দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে, সতর্ক থাকুন

logo

স্টাফ রিপোর্টার

১৪ অক্টোবর ২০২২, শুক্রবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন আগামীতে ক্ষমতায় না আসে সেজন্য সতর্ক থাকুন।  গতকাল ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৫০টি মুজিব কেল্লা, ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্রেরও উদ্বোধন করেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী  স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ৯১ সালে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায়, তখন দেশে এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হলো। সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই। আমি তখন তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আর কত মানুষ মারা গেলে আপনার মনে হবে যে তত মানুষ মারা গেছে?  তিনি বলেন, ৯১-এর ওই দুর্যোগে শুধুমাত্র তৎকালীন বিএনপি সরকারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। দেশের মানুষ যে মরছে সেদিকে তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপই ছিল না।

অথচ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু এবং ঘর-বাড়ি, গবাদি-পশু, ক্ষেতের ফসল এমনকি চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর জাহাজ এবং বিমান বাহিনীর বিমান পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে থাকলেও সে সময় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায়। পরবর্তীতে সরকারে এসে সেই ঘূর্ণি দুর্গতদের জন্য খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনসহ সেই সময় কুতুবদিয়া থেকে ছোট্ট একটি ছেলেকে ঢাকায় এনে পুনর্বাসন করার একটি ঘটনাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

মাতা-পিতাসহ সর্বস্ব হারানো সেই ছেলেটিকে ট্রমা সেন্টার থেকে চিকিৎসা করিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন এবং এক সময় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে চাকরি দেন। পরবর্তীতে বেশ কয়েক বছর পর ছেলেটি আনোয়ারায় তার ভাইয়ের পরিবারের সন্ধান পায়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ  করেন।

৮৩ জন স্বেচ্ছাসেবককে ১০ হাজার টাকা, সনদ এবং মেডেল প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ৮৩ জনের মধ্যে নির্বাচিত দু’জন জয়শ্রী রানী দাস এবং মো. জসিম উদ্দিনের হাতে পদক তুলে দেন। প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেনাবাহিনী দক্ষতা ও কর্তৃব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তরিকভাবে দেশের সেবা করবেন। তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস সেনাবাহিনীর সকল সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা ও পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সমন্বয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবায় কাজ করে যাবেন।

গতকাল সকালে সাভার সেনানিবাসে সিএমপি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে সদর দপ্তর ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড, ১৫ ও ৪০ ইস্ট বেঙ্গল (মেকানাইজড) এবং ৯ ও ১১ বীর (মেকানাইজড) এর পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকবে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী দেশের যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। সমপ্রতি সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলায় আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালনের জন্য আমি সেনাপ্রধানসহ এই বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘অপারেশন কোভিড শিল্ড’ এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করোনা প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।