‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শিরোনামে একটি প্রচারপত্র তৈরি করে সেটি সারা দেশে বিতরণের মাধ্যমে গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি’ আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি ছাড়াও সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন দাবি করা হয় প্রচারপত্রে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। আগামী ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে ছয় দিনের এই কর্মসূচি শেষ হবে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে ১৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে দোয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মূলত নতুন করে আন্দোলন গড়ার লক্ষ্যে প্রচারপত্র তৈরি করে সারা দেশে গণসংযোগের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাস ঘুরেফিরে এ ধরনের কর্মসূচি করা হবে। প্রচারপত্রে সরকারের দুর্নীতি, বড় বা মেগা প্রকল্পে লুটপাট, বিদেশি ঋণ, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাদের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
এ ছাড়া প্রচারপত্রে বলা হয়, ডামি ও প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় বসা একদলীয় সরকার ও এক ব্যক্তির শাসন কায়েমের জন্য দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিদেশি প্রভুদের কাছে বিকিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদের সব গণতান্ত্রিক কার্যক্রম রাষ্ট্রযন্ত্রের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জনগণ এই পরিস্থিতির অবসান চান। জনগণ বাঁচতে চান এবং দেশকে বাঁচাতে চান।
প্রচারপত্রে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এই সরকারের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। প্রচারপত্রের শেষে বলা হয়, ‘এই ন্যায়যুদ্ধে বিজয় আমাদের হবেই।’
বিএনপি ছাড়া অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও চারদলীয় জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যও ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শিরোনামে প্রচারপত্র তৈরি করেছে।
বিএনপি ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে ভোটের প্রচার করেছিল।
‘ডামি’ নির্বাচন করে সরকার অহমিকা দেখাচ্ছে
নেতা-কর্মীদের নিয়ে আজ ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণের প্রত্যাখ্যাত নির্বাচন। সেই নির্বাচন করে তারা (সরকার) এখন আত্ম–অহমিকা দেখাচ্ছে। তারা জোর করে তাদের দখলদারি ক্ষমতা মানুষের সামনে দেখাতে চাচ্ছে।
এর বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠছে বলে দাবি করে রিজভী বলেন, ডামি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে সবাইকে একত্র হয়ে রাজপথে নামতে হবে। সেই লক্ষ্যে গণসংযোগের কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী কর্মসূচিতে বলেন, ‘আপনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের সময়ে সেনাবাহিনীতে নাকি অনেক দমন করা হয়েছে, অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে করলে তো সেখানে বিচার হবেই। জিয়াউর রহমান আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার করেছেন। আর আপনি সামরিক কর্মকর্তাদের গায়েব করে দিয়েছেন, অদৃশ্য করে দিয়েছেন।’
নিখোঁজ সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীর নাম উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আমান আযমী কোথায়? সে কি গায়েব হয়নি আপনার সরকারের সময়ে?’
রিজভী আরও বলেন, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিরাজ শিকদারসহ জাসদ ও বিরোধী দলের ভিন্নমতের ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। একইভাবে এই সরকারের আমলে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে।
সকালে ফকিরাপুল এলাকায় পথচারী, ফুটপাতের দোকানদার ও যানবাহনের যাত্রীদের হাতে প্রচারপত্র তুলে দেন রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আজ দুপুরে রাজধানীর পল্লবী এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারপত্র বিতরণ করেন সদ্য কারামুক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক। এ সময় তাঁর সঙ্গে পল্লবী থানা বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা পথচারী, রিকশা, ভ্যান, বিভিন্ন গাড়িচালক ও দোকানদারদের হাতে প্রচারপত্র বিলি করেন।
প্রচারপত্র বিতরণের সময় আমিনুল হক বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কারাগারে আটক রেখে ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার আর ডামি নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ডামি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় বসেছে। তারা ২০১৪ সালে বিনা ভোটে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে। এদের কাছে রাষ্ট্র নিরাপদ নয়, দেশের স্বাধীনতা নিরাপদ নয়।
প্রথম আলো