দিল্লিতে আমু-শিরীন, যেতে পারেন কাদের, কৌতূহল

 

দিল্লি সফরে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। একই সময়ে সেখানে অবস্থান করছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দিল্লি যেতে পারেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাদের এ সফর নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আওয়ামী লীগের নেতারা এ ধরনের সফরকে সাংগঠনিক কূটনৈতিক তৎপরতা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, নির্বাচন সামনে। এরইমধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির পর ওই নজর আরও তীক্ষ্ণ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়গুলো কূটনৈতিক কৌশলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগও সাংগঠনিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে। এসবের অংশ হিসেবে প্রতিবেশী দেশ সফর করছেন নেতারা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এখন অবস্থান করছেন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। আগামীকাল অথবা পরশু তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী শাওন খান। সূত্র জানিয়েছে, নয়াদিল্লিতে আমির হোসেন আমু সেদেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিসহ সরকারের কয়েক শীর্ষ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে বৈঠক করছেন। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে গত ১০ই অক্টোবর দিল্লি সফরে গেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। সেখানে তিনি ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। স্পিকার দপ্তরের চিঠি থেকে জানা গেছে ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী সেখানে ১৯তম জি-২০ পার্লামেন্টোরি স্পিকার সম্মেলনে (পি-২০) অংশ নেবেন। পাশাপাশি তার প্রোগ্রাম শিডিউলে লেখা রয়েছে- আদার এনগেজমেন্ট। তবে এই আদার এনগেজমেন্টের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়নি। সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মানবজমিনকে বলেন, স্পিকার নয়াদিল্লিতে স্পিকার সম্মেলনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে কাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। তারা জানান, আগামী ১৩ থেকে ১৪ই অক্টোবর দ্বারকার নবনির্মিত যশভূমি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে স্পিকার সম্মেলনের তিন দিন আগেই দিল্লিতে পৌঁছেছেন।

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন বাংলাদেশের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পি-২০ অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে আসা স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীকে মালা পরিয়ে স্বাগত জানান বঙ্গ বিজেপি এমপি তথা খাদ্য, প্রক্রিয়াকরণ ও গণবণ্টন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান লকেট চট্টোপাধ্যায়। বাংলা ভাষায় একে অন্যে কুশল বিনিময় করেন তারা। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক ব্যক্তিগত সহকারী মানবজমিনকে জানান, কয়েকদিনের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে কবে যাবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানি না।

এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েক শীর্ষ নেতা ওবায়দুল কাদেরের দিল্লি সফর নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেন নি। বিষয়টি তাদের জানা নেই বলে মানবজমিনের কাছে মন্তব্য করেন। এর আগে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে গত ৬ই আগস্ট দিল্লি সফরে যান আওয়ামী লীগের ৫ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা ছিলেন-আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য মেরিনা জাহান ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। সফরে সরকারী ও রাজনৈতিক বিষয়ে কয়েকটি বৈঠক করেন তারা।

এতে পারস্পরিক চিন্তা বিনিময়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের ভারত সফরে যাওয়ার কথা ছিল গত জুলাই মাসে। পরে সেই সিদ্ধান্ত বদল হয় এবং পরে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দিল্লি সফরে যায়। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, তখন দলটির সাধারণ সম্পাদক না গেলেও এবার তিনি দিল্লি সফরে যেতে পারেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতাদের এ ধরনের সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটির নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার পর কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমপ্রতি বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। চীন সফর করে এসেছে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে মে মাসের শেষ দিকে চীন সফরে যান আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব  দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান।

প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য সুফরা বেগম রুমি, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য তরুণ কান্তি দাস এবং এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু। এর আগে চীনা রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এক নৈশভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সাংগঠনিক কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে এসব সফর বলে জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।

মানব জমিন