নতুন ব্যবস্থায় নতুন বাংলাদেশ চাই

logo

খালিদ সাইফুল্লাহ
মুদ্রিত সংস্করণ
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশের জনসমুদ্রে হাত উঁচিয়ে অভিনন্দন জানান দলের আমির ডা: শফিকুর রহমান (ইনসেটে)
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশের জনসমুদ্রে হাত উঁচিয়ে অভিনন্দন জানান দলের আমির ডা: শফিকুর রহমান (ইনসেটে) |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশটা কেমন হবে? আমি বলি আরেকটা লড়াই হবে ইনশাআল্লাহ। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইনশাআল্লাহ। এই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার জন্য যা দরকার, আমরা তারুণ্য এবং যৌবনের শক্তিকে একত্র করে সেই লড়াইয়েও যুক্ত হবো এবং বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

গতকাল রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত আমির শুরুতেই জনগণের উদ্দেশে দুইবার সালাম দেন। এর পর তিনি উপস্থিত অতিথি, নেতাকর্মী, জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদদের পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। জামায়াত আমির বলেন, স্বৈরাচারের কঠিন অন্ধকার যুগের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যারা তিলে তিলে দুনিয়া থেকে নির্যাতিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন, যারা লড়াই করে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। যাদের ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, আমরা তাদের সবার কাছে গভীরভাবে ঋণী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব যত দিন থাকবে আল্লাহ যেন তাদের ঋণ পরিশোধ করার শক্তিটাও তত দিন আমাদেরকে দান করেন। এর পর তিনি সমাবেশকে কেন্দ্র করে তিনজন ইন্তেকাল করায় শোক প্রকাশ করে তাদের জন্য দোয়া করেন। জামায়াত আমির বলেন, এতগুলো মানুষ এমনি এমনি জীবন দেয় নাই। জীবন দিয়েছে জাতির মুক্তির জন্য। যদি পুরনো সব কিছুই টিকে থাকবে তা হলে কেন তারা জীবন দিয়েছিল? যারা ওই পচা ব্যবস্থাপনায় বাংল

তিনি বলেন, শহীদ আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দাঁড়াতো, এ জাতির মুক্তির জন্য যদি বুকে গুলি লুফে না নিতো; হয়তোবা আজকের এই বাংলাদেশটা আমরা দেখতাম না। ইতোমধ্যে হয়তো আরো অনেক মানুষের জীবন ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত। চব্বিশে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধটা যদি না হতো তা হলে আজকে যারা বিভিন্ন ধরনের কথা এবং দাবি-দাওয়া পেশ করছেন তারা তখন কোথায় থাকতেন?

জামায়াত আমির বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালার এই নেয়ামত পাওয়া, তাদেরকে যেন অবজ্ঞা-অবহেলা না করি। অন্য দলকে যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি। অরাজনৈতিক ভাষায় আমরা যেন কথা না বলি। যদি এগুলো আমরা পরিহার করতে না পারি তা হলে বুঝতে হবে ফ্যাসিবাদের রোগ আমাদের মধ্যে নতুন করে বাসা বেঁধেছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করে জাতীয় ঐক্যের বীজতলাটা আমরা সবাই মিলে এক সাথে তৈরি করবো ইনশাআল্লাহ।

এ সময় জামায়াত আমির অসুস্থ হয়ে মঞ্চে পড়ে যান। সবাই ধরাধরি করে উঠালে তিনি আবার বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করি, তিনি আমাকে আবার কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে তিনি আবারো কথা বলার সময় দ্বিতীয় বারের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর তিনি মঞ্চে বসেই বক্তৃতা করেন। ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন, তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করবো ইনশাআল্লাহ। এ লড়াই বন্ধ হবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর ইচ্ছা ও জনগণের ভালোবাসায় বাংলাদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তা হলে মালিক হবে না সেবক হবে, ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি আগামীতে সরকার গঠন করে তা হলে কোনো এমপি ও মন্ত্রী আগামীতে সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো এমপি বা মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বে না। তারা নিজেদের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না। কোনো এমপি বা মন্ত্রী যদি তার নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে তারা তার প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন। চাঁদা আমরা নিবো না, দুর্নীতি আমরা করবো না

