দুর্নীতি এবং দুষ্কর্মের জন্য নির্যাতন
- গোলাম মাওলা রনি ০৫ মার্চ ২০২০
আলোচনার শুরুতে তিনটি দুর্নীতির কাহিনী বলে মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার চেষ্টা করব। প্রথম কাহিনীটি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার একটি মেগা প্রকল্পের। ভাঙ্গা চৌরাস্তার মোড়ে যে বহুমুখী ফ্লাইওভারটি হচ্ছে, সেটি নির্মাণের জন্য বিপুল ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। এসব অধিগ্রহণে যে সরকারি নীতিমালা রয়েছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিমালিকরা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পান। ফলে অধিগ্রহণ নিয়ে সাধারণত কেউ উচ্চতর আদালতে আসেন না। দ্বিতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিমালিকদের বিরাট অংশ ক্ষেত্রবিশেষ দরিদ্র, অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হয়ে থাকেন। ফলে অধিগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট দফতর যে দুর্নীতিতে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে তা যদি জানতে চান তবে তারা ভাঙ্গা চৌরাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিমালিকদের সাথে কথা বলতে পারেন।
দ্বিতীয় ঘটনা নেত্রকোনার। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমির মূল্য বাবদ সব অর্থ ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের দফতরে পৌঁছে গেছে। এখন সেই টাকা বিতরণ করতে গিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তা যদি কর্তৃপক্ষ দেখতেন তবে নিজেরাই শিউরে উঠতেন। তৃতীয় ঘটনাটি ঢাকা শহরের গুলিস্তান এলাকার। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন একটি বৃহত্তর মার্কেটের নির্ধারিত গাড়ি পার্কিং এলাকায় অবৈধভাবে ৬০০ দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়, যার বিনিময়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দোকানপ্রতি পঞ্চাশ লাখ থেকে শুরু করে এক কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। চাঁদা দেয়ার মাধ্যমে দখলিস্বত্ব পাওয়া ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেয়া হয় যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন থেকে বৈধ কাগজপত্র সংগ্রহ করে দেয়া হবে। কিন্তু গত পাঁচ-ছয় বছরে তাতো হয়ইনি বরং ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে সেই সব ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দোকানপ্রতি আরো আট লাখ করে টাকা আদায় করা হয়। সম্রাট গংরা জেলে যাওয়ার পর নতুন যে সিন্ডিকেট ক্ষমতা পেয়েছে তারা বর্তমানে দোকানপ্রতি আড়াই লাখ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে কী যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বলতে পারেন।
