দুর্ঘটনাস্থলে শোকার্তদের ভিড়

logo

এস এম মিন্টু
মুদ্রিত সংস্করণ
বিমান দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা
বিমান দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা |নয়া দিগন্ত
  • দুর্ঘটনার তথ্য গোপন বা লুকানোর কিছু নেই : বিমানবাহিনী প্রধান
  • সেনাবাহিনীর গাফিলতি থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : আইএসপিআর

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতর যে ভবনটিতে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতস্থানের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ হাজার হাজার মানুষ সেখানে যাচ্ছেন আসছেন। মর্মান্তিক এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন। গত সোমবারের ঘটনায় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিশুসহ ২৩ জন। সোমবার গভীর রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরো আটজনের। বার্ন ইউনিটে ভর্তি ৪৪ জন, আইসিইউতে রয়েছেন ১২ জন।

এ দিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্টকে কেন্দ্র করে নানা জল্পপনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি দুর্ঘটনা নয় পরিকল্পিত ঘটনা। দুর্ঘটনার তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট দিতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে গতকাল বিমানবাহিনীর প্রধান বলেছেন, দুর্ঘটনার তথ্য গোপন বা লুকানোর কিছু নেই। সবাইকে গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

অপর দিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর উদ্ধার তৎপরতায় অনভিপ্রেত ঘটনার কোনো প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

আরো ৮ জনের মৃত্যু : ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে আরো আটজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরের দিকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা: শাওন বিন রহমান। নতুন করে নিহতরা হলো- এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩), সায়ান ইউসুফ (১৪), শিক্ষিকা মাসুকা বেগম (৩৭) ও বাপ্পি (৯)। তাদের প্রত্যেকের শরীর ৮৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছিল। ডা: শাওন জানান, এরিকসনের শরীরের ১০০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সায়ানের ৯৫ শতাংশ, নাজিয়ার ৯০ শতাংশ, আরিয়ানের ৮৫ শতাংশ, শিক্ষিকা মাসুকা বেগমের ৮৫ শতাংশ ও বাপ্পি ৩৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। এ ছাড়া আরো দু’জন মারা গেছে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।

এ দিকে স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা বেড়েই চলছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, মৃতের সংখ্যা লুকানো হয়েছে। এই সরকার পুনরায় লাশের রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা প্রকৃত নিহতের হিসাব চাই।

তথ্য গোপন করার কোনো বিষয়ই নাই : বিমানবাহিনী প্রধান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহত ও নিহত নিয়ে যে গুজব চলছে তাতে কান না দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তিনি বলেন, তথ্য লুকোনোর বা গোপন করার কোনো বিষয়ই নাই।

গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে বীর উত্তম এ কে খন্দকার বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো: তৌকির ইসলামের ফিউনারেল প্যারেড শেষে বিমানবাহিনী প্রধান সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিমানটা যখন পাইলটের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল সে তার সর্বোপরি চেষ্টা করেছে বিমানটি খালি জায়গায় নামানোর জন্য। তবে তার শেষ চেষ্টাটা সফল হয়নি। বিমানটা আছড়ে পড়ে বিল্ডিংয়ের ওপরে। এটা করতে গিয়ে বিমান থেকে বের হওয়ার যে পদ্ধতি সেটা বিলম্বিত হয়ে যায়, তার ফলে সে তার নিজের জীবনও উৎসর্গ করেছে। একটু আগে আমরা তার নামাজে জানাজা পড়লাম।

সরকারের পাশাপাশি বিমানবাহিনীও হতাহতদের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিমানবাহিনী প্রধান। তিনি বলেন, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমাদের যা যা করা দরকার আমরা করব। ইতোমধ্যে গতকালই আমরা একটা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা অতি দ্রুত তদন্ত করে বের করবে কী ঘটেছিল। তার ভিত্তিতে যদি কোনো ভুল-ত্রুটি থাকে আমরা ভবিষ্যতে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।“

সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিমানবাহিনী প্রধান দেশবাসীকে একটা বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দয়া করে আপনারা দেশের এই বিপদের সময় সোস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গুজবে কান দেবেন না। একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অপরিহার্য। দয়া করে গুজব ছড়িয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের স্তম্ভকে দুর্বল করে দেবেন না। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আপনাদের সবার মতো আমারও হৃদয় ভেঙে গেছে। আমার একটা জরুরি সফর ছিল। আমি ওই বিমানবন্দর থেকে আজ সকালে দ্রুত চলে এসেছি। যখন সংবাদ পেয়েছি আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।

