বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিপিবি) নেতৃত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে বিরোধ। এরই জেরে দলটির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খানকে স্থায়ী অব্যাহতি ও সদস্যপদ ছয় মাস স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মনজুরুল আহসান খানের দাবি, দল কুক্ষিগত করার অংশ হিসেবে সুবিধাবাদী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধনে সিপিবি ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ তাঁর। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মনজুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পুরোটা বিষয় অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাজনিত; এখানে অন্য কারণ খোঁজা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নানা ইস্যুতে দীর্ঘদিন মতভেদ চলে আসছে মনজুরুল আহসান খানের। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি সিপিবির বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দিতে ‘রিকুইজিশন সম্মেলন’ আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন জানান। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা, কর্মসূচিতে লোকসমাগমে ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেন তিনি। এর পর ২৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটি জরুরি সভা ডেকে মনজুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। নানা কারণে আগেও মনজু পাঁচবার দল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, সদস্যপদ স্থগিত থাকাকালে মনজুর কার্যকলাপ সম্পর্কে নতুন অভিযোগ এলে আবারও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য সিপিবি জরুরি সভার সিদ্ধান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানালেও, তাতে দলের সাবেক সভাপতি মনজু ঠিক কী করেছেন বা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী, তা উল্লেখ নেই।
মনজুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়াও পুরো বিষয় তদন্ত করছে সিপিবির অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিশন। পাঁচ সদস্যের এ কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি।
মনজুরুল আহসান ৬০-এর দশক থেকে বাম রাজনীতি ও শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি টানা ১৩ বছর সিপিবির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে দলের কংগ্রেসে উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। এর পর আরও দুটি কংগ্রেসে একই পদে নির্বাচিত হন তিনি।
মনজুরুল আহসান খান সমকালকে বলেন, ‘সুবিধাবাদী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দীর্ঘদিন সিপিবিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে বা চেষ্টা করছে। তাদের কয়েকজন আগেও দল বিলুপ্ত করে গণফোরাম, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে গিয়েছিলেন। এখন তারাই দেশি-বিদেশি সংস্থার যোগসাজশে সিপিবিকে ধ্বংস করতে চাইছেন। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় আমাকে উপদেষ্টা থেকে অব্যাহতি ও সদস্যপদ স্থগিত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত মেনে আমি জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে শ্রমিক আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অন্যান্য বিষয়ের মতো নিয়মতান্ত্রিক এ আন্দোলনের বিরোধিতা করছে। এমনকি সিপিবি কার্যালয়ে সংগ্রাম পরিষদের সভার অনুমতি চেয়েও পাইনি। অন্যত্র সভা করেছি। সেখানে তাদের (কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব) পক্ষের নেতারাও যুক্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকে আমার অবস্থানের পক্ষে।’
এ বিষয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদসহ মনজুরুল আহসান খানের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়ায় আমরা প্রকাশ্যে আনিনি। তিনি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার মাধ্যমে এসব প্রকাশ্যে এনেছেন। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এ কাজের জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ ‘সুবিধাবাদী নেতৃত্ব’ ও ‘দেশি-বিদেশি সংস্থার ইন্ধনে দল ধ্বংস’ সংক্রান্ত অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ‘দলের কংগ্রেসে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি। আমরা কী করেছি বা করছি তা মূল্যায়ন করবে জনগণ ও নেতাকর্মীরা। এখানে ব্যক্তিগতভাবে কে কী বললেন, তা আমরা বিবেচনায় নিতে চাই না।’
প্রিন্স আরও বলেন, ‘শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ নিয়ে আমাদের তেমন ধারণা নেই। ফলে বিরোধিতার প্রশ্ন কেন আসবে? আর আমাদের কার্যালয় যে কেউ ভাড়া নিয়ে সভা করতে পারেন।’
samakal