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমি এখানে জামায়াতের আমির হিসেবে নয়, ১৮ কোটি মানুষের একজন প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি। শিশুদের বন্ধু, যুবকদের ভাই, প্রবীণদের সহযোদ্ধা হয়ে এসেছি, এই জাতির মুক্তির প্রত্যয়ে। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশর কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর মুক্তির জন্য আমার লড়াই নয়। রাস্তার একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী, চা বাগানের একজন শ্রমিক, রক্ত পানি করা ঘাম ঝরানো রিকশা চালক ভাই, মাঠে-ময়দানে বাংলাদেশের মানুষের মুখে যারা এক মুঠো ভাত তুলে দিতে চায় আমার সেই কৃষক বন্ধুটি আমি তাদের হয়ে আজকে কথা বলতে এসেছি। আমি কোনো অভিজাত শ্রেণীর হয়ে কথা বলতে আসিনি।

তরুণ প্রজন্মকে বিশেষভাবে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তোমরা শুধু দর্শক হয়ে থাকবে না, এই দেশ গঠনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। এটা শুধু কোনো শ্রেণীর যুদ্ধ নয়, এটা চাষি, মজুর, ছাত্র, যুবক সব শ্রেণীর মানুষের যুদ্ধ।

জনগণের উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, এই লড়াই শুধু জামায়াতের নয়, এই লড়াই সবার। নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাইলে, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি চাইলে আসুন আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাই।

তিনি বলেন, আজীবন সবার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছি, জেল-জুলুমের পরোয়া করি নাই। আমার আফসোস ২৪ সালে জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হলো, আমি তাদের একজন হতে পারলাম না। আপনাদের কাছে দোয়া চাই, ইনসাফের ভিত্তিতে একটি দেশ গড়ে তোলার জন্য আগামীতে যে লড়াই হবে। আমার আল্লাহ যেন সেই লড়াইয়ে আমাকে একজন শহীদ হিসেবে কবুল করেন। জামায়াত আমির বলেন, আমাদের প্রিয় শহীদ নেতৃবৃন্দ, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে, শাপলা গণহত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সারা দেশের গণহত্যা, ২৪-এর গণহত্যা যারা করেছে তাদের সবার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে। এদের বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না করা পর্যন্ত পুরনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না। এতগুলো মানুষ কেন জীবন দিলো। যারা পচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে আবার ফেরত নিতে চান তাদেরকে আমরা বলি, জুলাই যুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছে আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন। যদি শক্তি থাকে ফেরত এনে দেন। কিন্তু আপনারা পারবেন না।

দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের উপস্থাপনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, জা

এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ১৪ বছর জালেম সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলাম। রাখে আল্লাহ মারে কে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, জুলাই আন্দোলনে নতুন করে স্বাধীন হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। আমার রায়ে সাতজন বিচারপতি আমাকে হত্যার আয়োজন করেছিল। ১০ জন ভাইকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। পাঁচজনকে সরাসরি হত্যা। যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাদের কী দোষ ছিল। তারা দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে চেয়েছিল। সরকার ইসলামী আন্দোলনকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। কোনো শক্তি আটকাতে পারেনি। শেখের বেটি কেন দেশ থেকে পালিয়েছে। মীর কাসেম আলী বিদেশ থেকে চলে এসেছিলেন। আর তারা পালিয়েছে বিদেশে। ৫৪ বছরে বাংলাদেশে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। নেতাদের হয়েছে। জনগণের হয়নি। আল্লাহর আইন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে। আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই। জামায়াতের দুইজন নেতা মন্ত্রী হয়ে সততার প্রমাণ দিয়েছেন।

জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ইসলাম যেখানে থাকে সেখানে শান্তি থাকে। যেখানে ইসলাম থাকে না সেখানে শান্তি থাকে না। সংসদে ইসলামী দল না থাকায় দেশের মানুষ শান্তিতে নেই, দুঃখকষ্টে আছে। এ জন্য আগামী সংসদে ইসলামপন্থীদের যেতে হবে। দেশে সুদ-ঘুষ চাঁদাবাজি চলবে না। ‘আগামীর বাংলাদেশ, চাঁদা চাইলে জীবন শেষ’। ‘ঘুষ চাইলে মারবেন ঘুষি, জনগণ হবে খুশি’।

হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ফ্যাসিস্টকে চিরবিদায় করেছি। সব দলমতকে বলবো ঐক্যবদ্ধ হোন। ঐক্যের বিকল্প নেই। বিচ্ছিন্নতা অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিস্টরা যদি কিছু করে ফেলে তার দায় দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। বক্তব্য শালীনতা বজায় রেখে বলতে হবে। ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। হেফাজতের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিস মানি না, মানবো না। ফিলিস্তিনের গাজায় তারা এত দিন কী করেছে? কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। কুরআন-বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াত কোনো সন্ত্রাসবাদকে পছন্দ করে না। ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। সেটা ধর্মীয় বা রাজনৈতিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জামায়াত রুখে দাঁড়াবে, লড়াই করবে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক। জামায়াত নতুন বাংলাদেশ চায়। পিআর পদ্ধতি ছাড়া নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। বিএনপিকে উদ্দেশ করে ডা: তাহের বলেন, বাইরে সভা করেন, সমাবেশ করেন। বলে বেড়ান সংস্কার মানি। অথচ ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে বসলে কিচ্ছু মানি না ভাব দেখায়। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশের জনগণ সংস্কার চেয়েছে। তারা এখনো সংস্কার চায়, সংস্কারের পরই নির্বাচনের পক্ষে দেশের জনগণ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল মনে করে, সংস্কার সবার জন্যই কল্যাণকর। কিন্তু যারা সংস্কার চান না, তাদের নিশ্চিয়ই বদমতলব আছে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ১৬ বছরে আমাদের নেতাকর্মীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে আজ তার বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণ হয়েছে। নেতাদের হত্যা, হাজার হাজার লোকদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে, গুম-খুন করা হয়েছে। কিন্তু জামায়াতকে থামিয়ে রাখা যায়নি। জুলাই আন্দোলনের পর আহত নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জামায়াত। জুলাই চেতনাকে ধারণ করে তরুণ প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ বলেন, জামায়াত আমাদের দাওয়াত দেয়ায় ধন্যবাদ জানাই। জামায়াত যে সাত দফা দিয়েছে তা দেশবাসীর জন্য মঙ্গলজনক। এজন্য আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি। জুলাই আন্দোলনের কারণে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাদের প্রতি কতৃজ্ঞতা। জামায়াত আমির বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু নওজওয়ানের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন। আবু সাঈদ, মুগ্ধরা জীবন দিয়েছে, যুবকদের রক্ত দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে নতুন বাংলাদেশ, ইসলামের বাংলাদেশ আমরা পাব ইনশাআল্লাহ।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, শুধু ক্ষমতার পালাবদলের জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। শুধু নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে হলে মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। যারা এ পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না তারা জাতির সাথে প্রতারণা করে। দেশে ধর্ম পালনে কোনো জুলুম করতে দেবো না। সব ধর্মের মানুষ সুখে শান্তিতে থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আওয়ামী লীগ সরকার যে খুন, গণহত্যা চালিয়েছে স্বৈরাচারদের যদি বিচার না করা হয় তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। জাতিসঙ্ঘের অফিস কোনো আলোচনা ছাড়াই হয়েছে। এটা সরকার পারে না। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষ আজ নতুন দিনের প্রত্যাশা করে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাই একসাথে কাজ করবে এ প্রত্যাশা করে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, নতুন করে দেশের মানুষ শান্তিতে বাঁচুক। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের বিচার হতে হবে। নির্বাচন সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। কেউ যেন আগের মতো গুণ্ডা মার্কা নির্বাচন করতে না পারে। দেশপ্রেমিক জনতার জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। এর কোনো বিকল্প নেই। আগামীতে দেশ হবে ইসলামের দেশ। মানবিক দেশ।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকায় জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হয়েছে। এখন ঐক্য থেকে সরে গেলে ক্ষতি হবে। শাসন ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন না করে নির্বাচনে দিকে হাঁটবেন না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। স্থানীয় সরকারে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। অবিলম্বে স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে দুর্ভোগ লাঘব করুন। ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদ নির্বাচন এ সরকারকে দিতে হবে। অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। না হলে আমরাই ঘোষণা করব।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই মাসের মধ্যেই অভ্যুত্থানের শহীদ-গাজীদের স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ছাড়া একটি দেশ কখনোই আগাতে পারে না। গত ১৬ বছরে শিক্ষাঙ্গনকে অস্ত্র ও মাদকের কারখানা বানানো হয়েছে। অথচ জুলাই পরবর্তীতে এ সরকার শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন করেনি। এটি লজ্জার। অবিলম্বে শিক্ষা সংস্কারে কমিশন গঠন করতে হবে। শিবির সভাপতি বলেন, প্রয়োজনে আবার জুলাই ফিরে আসবে। কিন্তু কোনো ফ্যাসিবাদের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দেবো না। এ সময় সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দ্রুত সব ক্যাম্পাসে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের আয়োজন করার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশে আবারো মুজিববাদী-ভারতপন্থী শক্তি সক্রিয় হচ্ছে। এ দেশে আর কোনো পন্থীর জায়গা হবে না। দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের কোনো জায়গা হবে না। সারজিস বলেন, অভ্যুত্থানের এক জুলাই পেরিয়ে আমরা আরেক জুলাইয়ে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মুজিববাদীদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। গোপালগঞ্জে এখনো মুজিববাদীরা আস্তানা গেড়ে রয়েছে। শুধু আইনিভাবে এ মুজিববাদের মোকাবেলা করা যাবে না। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এ মুজিববাদের কোমর ভেঙে দিতে হবে। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু এই মুজিববাদের প্রশ্নে অভ্যুত্থানের সব সৈনিককে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, হাজারের অধিক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সে স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা সুশীল সরকারের ভূমিকা চাই না। আমরা তাদের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের ভূমিকায় দেখতে চাই। বাংলাদেশে খুনি হাসিনার বিচার হতে হবে। দেশের বিচার বিভাগকে কোনো দলের বিচার বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্ষমতার তোষামোদ বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই না। আমাদের নতুন সংবিধান ও গ

