Site icon The Bangladesh Chronicle

দেশের বেশির ভাগ পোশাক কারখানা বন্ধের আশঙ্কা

দেশের বেশির ভাগ পোশাক কারখানা বন্ধের আশঙ্কা – ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের অধিকাংশ তৈরী পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউএনডিপি। এ ক্ষেত্রে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা তলানিতে রয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে দেশের তৈরী পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য আরো তিন মাসের বেতন-ভাতার সমান অর্থ বরাদ্দ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা। এ জন্য ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দিয়েছে রফতনিমুখী পোশাক মালিকদের বড় দুটি সংগঠন বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।

ইউএনডিপির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় সংক্রমণকালীন নাগরিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষাদানের ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তলানিতে অবস্থান করছে। দেশগুলোর নেয়া সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাকে আটটি সূচকে তুলনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং পাকিস্তান সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। আট সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার কেবল বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছে।

করোনায় বাংলাদেশে তৈরী পোশাকের বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে আশঙ্কা প্রকাশ করে ইইউএসডিপির প্রতিবেদনে হয়, এত করে বহু নারী কাজ হারাবে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে ভাসমান শ্রমিক ও উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী। সাধারণ নাগরিকরা ন্যূনতম যে স্বাস্থ্যসুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা পায়, তারা তা থেকে বঞ্চিত বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ, নেপাল ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর মাথাপিছু আয় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করার সামর্থ্যও তাদের কম বলে মন্তব্য ইউএনডিপির।

এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক ও বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমানের স্বাক্ষরিত যৌথ এই চিঠিতে দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি পোশাক রফতানির সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক-কর্মচারীদের আগামী জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ‘আগের মতো’ সহজ শর্তে অর্থ বরাদ্দ দিতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়। বর্তমানে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিসচার্জ দিয়ে ঋণ নিতে পারছেন ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন দিয়েছেন অনেক পোশাক কারখানার মালিক।

করোনাভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২ এপ্রিল সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারে বলা হয়, ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবে উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থ দিয়ে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। সুদবিহীন এ ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিসচার্জ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।

ওই তহবিল থেকে ঋণ পেতে বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৩৭০ ও বিকেএমইএর সদস্য ৫১৯টি কারখানা আবেদন করেছিল। বিভিন্ন কারণে বিকেএমইএর ৯৯ সদস্য কারখানাসহ বেশি কিছু আবেদন বাতিল হয়। তবে এরপরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থই ঋণ হিসেবে পেয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকরা। ফলে দুই মাস ধরে পোশাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশের মজুরি হচ্ছে প্রণোদনার টাকায়।

 

Exit mobile version