দুর্নীতিবাজদের বিজয়রথ আর কতদূর

Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper


মাদকের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করার পর চার শতাধিক ব্যক্তি দেশে বিচারবহিভর্‚ত হত্যার শিকার হলেন। এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে দেশ থেকে মাদক চিরতরে নির্মূল হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেল, মাদকের বড় কারবারি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক মাফিয়ারা সবাই বহাল তবিয়তে আছেন। তাদের ওপর একটি ফুলের টোকাও কেউ দিতে পারেনি। সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন সময়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাদকের আমদানি ও ব্যবহার আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। শুধু কক্সবাজারে একজন ওসি মাদক নির্মূলের নামে শতাধিক ক্রসফায়ার করেছেন। তিনি একাই দেশের দুই শতাধিক নাগরিককে হত্যা করেছেন। চলাচলের গতি ‘মসৃণ’ হওয়ায় সীমান্তের মিয়ানমারে মাদক তৈরির কারখানা আরো বিস্তার লাভ করেছে। তাই মাদকপাচারের রুট হিসেবে টেকনাফ এখনো এক নম্বর অবস্থান ধরে রেখেছে।

প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধে সরকারের অবস্থান আরো কড়া। এই সেক্টরে ক্রসফায়ারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সবাই সম্মানিত ব্যক্তি, উচ্চ সামাজিক মর্যাদার, তাদের প্রাণের মূল্য ‘যদু মধু’দের চেয়ে বেশি। তবে এখানে রয়েছে চাকরিচ্যুতি, পদাবনতি ও তিরস্কার। জিরো টলারেন্সের মধ্যে এমন একটি খবরও পাবেন না- সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজকে চাকরিচ্যুতি, পদাবনতি বা তিরস্কারের শিকার হতে হয়েছে। উল্টো খবরই পাবেন, যারাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কিংবা এ ব্যাপারে টুঁ শব্দ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে এ খড়গ নেমে আসছে।

অন্যায় অবিচার অনিয়ম চারদিক গ্রাস করে নিলে হাঁসফাঁস করা মানুষ চায়, শক্তিশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অপরাধী চক্রকে দমন করে তাদের মুক্তি দিক। সবার মনে থাকার কথা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারওয়ার আলমের কথা। কয়েক বছর আগে তাকে কিছুটা হলেও এই ভ‚মিকায় দেখা গেছে। তিনি কিছু সাহসী অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। মজুদদার, ভেজালকারী, ফটকাবাজারি সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিয়েছেন। স¤প্রতি দেখা গেছে ভোজ্যতেলের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি। শুধু যে দাম বাড়ছে এমন নয়; তেল বাজার থেকেও উধাও হয়ে যাচ্ছে। বাজারের দু®প্রাপ্যতাকে অসহনীয় করে বাড়তি দামকে ভোক্তাদের মধ্যে সহনীয় করতে ফটকাবাজারিদের এটি একটি কায়দা-কানুন। এমন অবস্থায় মজুদদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সারওয়ারের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান দরকার।

সেই সময় সারওয়ার জাতীয় হিরোতে পরিণত হন। চারদিকে যখন আপসকামিতা মানিয়ে নেয়ার প্রবণতা, তখন তিনি দেখিয়েছেন অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে অনমনীয়তা। এমন সৎ ও দৃঢ়চেতা একজন কর্মকর্তা জাতির সম্পদ। জাতির প্রয়োজনে তাকে দ্রæততার সাথে পদোন্নতি দেয়াই কাক্সিক্ষত। তার জন্য সংবর্ধনা দেয়া, তাকে পুরস্কৃত করার আয়োজন করা সহযোগী সবার দায়িত্ব। দেখা গেল, প্রশস্তি ও পুরস্কারের বদলে তার পদোন্নতি বন্ধ হয়ে গেল। নিয়মিত পদোন্নতি যখন তিনি পেলেন না সেই বঞ্চনা সইতে না পেরে ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘চাকরি জীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশির ভাগ পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এদেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটাই অন্যায়।’

