ফরহাদ মজহার | February 27, 2020 | Facebook
দিল্লিতে যা ঘটছে তাকে স্রেফ দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক সংঘাত বলা মারাত্মক ভুল। একে আমি গণহত্যার রিহার্সেল বলছি। একারণে যে উপমহাদেশব্যাপী ট্রাম্প-মোদী আঁতাতের আগে থেকেইএই রিহার্সাল চলেছে। ভারতে মুসলমানদের টার্গেট করে ঘৃণা প্রচার এবং নির্মম হত্যা নতুন কিছু নয়। তফাত হচ্ছে আরও পরিকল্পত ও ব্যাপক হারে গণহত্যার শক্তি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ও বিজেপি অর্জন করেছে। যে দানব ভারত তৈরি করেছে তাকে আর বোতলে ঢোকানো যাবে না। সেকুলারিজম ও গান্ধীর বাঁশী বাজালে কাজ হবে না। টু লেইট!
ধর্ম নিরপেক্ষ মহান গণতান্ত্রিক ভারতের ইমেজের আড়ালে আর এস এসের মতাদর্শিক প্রচার, খুনি সংগঠন তৈয়ারি ও প্রশিক্ষণ কি নতুন? না, মোটেও নতুন নয়। ইতিহাস পড়ুন। ইতিহাস জানুন। তাই বারবার মনে করিয়ে দেওয়া দরকার মুসলমান জনগোষ্ঠিকে টার্গেট করে হিন্দুত্ববাদী হত্যাযজ্ঞের এই প্রস্তুতি আজকের নয়, দীর্ঘকাল আগে থেকেই তার যাত্রা। টার্গেট করে হত্যাকে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে।
তো নাহয় বললেন। ঠেকাবেন কিভাবে? আগে তো কথা শোনেন নি, এখন কী লাভ! আগে গণহত্যার রিহার্সেল আমাদের চোখের আড়ালে ছিল। একে তখন স্রেফ সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে ভুল বুঝেছিলেন। আমি হিন্দুত্ববাদ বলেছি বলে পালটা আমাকে নিন্দা করেছেন। অথচ হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদ এক জিনিস না। ভেবেছিলেন গান্ধীর মন্ত্র পড়িয়ে দিলে কাজ হবে। ভাই ও বোনেরা, সেকুলারিজম, সহনশীলতা আর গান্ধীর বাণী বেইচা গণহত্যা ঠেকাতে পারবেন না। সেকুলারিজম ছেঁড়া ত্যানার মতো, যার দ্বারা এখন আর লজ্জাস্থানও ঢাকা যায় না।
বাংলাদেশের বাঙালি জাতিবাদীদের ইসলাম ঘৃণা ও বিদ্বেষ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রচারের বাইরের কিছু না। বাংলাদেশের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াও বাংলাদেশী নিধনের আগাম প্রস্তুতি। অচিরেই আমরা দেখব, এই হত্যাযজ্ঞ শুধু ভারতে নয় কিম্বা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও না, বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও শুরু হয়েছে। ডিজিটাল যুগে হত্যাযজ্ঞের রিহার্সাল দৃশ্যমান হচ্ছে কেবল। পূর্ণ গণহত্যার রূপ অচিরেই দেখবেন। যদি ঠেকাতে চান, জেগে উঠুন।
কিন্তু কি করবেন? ময়দান যদি ইসলাম বনাম হিন্দুত্ববাদের লড়াই হিশাবে সাজানো হয় তাহলে মজলুমের পক্ষে থাকুন। উপমহাদেশে আপনার জন্য ‘ইসলাম’ কোন আইন্ডেন্টিটি না, হিন্দুত্ববাদী হত্যাযজ্ঞের টার্গেট জনগোষ্ঠিকে রক্ষার এটাই এখনকার একমাত্র বর্ম। আপনার হাতে আর কিছু নাই। লিবারেলরা আপনার জন্য কোন ব্যবস্থা রাখে নাই। মার্কসবাদীরা কার্লকে হাইড পার্কে কবর দিয়া দিছে মরার পরপরই। পচে গেছে। হায় মার্কস!
যারা এখনও হিন্দুত্ববাদী গণহত্যার প্রস্তুতি যজ্ঞ বুঝতে অক্ষম তারা ২০১৫ সালে প্রচারিত আল জাজীরার এই পুরানা ভিডিওটি আবার দেখে নিন। আশা করি দিল্লির লাশ, রক্তপাত, অগ্নিকাণ্ড ও শ্রীরাম রণধ্বণির উল্লাস ধ্বণি এবং সেইসবের ছবি আস্তে আস্তে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পেতে থাকবেন। এখন রিহার্সেল আলোকিত মঞ্চে শুরু হয়েছে, অতএব সে সবের ছবি ডিজিটাল স্ক্রিনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ নিজেরাই দিতে থাকবে। চিন্তা কইরেন না।
মোদী-ট্রাম্প আঁতাতের পর উপমহাদেশে গণহত্যার রিহার্সাল শেষ পর্বে এসে ঠেকল। আসলেই। রিহার্সাল পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে বলেই মনে হয়। উপমহাদেশ ব্যাপী মূল ঘটনা ঘটাবার জন্য পুরা মঞ্চ তৈরি
হিটলারকে তাড়াতে একটি বিশ্বযুদ্ধের দরকার হয়েছিল। মনে রাখবেন।