উপরক্ত তিনটি কাহিনীর মতো শত সহস্র দুর্নীতির মহোৎসব দেশের ইউনিয়নপর্যায়ের ভূমি অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বন বিভাগ থেকে শুরু করে খোদ রাজধানীর প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় পর্যন্ত কিভাবে চলছে তার নমুনা আমরা দেখতে পাই অভিজাত ও ব্যয়বহুল পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে গড়ে তোলা হালফ্যাশনের মক্ষীরানী যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া ওরফে পিউর অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেখে। একটি জেলাপর্যায়ের সাধারণ মহিলা রাজনৈতিক কর্মী মদ-মেয়ে-যৌনতার সমন্বয়ে যে অপরাধালয় গড়ে তুলেছে এবং সেই অপরাধস্থলে ইউনিয়নপর্যায়ের দুর্নীতিবাজ চরিত্রহীন লোকজন থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষপর্যায়ের লোকজনকে যেভাবে পঙ্গপালের মতো জড়ো করে বিকৃত ইন্দ্রসুখের আয়োজন করেছিল- তা পুরো সভ্যতাকে বিরাট এক প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
যুব মহিলা লীগের পাপিয়ার খদ্দেরদের যে তালিকা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তা দেশের দুর্নীতির সাথে অন্যান্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি অপরাধ আমদুধের মতো যেভাবে একাকার হয়ে পড়েছে সেভাবে পৃথিবীর কোনো দেশ কালের অসভ্য সমাজব্যবস্থা দুর্ভেদ্য বনাঞ্চলের গহিনে বসবাসরত আদিম স্বভাবের মানুষ অথবা মরুভূমি পাহাড়ি উপত্যকা কিংবা সমুদ্রে ডাকাতি করে বেড়ানো পৃথিবীর জঘন্যতম মানুষের মধ্যেও দেখা যায় না। পাপিয়া কেলেঙ্কারির কিছু দিন আগে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির যে খণ্ডিত বা আংশিক সংবাদ আমরা শুনেছিলাম তাতে রীতিমতো বেকুব বনে গিয়েছিলাম। রাস্তার টোকাই-মোকাই প্রকৃতির লোকজনের বাড়িঘর থেকে যেভাবে শত শত বস্তাভর্তি নগদ অর্থ, মণকে মণ সোনা এবং হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ড্রাফট উদ্ধার হয়েছে তাতে ভুখানাঙ্গা লোকজন অবিস্মরণীয় উন্নয়নের স্বাদ এবং আহ্লাদ অনুভব করতে পেরেছে। আল্লাহর দেয়া দুটো চোখের মাধ্যমে উন্নয়ন ধামাকার সেই দৃশ্য টেলিভিশন সামাজিক মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবি খবরাখবর ইত্যাদির কল্যাণে অবলোকন করতে পেরে অসহায় আদম সন্তান নিজেদের জীবন ও জনমকে সার্থক করার সুযোগ পেয়ে দুর্নীতির গডমাদার-গডফাদারদের কদম মোবারক স্পর্শ করার মানসে দিবা-নিশি অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
সাম্প্রতিক সময়ের দুর্নীতি পুরো দেশকে কিভাবে ভোগাচ্ছে এবং এসব ভোগান্তির পরিণাম কী হতে পারে এসব ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে দুর্নীতির বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং বেপরোয়া পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলা আবশ্যক। এক যুগ বা দেড় যুগ আগে দুর্নীতির যে নিয়মকানুন ছিল তা এখন আর নেই। আগের দিনে দুর্নীতির একটি রেট ছিল। দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির টাকা বিশ্বস্ততার সাথে ভাগাভাগি করত। তারা তাদের অবৈধ অর্থ অপচয় করত না। মদ-জুয়া, বিদেশে পাচার, ফুর্তি করা ইত্যাদি কুকর্মে দুর্নীতির টাকা খুব কমই ব্যবহার হতো। আগের দুর্নীতিবাজরা ছিল কৃপণ এবং অসামাজিক। তারা স্বভাবে কাপুরুষ এবং আচরণে অসামাজিক প্রকৃতির ছিল। তাদের চেহারা-সুরত, পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া এবং চলাফেরা দেখে স্পষ্ট বোঝা যেত যে, লোকটি দুর্নীতিবাজ। এরা ভদ্র লোকদের ভয় পেত, গুণী ও সম্মানী লোকদের সমীহ করত এবং সব সময় একধরনের হীনম্মন্যতা ও অপরাধবোধে তাড়িত হয়ে অদ্ভুতভাবে চলাফেরা করত। তারা সাধারণত তাদের দুর্নীতির দোসর এবং যাদের কাছ থেকে দুর্নীতির অর্থ গ্রহণ করত তাদের সাথে বেঈমানি করত না।