তিনি এখন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব। ঘটনা হচ্ছে, গত বছর মার্চে সরকারি কর্মকর্তাদের সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সারওয়ার আলমকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। ওই বছর ৮ মার্চ তিনি হতাশ হয়ে ওই মন্তব্য করেন। এদিকে ফেসবুক পোস্টকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘অকর্মকর্তাসুলভ’ আচরণ ঠাওর করেছে। একজন যোগ্য ব্যক্তির বঞ্চনা হিসেবে দেখেননি। তাদের মতে, এটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য। জনপ্রশাসনের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœœ হওয়ায় বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে ‘তিরস্কার’ দণ্ড দেয়া হয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে বিশেষভাবে বিতর্কিত রেলওয়ে। ‘কালোবিড়াল’ খ্যাত এই সেক্টরের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়োগবাণিজ্য সবসময় আলোচনায় রয়েছে। সর্বশেষ, বিনাটিকিটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে চেকার বরখাস্ত-পুনর্বহাল ও তার কিছুদিন আগে এক টিকিট কালোবাজারি আটকের ঘটনা ঘটেছে। এই মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীরের কথা এতদিনে আমরা ভুলে গেছি। দুর্নীতি ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রাখেন। যাত্রীভোগান্তি বন্ধ, রেলের লোকসান বিলোপ ও নিয়োগবাণিজ্য নির্মূল করতে তার জোরালো উদ্যোগ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তারও পরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনানুষ্ঠানিক এক প্রস্তাব দিয়ে বসেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যদি কাছে পেতাম তাহলে বলতামÑ স্যার, আমাকে ১০ জন অফিসার দেবেন। আমি বাছাই করব। একটা উইং করব। সব ক্ষেত্রে, সব মন্ত্রণালয়ে, সব দফতরে, সব অধিদফতরে, প্রত্যেকটা অ্যাড্রেস করব আমরা ১০ জন, সব বিষয়ে মানুষের চোখের পানি দূর করার জন্য তিন মাস সময় নেব। যদি করতে না পারি, সবার মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, যেকোনো শাস্তি মাথা পেত নেব।’ বিষয়টি তিনি আরো ব্যাখ্যা করেছিলেন সেই সময়।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবেগঘন অবস্থান ব্যক্ত করার অল্প কিছুদিন পর ২০২০ সালের আগস্টে তাকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করা হয়। ইংরেজি শব্দগুলো আকর্ষণীয় ও আগ্রহ-উদ্দীপক হলেও এই স্ট্যাটাসকে কর্মকর্তাদের কেউ পছন্দ করেন না। অর্থাৎ কাউকে যখন ওএসডি করা হয় মূলত এতে তিনি অসন্তুষ্ট বঞ্চিত হন। এর পরপরই কবীর জানান, এমন পদায়নের জন্য তাকে আগে সতর্ক করা হয়নি কিংবা তাকে কোনো নোটিশও দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। জানা যাচ্ছে, রেলওয়েতে বদলি হওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখানে দায়িত্ব পালন করার সময় কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির ভেজাল ও ক্ষতিকর পণ্য আটকে দেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে জোরালো ভ‚মিকা রাখেন। এ ছাড়া একই ধরনের জনবান্ধব কাজের বিস্তারিত একটা তালিকা জানা গেল, যা তিনি এর আগে করে এসেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ পাওয়া গেল না।

চারদিকে দাপাদাপির মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক চুপচাপ। এমনকি খোদ এ প্রতিষ্ঠানটি ও তার কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। এদের মধ্যে আদালতের দণ্ডভুক্তও রয়েছেন। এখানেও পাওয়া গেল এক ব্যতিক্রমী চরিত্র উপ-সহকারী পরিচালক মো: শরীফ উদ্দিন। তিনি আলোচনায় এসেছেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্ষমতাবান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাহসী ভ‚মিকা নিয়ে। শরীফ দুদকের নিচের সারির একজন কর্মকর্তা। তিনি ডিসি-এসপি-এমপি ভ‚মিখেকো চক্রের শত শত কোটি টাকার জমি হাতিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। তার এমন শক্ত অবস্থান সম্ভবত কারো পছন্দ হয়নি। কোনো কারণ ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে তাকে প্রভাবশালীরা হুমকি ধমকি দিয়েছেন। সেগুলোর একে একে বাস্তবায়ন হয়েও চলেছে। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদার রেখেছেন যাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সুযোগ পান।

দুর্নীতি বিপুল বিজয়ী চিত্রটি উপরের তিনটি ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে। এসব ঘটনায় প্রত্যেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে লাঞ্ছিত বঞ্চিত হচ্ছেন ও কেউ চাকরি খুইয়েছেন। এমন ঘটনা প্রশাসনে আরো বহু পাওয়া যাবে। তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। এই বিপরীত চিত্র ভালো কিছু ঘটনার নয়। এগুলো হলো, দুর্নীতি অন্যায় অনিয়ম করে কিভাবে শাস্তি মওকুফ পেয়ে যাচ্ছে, সে ধরনের ঘটনা। কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন ও তার দুর্নীতিবাজ সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলাটি এমনই এক দৃষ্টান্ত। জেলার স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের ওপর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ গভীর রাতে চড়াও হন ডিসির লোকেরা। ঘর দুয়ার ভেঙে ধরে এনে বেধড়ক মারধর করা হয় তাকে। মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আধা বোতল মদ ও সামান্য গাঁজা পাওয়ার অভিযোগে দণ্ড দিয়ে দেয়া হয়। ওই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে ডিসি ও আরডিসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হয়। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। ডিসিকে দুই বছর বেতন স্থগিত রাখা ও আরডিসিকে একধাপ পদাবনতির শাস্তি দেয়া হয়। কৃত অপরাধের তুলনায় তাদের শাস্তি ছিল লঘু। অথচ সাংবাদিক এই ডিসির অন্যায় কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ঠিক কাজটি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই লঘু দণ্ডও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর করা হলো না। প্রেসিডেন্টের ক্ষমার আওতায় দুই ধাপে দু’জনকেই দণ্ড মাফ করে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