একটা অশান্তি বিরাজ করছিল। এটা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, আমাদের কাছে যখনই আহত ও নিহতের আপডেট আসছে সেটা আমরা সাথে সাথে আইএসপিআরের মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি।

এখানে তথ্য লুকোনোর বা গোপন করার কোনো বিষয়ই নাই। কাদের কাছ থেকে লুকাব? আপনারা আমাদের দেশের মানুষ, আমরাও এ দেশের মানুষ। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। আমরা চেষ্টা করছি এটাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে। এখানে যদি আমাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করে, তাহলে কারোরই ক্ষতি হবে না, আমাদের দেশের ক্ষতি হবে।

আইএসপিআর : উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনাকালে অনভিপ্রেত ঘটনা প্রসঙ্গে গত সোমবার বেলা আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিরীহ নাগরিক হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকটবর্তী ক্যাম্প থেকে সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বিতভাবে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালানো হয়। উদ্ধারকার্যক্রম চলাকালে দুর্ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ব্যাপক ভিড় দেখা দেয়, যা ইভাকুয়েশন ও রেসকিউ কার্যক্রমকে বারবার ব্যাহত করে। সেনাবাহিনীর সদস্য এবং মাইলস্টোন স্কুলের স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ বারবার অনুরোধ করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় সময়মতো আহতদের সরিয়ে নেয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে প্রাণহানির ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। সেনাসদস্যরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। উল্লেখ্য, এই উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত ১৪ জন সেনাসদস্য শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থেকে পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের সাথে কর্তব্য পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নিহতদের কবরের জায়গা নির্ধারণ প্রধান উপদেষ্টার

বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য মাইলস্টোন স্কুলের কাছে উত্তরা ১২ নম্বরে সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে এই কবরস্থান তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাতাসে পোড়া গন্ধ, উৎসুক মানুষের ভিড়

বাতাসে পোড়া গন্ধ : মাইলস্টোন বরাবর হাঁটলেই হাতের ডান দিকে অর্থাৎ পূর্ব পাশেই হায়দার আলী ভবন। যেখানে ভূপাতিত হয়েছে যুদ্ধ বিমান। সামনের পুরো অংশটা ফিতা দিয়ে ঘিরে ক্রাইম সিন করে রাখা হয়েছে। উৎসুক জনতা ও স্কুলের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা সেই ফিতা উপেক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভেতরে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন। অধিকাংশই পর্যাপ্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে ভেতরের চিত্র দেখতে পারছেন না। একটু সামনে এগোলেই অবশ্য এই প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। তবে ভেতরের চিত্র খুব বেশিক্ষণ দেখতে পারছেন না কেউ। কারণ, ভবনটির কাছাকাছি গিয়ে অল্প কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই ঝাঁঝালো গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। তাই অনেকেই টিকতে না পেরে পিছিয়ে আসছেন।

নাক চেপে পিছিয়ে আসা এমন একজন বলছিলেন, ‘গন্ধে নাক পুড়ে যাচ্ছে। আমরা গন্ধই নিতে পারছি না। অথচ এই ভবনেই আগুনে পুড়ে মরেছে বাচ্চাগুলো। আহ না জানি কত কষ্ট হয়েছে ওদের। যারা বেঁচে আছে আল্লাহ তাদের কষ্ট কমায়ে দিক।’ এই ব্যক্তি উত্তরার একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। তার দিনের অধিকাংশ সময়ই অতিবাহিত হয় কোমলমতি বাচ্চাদের সাথে। তাই গতকাল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসেছিলেন এই স্কুলের বাচ্চাদের প্রতি অজানা এক টানে। ভেতরের দৃশ্য দেখে বেশ আবেগি হয়ে পড়ায় তার নামটা জানা গেল না। আলাপ শেষে ভবনের দিকে এগিয়ে একটি কাঠের উপরে দাঁড়িয়ে ভেতরে তাকাতেই চোখে পড়লো, বাচ্চাদের টিফিন ক্যারিয়ারের বাটি ও ঢাকনা এলোমেলো পড়ে আছে। ছড়িয়ে আছে খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ, আধা বোতল পানি ও পলিথিনে মোড়ানো খাবার ভর্তি আরেকটি টিফিন ক্যারিয়ার রাখা একটি চেয়ারের ওপর। পাশেই এক নারী গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। বের করে আনলেন, ভেজা একটি খাতা ও বই। খাতার ওপরের পাতায় মার্কার কলমে বাংলায় লেখা, ‘আফসান ওহী।’ তার নিচে লেখা সমাজ, ব্র্যাকেটে ইংরেজিতে লেখা ডব্লিউ-এইচ। মানে এটা ওহীর বাড়ির কাজের খাতা।

