ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠকে অংশ নিতে আজ বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে থাকা ৯০ দেশের অনাবাসী দূতের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচন এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ করা নিয়ে সরকারের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা তুলে ধরবেন তিনি। আগামীকাল শুক্রবার এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, দিল্লিতে বাংলাদেশের অ্যাক্রেডিটেড ৯০ দেশের দূতাবাস রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে এসব দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। তাদের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হবে। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি ও জাতীয় নির্বাচন, বিশেষ করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানানো হবে।
সফরে প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে ভারতে যাচ্ছেন কিনা– উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সামনে যেহেতু নির্বাচন রয়েছে, তাই ভারতের পক্ষ থেকে কিছু জানার থাকলে তা অবহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা করে কোনো বার্তা নিয়ে যাওয়া আমাদের এজেন্ডায় নেই।
নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রতিবার ঢাকা-দিল্লির পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের কারণ জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্বাচন তো দেরি আছে। অনেক কিছু ধারণা করা যায়। তবে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারিত। এখানে কোনো গোপন বিষয় নেই। ঢাকা-দিল্লির আলোচনার রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, সামনে ভারতের নির্বাচন, বাংলাদেশেরও নির্বাচন। নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দুই দেশের সম্পর্ক যাতে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে, নির্বাচন যাতে এখানে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে– তা আলোচনায় আসবে।
মার্কিন নতুন শ্রমনীতি নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা হবে কিনা– উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সাধারণত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তৃতীয় দেশের আলোচনার সুযোগ কমই রয়েছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি ভারত আলোচনায় নিয়ে এলে আমরা প্রস্তুত।
গত ১০ নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে দিল্লি ও ওয়াশিংটন।
নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলে নীতিরও পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফরটি আগাম ও সাহসী হয়ে যাচ্ছে কিনা– উত্তরে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক একটি ধারাবাহিক পর্যায়ে রয়েছে। এর সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক দেখছি না।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, শুক্রবার বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল ভারত যাবে। প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এটি একটি নিয়মিত বৈঠক, সেখানে দুই দেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বিষয়গুলো নিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কানেকটিভিটি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অভিন্ন নদী, উন্নয়ন সহায়তা, প্রকল্প, কনস্যুলার, সংস্কৃতি সহযোগিতাসহ আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক এবং বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে হালনাগাদ তথ্য দিল্লির কাছে তুলে ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে ভারতের সহযোগিতা বাংলাদেশ সবসময়ে চেয়ে এসেছে।