের আস্তানায় এমভি আবদুল্লাহ

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জাহাজটি গারাকাদ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখা হয়েছে। উপকূল থেকে জাহাজে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে।’ অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দস্যুদের কেউ মালিকপক্ষের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেনি।’

শুধু এমভি আবদুল্লাহ নয়; আরও অনেক জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে অতীতে জিম্মি হয়েছিলেন। তাদের কেউ ২০ মাস পর, কেউ ১০ মাস পর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান। ২০১২ সালে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ২০ মাসেরও বেশি সময় জিম্মি থাকার পর বাংলাদেশি সাত নাবিক মুক্তি পান। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ভারত মহাসাগর থেকে মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এম ভি আলবেডোকে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এ সময় তারা জাহাজটিতে থাকা ২২ কর্মকর্তাকে জিম্মি করে। এই ২২ জনের মধ্যে ছিলেন ৭ জন বাংলাদেশি, ৭ জন পাকিস্তানি, ৬ জন শ্রীলঙ্কান এবং একজন করে ভারতীয় ও ইরানি নাগরিক। তাদের সবাই মুক্তিপণ দিয়ে দীর্ঘ সময় পর মুক্ত হয়েছিলেন।

কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় ১০০ দিন পর। জিম্মি হওয়ার আট মাস পরও সোমালীয় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনার সাক্ষী আছেন দুই বাংলাদেশি নাবিক। তাদের একজন জাফর ইকবাল। অন্যজন নাবিক গিয়াসউদ্দিন আজম খান। তারা জিম্মি হওয়া ‘এমভি মারিয়া মার্গারেট’ নামের জার্মানির পতাকাবাহী জাহাজে কমর্রত ছিলেন।

samakal