আগের দুর্নীতিবাজদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ছিল যারা মদ্যপান, নারী সম্ভোগ, সন্ত্রাস, টাকা পাচার, বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করা ইত্যাদি কর্ম যুগপৎভাবে করতে পারত। বেশির ভাগ দুর্নীতিবাজ ছিল সরকারি কর্মচারী, তাও আবার নিম্নশ্রেণীর কর্মচারী। প্রাইভেট সেক্টরে দুর্নীতিবাজ ছিল না বললেই চলে। এসব দুর্নীতির শতকরা নব্বই ভাগই ছিল ঘুষ আদায়, ঘুষ দেয়া এবং ঘুষ লেনদেনের দালালসংক্রান্ত। এর বাইরে কিছু লোক মদ্যপান, জুয়া, নারী সম্ভোগ ইত্যাদি কুকর্ম করত। তবে এরা বেশির ভাগই ছিল ধনীর দুলাল অথবা ব্যক্তিগতভাবে ধনিক শ্রেণী। সমাজের উঁচুতলার মানুষজন সম্পর্কে অকথা-কুকথা তেমন একটা শোনাই যেত না। পরকীয়া, ধর্ষণ, নারী অপহরণ ইত্যাদি কুকর্মের হারও ছিল নগণ্য।
আগের দুর্নীতির যে ফিরিস্তি এতক্ষণ দিলাম তা আজকালকার জমানায় পরিপূর্ণভাবে উঠে গেছে। আজকের দিনে সারা দেশের আনাচেকানাচে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি দুর্নীতির হাট বসে। লাখ লাখ দুর্নীতিবাজ সেসব হাটে গিয়ে দুর্নীতির ক্রয়-বিক্রয় অথবা দুর্নীতিসংক্রান্ত পণ্য বিনিময় করে। সরকারি-বেসরকারি দুর্নীতির সাথে দেশী-বিদেশী দুর্নীতি একাকার হয়ে প্রতিটি দুর্নীতির হাটে একটি চতুরঙ্গ পরিবেশ সৃষ্টি করে। বড় বড় দুর্নীতি নিয়ে রীতিমতো নিলাম অনুষ্ঠিত হয় এবং এসব দুর্নীতির নিলামে যারা বিজয়ী হয় তাদের অন্যান্য দুর্নীতিবাজ বেশ ঘটা করে বরণ করে নেয়। দুর্নীতিকে উপাদেয়-উৎসবমুখর এবং হজমযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন মালমসলা, গান-বাজনা-নৃত্য এবং হজমি বড়ি তথা ভারতীয় হজমলাজাতীয় বড়ির বিপুল সমারোহে দুর্নীতির হাটগুলো গম গম করতে থাকে।
দুর্নীতির হাটের একটি প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো- এখানে কোনো জাতপাত নেই। দুর্নীতির চাড়াল-চণ্ডাল, নাপিত-ধোপা-মেথর-ঝাড়ুদার এবং জমিদার সব একই থালায় উপুড় হয়ে দুর্নীতিজাত খাদ্য কুজাত প্রাণীরা যেভাবে জিহ্বা দিয়ে লেহন করে খায় ঠিক সেভাবে লেহন করতে থাকে। তাদের লজ্জা-শরম থাকে না। সবাই একত্রে উলঙ্গ হয়ে দুর্নীতির সঙ্গীত বাজিয়ে ধিতাং ধিতাং নাচতে থাকে গভীর রাত অবধি। তারা দুর্নীতির অর্থ, অবৈধ নারী সঙ্গ বা পুরুষ সঙ্গ, মদ-গাঁজা, হেরোইন, তাঁড়ি, ইয়াবা, মারিজুয়ানা এবং ইন্ডিয়ান শালপাতার বিড়ি একত্রে ককটেল বানিয়ে ভক্ষণ না করা পর্যন্ত স্বস্তি পায় না। আদিকালে যেগুলোকে বিকৃত রুচি বলা হতো সেগুলোকে একালের দুর্নীতিবাজরা সুরুচি বানিয়ে ফেলেছে এবং মহাকালের সুরুচি নামক শব্দটিকে আমাজনের জঙ্গলে নির্বাসন দিয়েছে।
দুর্নীতির হাটের কারবারিরা ঘুষ, অপহরণ, চাঁদাবাজি, দালালি, কমিশন বাণিজ্য, ভূমি দখল, রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার, নারী অপহরণ, শিশু অপহরণ, জুয়া, যেনা-ব্যভিচার, বলাৎকার, চুরি-ডাকাতি, লুটপাট, বাটপাড়ি, প্রতারণা, লোক ঠকানো, অবিচার, অত্যাচার, অনাচার, মুদ্রাপাচার, মাদক চোরাচালান, তেলবাজি, নেশা, মজুদদারি, ভেজাল সিন্ডিকেট ইত্যাদি হাজার কুকর্মকে একটি ছাতার মধ্যে জড়ো করে নিজেদের জন্য ওয়ান স্পট