- ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩:৩৫
আফগানিস্তানে তালেবান বলেছে আফগান নারীরা যদি সড়কে বেশি দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে চান, তাদের সাথে পুরুষ আত্মীয় থাকলে তবেই একমাত্র তাদের পরিবহন সেবা দেয়া হবে।
অগাস্টে দেশটির ক্ষমতা হাতে নেবার পর তালেবান নারীদের অধিকার খর্ব করে সবশেষ এই নির্দেশ ঘোষণা করে রোববার।
আফগানিস্তানে মেয়েদের বেশিরভাগ সেকেন্ডারি স্কুল এখনো বন্ধ রয়েছে এবং অধিকাংশ নারীর জন্য এখনো কাজে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা নারীদের ঘরে বন্দি করার পথে আরও একটি পদক্ষেপ।
নারী অধিকার বিষয়ে সংগঠনের সহকারী পরিচালক হেদার বার এএফপি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, এই নির্দেশ নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ বন্ধ করে দেবে, অথবা ঘরে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হলে তাদের পালিয়ে যাবার পথও বন্ধ হয়ে যাবে।
কী আছে তালেবানের নির্দেশে
সর্ব সাাম্প্রতিক নির্দেশটি জারি করা হয়েছে তালেবানের নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে যাতে বলা হয়, কোনো নারী যদি সড়কপথে ৪৫ মাইল (৭২ কিলোমিটার) দূরত্ব পাড়ি দেয় তাহলে তাদের সাথে পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন পুরুষ আত্মীয়কে থাকতে হবে।
‘আমার খুবই খারাপ লাগছে’ এই নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় এমনটি বলেছেন কাবুলের বাসিন্দা ধাত্রী ফাতিমা। এর অর্থ ‘আমি স্বাধীনভাবে কোথাও যেতে পারব না। আমি বা আমার সন্তান যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে আর স্বামী যদি সেসময় কাছে না থাকেন, আমি কী করব?’
তিনি আরো বলেন, তালেবান আমাদের কাছ থেকে সুখ কেড়ে নিয়েছে…আমি আমার স্বাধীনতা আর সুখ দুটোই হারিয়েছি।
এই নির্দেশে গাড়ির মালিকদের বলা হয়েছে, তারা যেন হিজাব না পরা নারীদের গাড়িতে না তোলেন। তবে ঠিক কীভাবে মাথা ঢাকতে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। বেশিরভাগ আফগান নারীই সাধারণত মাথা ঢাকেন। এছাড়াও গাড়ির ভেতরে গানবাজনা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান ও মিত্র বাহিনী চলে যাবার পর ক্ষমতা গ্রহণ করে তালেবান বেশিরভাগ কর্মজীবী নারীকে ঘরে থাকতে বলে এবং শুধু পুরুষ শিক্ষক ও ছেলেদের জন্য মাধ্যমিক স্কুলগুলো খোলা রাখা হয়।
তবে তালেবান জানায় এইসব বিধিনিষেধ ‘সাময়িক’ এবং নারী ও মেয়ে শিশুদের জন্য সব কর্মস্থল ও শিক্ষাঙ্গনের ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ জারি রাখা হবে। ১৯৯০-এর দশকে তালেবানের পূর্ববর্তী শাসনামলে নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্মস্থলে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
গতমাসে, তালেবান নারীদের টেলিভিশন নাটকে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে এবং নারী সাংবাদিক ও নারী উপস্থাপকদের টিভি অনুষ্ঠানে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করে।
দাতা দেশগুলো তালেবান শাসকদের বলেছে আর্থিক সহায়তা আবার উন্মুক্ত করার আগে তাদের দেশটিতে নারীর অধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।
তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তা বন্ধ করে দেয়ায় দেশটি মানবিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি