সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ রয়েছে। ঢাকা ও নিজ এলাকা জামালপুরের মেলান্দহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাঁর সম্পদ। জামালপুর-৩ আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদে হুইপের দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন। বিষয়টি বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে তাঁর নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে দুদকে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম দেশের যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সম্পদ করেছেন। নিজের নামে, স্ত্রী-সন্তান-ভাইদের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্থাবর সম্পত্তি, ফ্ল্যাট, বাগানবাড়িসহ সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। জামালপুর-৩ আসন (মেলান্দহ) থেকে তিনি একাধিকবার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নামে-বেনামে যত সম্পদ
ঢাকার ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে (পুরোনো ২৮ নম্বর) প্রভাব খাটিয়ে সরকারি প্লট দখল করে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এই রোডের ১২ নম্বর বাসাটিতে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস করতেন। ১৯৯৬ সালে এমপি থাকাকালে ঢাকার নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে প্লটটি পরিবর্তন করে বারিধারায় ১০ নম্বর সড়কে নতুন প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আলোচিত তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের অন্যতম শেয়ারহোল্ডার মির্জা আজম।
অপি হাউজিং কোম্পানির মালিক মির্জা আজম। জনৈক আবু সালেহ গেন্দার নামে তিনি দেশে-বিদেশে নানা খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। জামালপুর শহরে পৌরসভা ভবনের পাশে আছে মির্জা আজমের স্ত্রী আলেয়া আজমের নামে বিলাসবহুল বাড়ি আলেয়া কটেজ। জামালপুর পৌরসভা এলাকার সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় ১০ একর জমিতে আলেয়া গার্ডেন নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে। মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট ইউনিয়নে তমা কংক্রিট লিমিটেডে তাঁর বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।
মেলান্দহর নয়ানগর ইউনিয়নের কান্দাপাড়ার বাসিন্দা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা (বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) মিনহাজের নামে জামালপুর শহরে এবং শহরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০০ একর জমি কিনেছেন তিনি। জামালপুর শহরের বকুলতলা মোড়ে ৮ শতাংশ জমির ওপর তাঁর বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। জেলা শহরের মেডিকেল রোডে তিনতলা দুটি বাড়ি আছে। জেলা শহরের বজ্রাপুর এলাকায় মির্জা রাইস মিলটি পরিচালনা করেন তাঁর ভাই মির্জা কবির। মাদারগঞ্জ উপজেলা পৌর শহরের বালিজুড়ি বাজারে দুই একর জমিতে নুরুন্নাহার মার্কেট ও বকুল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মাদারগঞ্জ উপজেলা চত্বরে এক একর জমিতে দুটি মার্কেট, উপজেলাসংলগ্ন ২ একর জমি, মেলান্দহ উপজেলার পৌর শহরের বকুলতলার পাশে ৩০ শতাংশ জমি (কোয়েলী সিনেমা হলের জমি) রয়েছে।
ময়মনসিংহের ভালুকা ডেইরি ফার্ম নামক প্রতিষ্ঠানে শেয়ার রয়েছে মির্জা আজমের। মাদারগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁর নামে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি রয়েছে। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নালিতাবাড়ী ফিশারিজের মালিক মির্জা আজমের স্ত্রী আলেয়া আজম। কক্সবাজারে পাঁচ তলা সিগাল হোটেলের অন্যতম শেয়ারহোল্ডার তিনি। এই হোটেলের চেয়ারম্যান মির্জা আজমের স্ত্রী। এ ছাড়া নেত্রকোনায় শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পদ করেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মির্জা আজম মোট সম্পদের হিসাব দেখিয়েছেন ৬৫ কোটি ৭১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের অংশীদার হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে সরকারের বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করেছেন তারা।
samakal