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, হাসিনা ২৮ অক্টোবর গণহত্যা চালিয়েছে। পিলখানায় গণহত্যা করেছে। শাপলা চত্বরে আলেমদের ওপর গণহত্যা করেছে। জামায়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। গণহত্যার বিচার করতে হবে। কোনো তামাশা জনগণ মেনে নেবে না। এক বছরেও কোনো বিচার দৃশ্যমান হয়নি। নির্বাচনের আগে বিচার শেষ করতে হবে। সরকারের ভেতরে বাইরে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন আর ফিরে আসতে দেয়া হবে না। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে দেবো না।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ৫৪ বছরে ব্যর্থতার মূল কারণ ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ব্রিটিশ পদ্ধতির বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিকল্প নেই। দেশে দুই- তৃতীয়াংশের বেশি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে রয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে সংবিধানে এ পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় রাজপথে এ দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।

নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার বলেন, মানুষ ফ্যাসিবাদীদের বিতাড়িত করেছে। আবার কোনো ফ্যাসিবাদ দেখতে চায় না। প্রয়োজনে আবারো আন্দোলন হবে। আমরা মুসলমান। আমরা বাংলাদেশী। তিনি বলেন, চূড়ান্ত বিচার হওয়ার আগে দেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না। জাতিসঙ্ঘের তথাকথিত মানবাধিকারের অফিস বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে সব ইসলামী দল ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র হলো ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত আন্দোলনের স্বীকৃতি। কিন্তু একটি দল ঘোষণাপত্রে স¦াক্ষর নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে। জুলাই সনদে অবশ্যই স্বাক্ষর করতে হবে। একটি-দু’টি দলের জন্য থেমে থাকবে না।

জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন বলেন, আমি আর ডামির নির্বাচন দেখতে চাই না। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই।

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় এতদিন আওয়ামী লীগের কাছে রাজনৈতিকভাবে বন্দী ছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও হিন্দুরা নির্যাতিত হয়েছে। এখনো তারা ধর্ষণ করছে। সারা দেশে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করছে। ফ্যাসিবাদ বিদায় হয়েছে। আবার ফেরত আসুক চাই না। পিআর ছাড়া নির্বাচন হলে ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসবে। এজন্য পিআর ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না। জামায়াতও যেন না যায়।

ড. ফয়জুল হক জামায়াত আমিরকে জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ঘোষণা করে বলেন, আগামীতে দেশে ইসলামের পক্ষের বাংলাদেশ হবে। কোনো চাঁদাবাজদের হাতে দেশ ছেড়ে দেয়া হবে না।

শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, আবু সাঈদ যে দাবিতে শহীদ হয়েছে, সে দাবি এখনো পূরণ হয়নি। হত্যার কোনো একটি বিচারও হয়নি। যদি দাবি পূরণ করতে না পারেন তাহলে আবু সাঈদকে ফেরত দেন। নির্বাচনের আগে বিচার প্রয়োজন। খুনি ফ্যাসিবাদীরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিচার করতে হবে।

বুয়েটের শহীদ আববারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, হলে হলে র‌্যাগিংয়ের কারণে যারা শহীদ হয়েছে তাদের তালিকা করে তাদের হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার এখনো কার্যকর হয়নি।

জামায়াত গতকাল সাত দফা দাবিতে সমাবেশ করে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন ও এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।

বেলা ২টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ আনুষ্ঠিকভাবে শুরু হয়। তবে শুক্রবার রাত থেকেই সমাবেশস্থলে সমবেত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বাস, লঞ্চ ও টেন বোঝাই করে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। সকাল ৮টার আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর সমাবেশের পরিধি বেড়ে রমনা পার্ক, শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন মোড়সহ ক্রমেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে জনতার ঢল নেমেছে। এতে কয়েক লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছে। এদিকে সকাল থেকেই সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা ইসলামী সঙ্গিত, নাটিকাসহ বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে মাঠ মাতিয়ে রাখেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here