- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৪ জানুয়ারি ২০২১
সরকার কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় ভ্যাকসিন কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। মারাত্মক এই ভাইরাসের প্রকোপ দূর করতে ১৩.৮২ কোটি লোকের প্রত্যেককে ভ্যাকসিনের দুটি করে ডোজ দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার হিসেবে সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার ২০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার সচিবালয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী অক্সর্ফোড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯ টিকার (ভ্যাকসিন) তিন কোটি ডোজের মধ্যে প্রথম ধাপে ৫০ লাখ টিকা সোমবার বাংলাদেশে আসবে।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ২০ লাখ টিকা দিয়েছে ভারত সরকার। চুক্তি অনুয়ায়ী কাল আসবে ৫০ লাখ। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকী টিকা আসবে। এসব ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পরের ধাপে টিকা আসলে ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোথায় তা রাখা হবে সেটিও ঠিক করে রাখা হয়েছে।’
তিনি জানান, আগামী ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে নার্সদের থেকে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
‘ভ্যাকসিন কীভাবে প্রয়োগ করা হবে সেজন্য আমাদের জাতীয় কমিটি আছে। তারা এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি শেষ করেছেন,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। অনেকে বলছেন ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে। অনেক ওষুধেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এই ভ্যাকসিনে যে সেটি হবে না, তা বলতে পারছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক ভ্যাকসিনেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । করোনা ভ্যাকসিনে যদি কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সেজন্য আমরা প্রতিটি হাসপাতালে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছি।’
ভ্যাকসিন গ্রহণে মানুষকে কীভাবে আশ্বস্ত করা হবে জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন পৃথিবীতে রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি, এসব ভ্যাকসিন থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাজ্যে লাখ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ হয়েছে। তাই এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরো বলেন, ভ্যাকসিন কাউকে জোর করে দেয়া হবে না। ভ্যাকসিন স্বাধীনভাবে যে যে নিতে চায় তাকেই দেয়া হবে।
মন্ত্রী জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আগে ফ্রন্টলাইনারদের ভ্যাকসিন দেব। পর্যায়ক্রমে যাদের ভ্যাকসিন লাগবে তাদের সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে এখনো বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন আনার অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি কেউ বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন দিতে চায়, সে বিষয়ে আমরা পরে দেখব।’
৩ পর্যায়ে ৫ ধাপে মোট ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হবে।
স্বাস্থ্যকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক ও অন্যান্য বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার কর্মচারী এবং ধর্মীয় নেতারা প্রথম ধাপে টিকা পাবেন।
প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৯ জন। দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা পাবেন ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার। তৃতীয় পর্যায়ে টিকা পাবেন ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ।
প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপ
প্রথম ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবেন। তার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত ১০ লাখ ৫২ হাজার, মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ১০ হাজার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনা ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ৯ লাখ ৭ হাজার ৫৩২ জন, সরকারি কর্মকর্তা ৫০ হাজার, ফ্রন্টলাইনের সাংবাদিক ৫০ হাজার টিকা পাবেন।
এছাড়াও জনপ্রতিনিধি ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী ১ লাখ ৫০ হাজার, ধর্মীয় নেতা ৫ লাখ ৪১ হাজার, দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত কর্মী ৭৫ হাজার, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ৪ লাখ, সমুদ্র ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মী ১ লাখ ৫০ হাজার, ব্যাংক কর্মী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন রোগী ৬ লাখ ২৫ হাজার, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মী ৭৭ হাজার ৮০৪ জন টিকা পাবেন।
দ্বিতীয় ধাপ
সারাদেশে টিকাদানের দ্বিতীয় পর্যায়ে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার জন টিকা পাবেন। এর মধ্যে ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী ৫৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৭ প্রবীণ নাগরিক, কো-মরবিডিটিসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯৩৬ জন, শিক্ষক ও সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মী ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩ জন, প্রথম পর্যায়ে বাদ পড়া গণমাধ্যম কর্মী ৫০ হাজার, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী ১০ লাখ ১১ হাজার ২২৮ জন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের ১০ লাখ সদস্য, ৫ লাখ গণপরিবহন কর্মী, ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৬৪ জন হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ওষুধের দোকানের কর্মী, ৩৬ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক, দেড় লাখ যৌনকর্মী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যকে টিকা দেয়া হবে।
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে দুই স্তরে বাংলাদেশের সর্বাধিক সংখ্যক লোককে টিকা দেয়া হবে।
পরিকল্পনা অনুসারে, তৃতীয় ধাপে দুই পর্যায়ে মোট ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার জনকে এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এর মধ্যে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার প্রথম পর্যায়ে এবং ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা পাবে।
তৃতীয় ধাপে যারা টিকা পাবেন তারা হলেন- টিকা পাননি এমন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০৪ শিক্ষক ও কর্মচারী, প্রসূতি (অনুমোদন সাপেক্ষে) ৩৮ লাখ ১৫ হাজার ২০১ জন, অন্যান্য সরকারি কর্মচারী ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন, অন্য আইন প্রয়োগকারী কর্মী ৪৩ লাখ, অন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী ৬ লাখ, অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ২২ লাখ, রপ্তানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মী ২০ লাখ ৮১ হাজার ৮৮৪, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর কর্মী ২৫ লাখ, কয়েদি ও জেলকর্মী ১ লাখ ৫৮৬, শহরের বস্তিবাসী বা ভাসমান জনগোষ্ঠী ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪, কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মী ১৬ লাখ ৫০ হাজার, ডরমেটরির বাসিন্দা ৫ লাখ, গৃহহীন জনগোষ্ঠী ২ লাখ, অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী ৫১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৪, বাদ পড়া গণপরিবহন কর্মী ৩ লাখ, বাদ পড়া ৫০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নাগরিক ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৩, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মী ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯, বাদ পড়া যুব জনগোষ্ঠী ৩ কোটি ২২ লাখ ৩৪ হাজার, শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী ৩ কোটি ২২ লাখ ৪৭ হাজার ১৫৭ এবং পূর্বের ধাপে বাদ পড়া ৮ কোটি ৪২ লাখ ৫৯৭ জনকে চূড়ান্ত ধাপে টিকা দেয়া হবে।