নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আবারো বিস্ফোরণের শব্দ, আতঙ্কে স্থানীয়রা

এবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত পিলার ৪৮ নম্বর চেলিরটাল ও ৫১ নম্বর পিলার সংলগ্ন পাইনছড়ি সীমান্তের ওপার থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।

গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় চেলিরটালের বিপরীতে আট রাউন্ড, ৬টায় একই এলাকায় দুই রাউন্ড ভারী অস্ত্র বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।

এর আগের দিন পাইনছড়ির বিপরীতে ২০ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।

দীর্ঘ দুই মাস পর সীমান্তের এই দুই পয়েন্টে নতুন করে গোলাগুলির আওয়াজে স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, ছুরত আলম ও জসিম উদ্দিন জানান, ঈদের ছুটিতে তারা বাড়ি এসেছেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় গোলাগুলির শব্দ শুনে তারা কিছুটা ভয় পেলেও পরে এলাকার লোকজন অভয় দিলে তাদের ভয় কেটে যায়

দ্বিতীয় ঘটনার বিষয়ে ফুলতলী সীমান্ত সড়কের পথচারী ছুরত আলম ও জসিম উদ্দিন বলেন, তারা সীমান্ত সড়কে বেড়াতে যান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পাঁচ মিনিটে আট রাউন্ড গুলির শব্দ শোনেন। এ কারণে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে ফিরে আসেন।

অপর বাসিন্দা ছৈয়দ নুর ও ফরিদুল আলম জানান, এ সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবার হতো। গত ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ পর থেকে এ পয়েন্টে চোরাকারবার বন্ধ হয়ে যায়। ওপারে রাখাইনে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সাথে আরএসও সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে মতদ্বৈততার কারণে বর্তমানে উভয়পক্ষ মুখোমুখী অবস্থানে। এর ফলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।

সূত্র জানায়, সীমান্তে জান্তা বিরোধী সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি আর আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অব অর্গানাইজেশন) এর কমান্ডাররা পরস্পরকে চোরাগোপ্তা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার কারণে মঙ্গলবার থেকে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে চলছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত জুড়ে বিজিবি সতর্কাবস্থানে রয়েছে। তারা নিয়মিত টহলও দিচ্ছে। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জানতে ১১-বিজিবির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। ফলে বিজিবির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই তীব্রতর হওয়ায় রোহিঙ্গা নাগরিকদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশ ত্যাগের জন্য সীমান্তে জড়ো হয়েছেন বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। তবে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।

জানা যায়, নাফ নদীর ওপারে মংডু শহরের নিকটবর্তী খায়েনখালী খালসহ কয়েকটি এলাকার আশপাশে রোহিঙ্গারা জড়ো হয়েছে। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা সাড়ে তিন মাস ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সাথে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দু’টি শহরসহ বিজিপির ১৪টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডু শহর দখলের জন্য লড়ছে তারা।

nayadiganta

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here