যে নারী খাতা খুঁজে বের করেছেন তার সন্তানও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। আর যাকে দেখাচ্ছিলেন তিনি মাইলস্টোন কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক মো: শাহাদাত হোসেন। তার কাছেই জানা গেল খাতা খুঁজে বের করা নারীর নাম, রাজিয়া সুলতানা লিপি। এরপর তারা নিজেদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে আলাপ করছিলেন। এর ফাঁকেই শাহাদাত হোসেন নিচে তাকিয়ে একটি খাতার ছেড়া পাতা হাতে তুলে নিলেন। সেই পাতায় লেখা, মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুলের অধ্যক্ষ বরাবর অনুপস্থিতজনিত ছুটির জন্য আবেদনপত্র। আবেদনকারী তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মালিয়া আফরিন। আধভেজা ও ধুলোবালি জড়ানো কাগজটি পরম মমতার পরিস্কার করছিলেন এই শিক্ষক। যেন, প্রিয় ছাত্রের স্পর্শ অনুভব করছেন। এমতাবস্থায় আরো তিন থেকে চারজন বর্তমান শিক্ষার্থী এলেন। সবাই নিউ টেনে পড়ছে। শাহাদত হোসেনকে সালাম দিয়ে তার হাতের কাগজটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেন। এরপর চারজনের মধ্যে থেকে আবু সাদাত নামে এক শিক্ষার্থী বলে উঠলেন, ‘ছুটির দরখাস্ত লিখছে। কে জানে ছুটি চাওয়া ক্লাস থ্রিতে পড়া এই মেয়েটার কপালে কী ঘটেছে গতকাল (সোমবার)।’

সাদাতের মুখের কথা শেষ না হতেই আলফি নামের তার এক সহপাঠি বললেন, ‘মনে হয় না ভালো কিছু হয়েছে। গতকাল ঠিক এই জায়াগায় দাঁড়িয়ে টু, থ্রীতে পড়া পাঁচজনকে আমি উদ্ধার করেছি। নিজের চোখের সামনে ওদের পুড়তে দেখেছি। যে অবস্থা ছিল, তাতে অক্ষত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আটকাপড়া অনেকেই ছাদে উঠে গেছিল। সেখান থেকে দুই-একজন লাফ দিয়ে নিচে পড়েছে!’ এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে শাহাদাত হোসেনের দিকে তাকিয়ে আলফি আবার বললেন, ‘স্যার এত বড় স্কুল। কত ছাত্র-ছাত্রী এখানে আসে। অথচ কোনো ভবনেই ইমার্জেন্সি গেইট নাই। এটা রাখলে কী খুব ক্ষতি হয়ে যেত?’ আলফিসহ বাকি সবাই স্যারের দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষায়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি।

মাইলস্টোন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, তখন বেলা ১টা ১০ মিনিট। হঠাৎ করে শব্দ শুনতে পাই। সে সময় আমি লাইব্রেরিতে ছিলাম। বের হয়ে দেখি একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দোতলা ভবনের পাশে পড়ে আছে। বিমানটি আছড়ে পড়তেই ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। দুর্ঘটনায় ক্লাসে থাকা শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে হতাহত হয়।

একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী কাব্য জানায়, বিস্ফোরণের সাথে সাথেই আগুন ধরে যায়। যে ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় সেটি দোতলা ছিল। ক্যানটিনের পাশেই ওই ভবনটি। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস হতো। কাব্য আরো জানায়, আহত অনেককে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আহতদের জন্য প্রচুর রক্ত সংগ্রহ করেছি। রক্ত দিতে আগ্রহীদের অ্যাম্বুলেন্সে নেয়া হয়েছিল। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে বিধ্বস্ত প্লেনের অংশবিশেষ দেখে বোঝা যাচ্ছে বিমানটি স্কুল ভবনের সামনে পড়ে ছিটকে ভবনের সিঁড়ির সামনে চলে যায়। আর এর দুটি পাখার আঘাতে ধ্বংস হয় শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ দুটি ক্লাসরুম। আক্রান্ত ওই দুই কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহতদের হাত পুড়ে গেছে, মুখ ও কানও ঝলসে গেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ঘটনা এতটাই আকস্মিক ছিল যে কারোরই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ ছিল না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here