সার্ভিস সৃষ্টি করে ফেলেছে। বছরখানেক আগে জামালপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারির পর দুর্নীতিবাজরা বেজায় সতর্ক হয়ে পড়েছে। দুর্নীতিবাজদের গডফাদার-গডমাদাররা একজন ডিসি পদমর্যাদার লোক কী করে ঝাড়–দার-পিয়ন-আয়া জাতীয় মহিলার সাথে নিজ অফিসে বসে নির্ভয়ে অপকর্ম করে তার কার্যকারণ বের করার পর নিজেদের দলের সদস্যদের জন্য সারা দেশে অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে, যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখতে পেলাম ওয়েস্টিন নামক হোটেলটিতে পাপিয়া নামক মক্ষীরানীর পাপময় রঙ্গমহলে।
ওয়েস্টিনের মতো ব্যয়বহুল পাঁচতারকা মানের হোটেলে বসে দুর্নীতিবাজদের মৌজ-মাস্তির টাকা সংগ্রহ করার জন্য দুর্নীতির বরপুত্ররা তাদের লাখ লাখ প্রেতাত্মাকে সারা দেশের শহর বন্দর-গ্রাম-গঞ্জ, নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়। ঝোপঝাড়, পাটক্ষেত, ধানক্ষেত থেকে শুরু করে কলকারখানা, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের খামার, রাস্তার পাশের ফুটপাথ, কবরস্থান-শ্মশানঘাট, কাফনের দোকান, ফুলের বাগিচা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা-এতিমখানা, পায়খানা-প্রস্রাবখানা প্রভৃতি সব স্থানে হাজারো মারণাস্ত্র সজ্জিত করে বসিয়ে দিয়েছে। এসব প্রেতাত্মা সাধারণ মানুষের রক্ত-মাংস-অস্থি-মজ্জা মন্থন করে দুর্নীতির বরপুত্রদের মৌজ-মাস্তির রসদ সংগ্রহ করে। প্রেতাত্মারা সেসব রসদের একাংশ নিজেদের ভোগের জন্য রেখে বাকিটা প্রপার চ্যানেলে দুর্নীতির শিরা-উপশিরার মাধ্যমে একদম মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়। মস্তিষ্কে রসদ পৌঁছার পর সেখান থেকে দুর্নীতির কলিজা-ঝিল্লি-কিডনি-ফুসফুস প্রভৃতি সংবেদনশীল অঙ্গে যথানিয়মে তা সঞ্চালিত হয়ে যায় ছন্দের তালে তালে- অনেকটা মনের-দেহের হৃদস্পন্দনের মতো করে।
বর্তমানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলা যাচ্ছে না। দুর্নীতির বরপুত্রদের ধরিয়ে দেয়া তো দূরের কথা- তাদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দুর্নীতির জুলুমে জর্জিরত আমজনতা প্রতিকার চাওয়ার সাহস শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলছে। তারা কেবল দুর্নীতিবাজদের অত্যাচার চোখ বুজে সহ্য করার নিদারুণ এক যোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছে যে, দুর্নীতির মহারাজদের বিনা অনুমতিতে দুর্নীতিসংক্রান্ত কোনো আলাপ-আলোচনা শোনা বা দুর্নীতিবাজদের উল্লাস নৃত অবলোকন করার সাহস সঞ্চয় করতে পারছে না। তবে একটি প্রকৃতিপ্রদত্ত সুযোগের কল্যাণে আমজনতা দুর্নীতির পিউ পিউ নির্যাতনের মধ্যেও মাঝে মধ্যে বিনোদিত হয় যখন কোনো বরপুত্রের হুকুমে কোনো প্রেতাত্মার পতন ঘটানো হয় এবং সেই পতনের দৃশ্য যখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তখন লোকজন তা দেখে ভারি মজা পায় এবং হুকুমদাতা দুর্নীতির বরপুত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে। পাবলিক প্রেতাত্মাদের দু-একজনের পতনের দৃশ্যে এতটাই আনন্দে বেসামাল হয়ে পড়ে যে, নিজেদের গোদের উপর হাজারো দুর্নীতির বিষফোঁড়ার ভয়ানক যন্ত্রণার কথা বেমালুম ভুলে যায়।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য