জনধারণা বা পাবলিক পারসেপশন তৈরি হয় আশপাশ থেকে। বাংলাদেশের বিপুল উন্নয়নের গল্প রাত-দিন জপছেন ক্ষমতার আশপাশের লোকেরা। জাতিশুদ্ধ সবাই কেন এই কোরাসে তাল মেলায় না, সে জন্য ক্ষমতাসীনরা গোস্বা। তাদের ভাষায়, নিন্দুকেরা উন্নয়ন দেখছে না চোখে। বিগত এক দশকে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যয়ের যে চিত্র সামনে আসছে সেটা বিস্ময়কর। সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কার ব্যয়ে আমরা আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে দিয়েছি। অথচ আমাদের শ্রমমজুরি এসব দেশের এক-দশমাংশে ওঠেনি। একজন মজুরকে দিনভর খাটানোর পর আমরা যদি ৫০০ টাকা মজুরি দেই তাহলে এসব দেশে দেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। আমাদের মজুরি কাঠামো ভারত পাকিস্তানের সাথে মেলে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসের মূল্য এসব দেশের মতোই। তাহলে কেন একটি রাস্তা নির্মাণব্যয় ইউরোপের চেয়ে বেশি?

আবার এগুলো নির্মাণে অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। বিশেষ করে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে। মাঠের মাঝে কোনো রাস্তা নেই, জনবসতি নেই, ব্রিজ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ব্রিজ বানানো হয়েছে যেখানে আদৌ কোনো নদী খাল কিংবা নর্দমা নেই। আবার দেখা গেছে, একটি ব্রিজের অভাবে হাজার হাজার মানুষ ভুগছে; সেখানে কোনো ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি, পাশে মাত্র একটি পরিবারের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কিভাবে অনুমোদন পেল সরকার তা অনুসন্ধান করে না। সংবাদমাধ্যমও এসব নিয়ে উৎসাহ দেখায় না; আগে যেমন পান থেকে চুন খসলেই সম্পাদকের কলমের কালি রক্ত হয়ে ঝরেছে। তবে সামাজিকমাধ্যম হয়ে উঠছে এসব উদ্ভট দুর্নীতি প্রকাশের একমাত্র জায়গা। ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্তরা প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এ থেকে সবাই মিলে মধু খায়।

উন্নয়ন অবকাঠামোর বহু বড় প্রকল্পও উদ্দেশ্যহীন; টেকসই পরিবেশসম্মত নয়। পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প যখন বিশ্বে পরিত্যক্ত হচ্ছে আমরা তখন এটি নির্মাণ করছি। একই প্রকল্প রাশিয়া অন্যদেশে অর্ধেক দামে করেছে। পদ্মায় রেলসেতুসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্প রয়েছে যেগুলোর ব্যয় অকল্পনীয়। এসব ভুতুড়ে প্রকল্পের রহস্য কিছুটা আঁচ করা যাবে দেশ থেকে মুদ্রাপাচারের প্রবণতা থেকে। বৈদেশিক পণ্য বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে গড়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ হিসাবের শেষ বছরটি ছিল ২০১৬। সেই বছর এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এরপর থেকে এসব ব্যাপারে আর কোনো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। পাচারকারী চক্র যারা সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে আছে, তারা তথ্যপ্রাপ্তির সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সম্ভবত পরের চার বছরে কম পক্ষে আরো চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এ ছাড়া হুন্ডিসহ নানা অবৈধ চ্যানেল তো আছেই। এ কারণেই কি ‘বেগমপাড়ায়’ ভিড় বাড়ছে?

জনসাধারণের সামনে বিপুল দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে সৎ দক্ষ দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত, পদবঞ্চনা ও তিরস্কারের সংস্কৃতি। অন্যদিকে যারা দুর্নীতি অনিয়ম অবৈধ কাজ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে, সরকারের নিজস্ব তদন্তে তা প্রমাণিত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত দণ্ড নেই। লঘু দণ্ড দেয়া হলেও বিশেষ কায়দা করে তা-ও মাফের ব্যবস্থা হচ্ছে। অপরাধ করে যতটা সহজে মাফ পাওয়া যাচ্ছে, ভালো কাজ করে রোষানলে পড়ে বঞ্চনা ও হেনস্তার মধ্যে পড়ার পর ততটা সহজে মুক্তি মিলছে না। দুদকের শরীফ, ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার ও রেলের মাহবুবের কেসগুলো এই পর্যায়ের। সরকার এই যাত্রায় বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোলমডেল’ বলতে চাইলেও জনসাধারণের কাছে সময়কালটা ‘দুর্নীতির বিপুল বিজয়ের’।
[email protected]