ইসমাইল আলী: আদানির বিদ্যুতের দাম নিয়ে উৎপাদন শুরুর আগেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে চিঠি চালাচালি ও বৈঠক করে আদানির প্রতিনিধিদল। অবশেষে বিদ্যুতের দাম কমাতে সম্মত হয় ভারতের কোম্পানিটি। পায়রা ও রামপালের মধ্যে সর্বোচ্চ বিলের চেয়ে শূন্য দশমিক ০১ (০.০১) সেন্ট কম নেয়ার কথা জানায় আদানি। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর পর প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যে দুই মাসই বেশি হারে বিল জমা দিয়েছে আদানি।
পিডিবির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে জানানো হয়েছে, পিডিবির ২০০৭তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনক্রমে আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের দাখিলকৃত সাইড লেটার সই করা হয়েছে। সাইড লেটারে এনার্জি পেমেন্টের বিষয়ে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সে শর্ত না মেনে আদানি বিল জমা দিয়েছে। এতে দুই মাসে প্রায় ৯ দশমিক ০৯ মিলিয়ন ডলার বিল বেশি জমা দিয়েছে কোম্পানিটি, যা পরবর্তী মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
সাইড লেটারের মূল বক্তব্য ছিল, আদানির প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় গত ৬ এপ্রিল। সেদিন থেকে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে প্রত্যেক মাসে আদানির বিদ্যুতের এনার্জি পেমেন্ট (জ্বালানি ব্যয়+রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়) ওই সময়ে চলমান বাংলাদেশের বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহের (পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ি ও বাঁশখালী) প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের এনার্জি পেমেন্টের সঙ্গে তুলনা করা হবে।
কোন মাসে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের এনার্জি পেমেন্ট বাংলাদেশের বর্ণিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের সর্বোচ্চ এনার্জি পেমেন্টের চেয়ে বেশি হলে উক্ত মাসে আদানির এনার্জি পেমেন্টে সমন্বয় প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে আদানির প্রতি ইউনিটের এনার্জি পেমেন্ট বাংলাদেশের বর্ণিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ এনার্জি পেমেন্টের চেয়ে শূন্য দশমিক ০১ (০.০১) সেন্ট হ্রাস করে সংশোধিত এনার্জি পেমেন্ট হিসাব করা হবে। এর ভিত্তিতে আদানিকে প্রদত্ত এনার্জি পেমেন্টের বাড়তি অর্থ পরবর্তী মাসের ইনভয়েস হতে সমন্বয় করা হবে।
পিডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ মাসের মধ্যে (এপ্রিল-আগস্ট) প্রতি মাসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় সবচেয়ে কম ছিল। তবে দুই মাসে রামপালের উৎপাদন ব্যয় আদানির চেয়ে কম ছিল। এর মধ্যে এপ্রিলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল আট দশমিক ১৭ ইউএস সেন্ট। ওই মাসে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় ছিল আট দশমিক ৫১ সেন্ট ও রামপালের ৯ দশমিক ৮৭ সেন্ট। এপ্রিলে আদানির বিল রামপালের চেয়ে কম থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি।
পরের (মে) মাসে পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ইউনিটপ্রতি সাত দশমিক ৫৯ সেন্ট। ওই মাসে আদানির কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল আট দশমিক ৪৮ সেন্ট ও দ্বিতীয় ইউনিটের আট দশমিক ৫৪ সেন্ট। আর রামপালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল আট দশমিক ৪২ সেন্ট। মে মাসে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ইউনিটে বিল বেশি নেয়া হয় দুই লাখ ৯২ হাজার ৬৯৬ ডলার ও দ্বিতীয় ইউনিট ৩৬ হাজার ১৯৩ ডলার।
জুনে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় আরও কমে দাঁড়ায় ইউনিটপ্রতি সাত দশমিক ১৫ সেন্ট। জুনে আদানির কেন্দ্রে প্রথম ইউনিটে গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল সাত দশমিক ৭৫ সেন্ট ও দ্বিতীয় ইউনিটে সাড়ে সাত সেন্ট। আর রামপালে জুনে গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল আট দশমিক ৩৩ সেন্ট। ওই মাসে আদানির বিল রামপালের চেয়ে কম থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি।
জুলাইয়ে পায়রায় ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল পাঁচ দশমিক ৯৪ সেন্ট, আদানির ছয় দশমিক ৭৮ সেন্ট ও রামপালে সাত দশমিক ৭৪ সেন্ট। সে মাসেও আদানির বিল রামপালের চেয়ে কম থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি। আর আগস্টে পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি কমে দাঁড়ায় পাঁচ দশমিক ২৭ সেন্ট। এ সময় রামপালে গড় ব্যয় ছিল পাঁচ দশমিক ৯৩ সেন্ট এবং আদানির ছয় দশমিক ৮৭ সেন্ট। এতে আগস্টে আদানি ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ ডলার বেশি বিল জমা দিয়েছে।
সব মিলিয়ে আদানি বেশি বিল জমা দিয়েছে ৯০ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ ডলার বা প্রায় ৯ দশমিক ০৯ মিলিয়ন ডলার। এ পরিমাণ বিল কর্তনযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে আদানির সঙ্গে তুলনা করা রামপালের বিল যদি পরিবর্তন হয়, তাহলে আদানির কর্তনযোগ্য বিলও পরিবর্তন হবে বলে পিডিবির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, পায়রা, আদানি ও রামপালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত জমা দেয়া বিলের সঠিকতা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যদি সবগুলো বিল ঠিক থাকে। তাহলে আদানির পরবর্তী মাসের বিল থেকে বাড়তি ৯ দশমিক ০৯ মিলিয়ন ডলার সমন্বয় করা হবে।
সূত্র : শেয়ার বিজ