নতুন করে ডলারের দর বৃদ্ধির প্রভাব : বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধে আরও চাপ

বিদেশি ঋণের সুদ এবং আসল পরিশোধ বাবদ চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, ডলারের হিসাবে যা ৪৮ শতাংশ বেশি। ডলারের দাম নতুন করে আরেক দফা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের চাপ তৈরি হলো। শুধু মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণেই সমপরিমাণ সুদাসল পরিশোধে বেশি টাকা দরকার হবে।

বাড়তি ব্যয় জোগানে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। একই উদ্দেশ্যে প্রকল্প ঋণ বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার আগামী জুনের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডির সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গেল মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। এ সময় উন্নয়ন সহযোগীদের ছাড় করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬৩ কোটি ডলার, সে হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে পরিশোধের পরিমাণ ঋণ ছাড়ের ৪৬ শতাংশ ।

গত  ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে বিদেশি ঋণ ছাড় হয় ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ওই সময়ে সুদাসলে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৭৩ কোটি, যা ছাড় করা অর্থের ৩২ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত ৯ মাসে শুধু সুদ পরিশোধের পরিমাণ ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত ৯ মাসে আসল পরিশোধ হয় ১৫২ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল প্রায় ১২৪ কোটি ডলার।

টাকা পরিশোধ বেড়েছে ৬৭ শতাংশ

ইআরডির তথ্য বলছে, গত ৯ মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ ২৮ হাজার ২৮১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে; গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। টাকার হিসাবে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশ। নতুন করে টাকার মান কমায় শুধু এ কারণেই পরিশোধের চাপ বাড়বে।

বাজেট সহায়তা বাড়াতে তৎপরতা

বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণের সুদাসল পরিশোধ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে নগদ ডলার সরবরাহ বাড়াতে চায় সরকার। বিদেশি ঋণের প্রকল্পের অর্থ ছাড় বাড়াতে বাস্তবায়ন কাজ যথাসময়ে শেষ করতে একনেক বৈঠকে একাধিকবার অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি কাজ করছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প সহায়তা ছাড়ের অপেক্ষায় পাইপলাইনে ৫০ বিলিয়ন ডলার আছে। এর বাইরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী ফ্রান্স সাহায্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, বিশ্বব্যাংক থেকে মোট ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চেয়েছেন তারা। এর মধ্যে ২৫ কোটি ডলার জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল থেকে এবং একই পরিমাণ আইডিএর নিয়মিত সহায়তা। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের সম্মেলনে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ প্রস্তাব দেন। তার আগে থেকেই এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছিল। এ পরিমাণ অর্থ পাওয়া এক রকম নিশ্চিত এবং আগামী জুনের মধ্যেই এ অর্থ পাওয়ার বিষয়ে সরকার আশাবাদী বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

বিশ্বব্যাংকের বাইরে এডিবির কাছে ৬৫ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। এর বাইরে এআইআইবি ও ফ্রান্স সাহায্য সংস্থার কাছে ৭০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকেও বড় অঙ্কের বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে  প্রায় ২০০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

samakal